কঙ্গনাকে চড় মারার নেপথ্য কারণ 

ছবি, ভারতীয় গণমাধ্যম এইসময়

কঙ্গনাকে চড় মারার নেপথ্য কারণ 

ফরিদা আখতার

কুলবিন্দর কাউর একজন সাধারণ কন্সটেবল, ভারতের Central Industrial Security Force (CISF) এ চাকরি করেন এবং চন্ডিগড় এয়ারপোর্টে তিনি ডিউটি করেন সিকিউরিটি চেক করার। এই সাধারণ কন্সটেবলকে নিয়ে ভারতে তোলপাড় হচ্ছে। কারণ তিনি সম্প্রতি ভারতের নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার পরই সদ্য নির্বাচিত বিজেপির সংসদ সদস্য কঙ্গনা রানাউতকে এয়ারপোর্টে সিকিউরিটি চেকের পর চড় মেরেছেন। কঙ্গনা রানাউত বলিউড অভিনেত্রী হবার কারণে বেশ পরিচিত নির্বাচনে জিতে দিল্লি যাবার জন্যে এয়ারপোর্টে গিয়েছিলেন।

সেখানেই ঘটলো এই কাণ্ড। কুলবিন্দর কঙ্গনাকে চড় মারার বিষয়টি স্বীকার করেছেন এবং তিনি এর কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। এই ঘটনার ভিডিও ভাইরাল হয়েছে।

২০২০ সালে লক্ষ লক্ষ ভারতীয় কৃষক সংসদ দ্বারা গৃহিত তিনটি কৃষি আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন।

এই কৃষকদের মধ্যে পুরুষদের পাশাপাশি হাজার হাজার নারী কৃষকও ছিলেন। কুলবিন্দরের মাও সেখানে ছিলেন। কুলবিন্দরের ভাই শের সিং মাহিওয়াল, কিসান মজদূর সংঘর্ষ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক। এই আন্দোলনের সময় কঙ্গনা রানাউত কৃষক আন্দোলনে যোগ দেওয়া কৃষকদের হেয় করে মন্তব্য করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘এই কৃষকদের ১০০ বা ২০০ টাকা দিয়েছে বলেই তারা প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিয়েছে’। কৃষকদের প্রতি এই অবমাননাকর বক্তব্যে অন্যান্যদের মতো কুলবিন্দর ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন, তার মাও সেই প্রতিবাদ সমাবেশে ছিলেন।
 
সেই অপমানের প্রতিশোধ নিয়েছেন কুলবিন্দর ২০২৪ সালে কঙ্গনাকে চড় মেরে। এই চড় মারার অপরাধে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাকে সামিয়িক বরখাস্তও করা হয়েছে। কুলবিন্দর যে পদে দায়িত্বরত ছিলেন সেই অবস্থায় কাউকেই চড় মারা বা এমন কোনো আচরণ করা নিশ্চয় অপরাধ। এটা সকলেই জানেন। কিন্তু কুলবিন্দর কি সকল যাত্রীর সাথে এমন করেছেন নাকি বিশেষভাবে কঙ্গনাকে হাতের কাছে পেয়ে তার মা-সহ লক্ষ কৃষকের হয়ে প্রতিবাদ করেছেন? কুলবিন্দরের শাস্তি হলে কঙ্গনাও সমালোচনার ঊর্ধ্বে থাকতে পারেন না। তাঁরা ক্ষমতায় আছেন বলে কৃষকদের হেয় করবেন এমন তো হতে পারে না। এরও বিচার হওয়া দরকার। পাঞ্জাবের কৃষকরা কুলবিন্দরের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তারা বলছেন, কুলবিন্দরের শাস্তির আগে জানা দরকার এমন ঘটনা ঘটলো কেন? ভাবছি আমাদের দেশে মন্ত্রী, সংসদ সদস্য এবং ক্ষমতার আসনে যারা বসে আছেন তারা কি একটু শিক্ষা নেবেন এই ঘটনা থেকে? কুলবিন্দরদের শাস্তি দেওয়া সহজ, কিন্তু ক্ষমতাসীনদের জনগণের দাবি দাওয়ার প্রতি অবজ্ঞা প্রকাশ করা বা হেয় করে মন্তব্য করতে গিয়ে একটু ভাববেন কি? সাবাস কুলবিন্দর।  

লেখক: নারী অধিকার নেত্রী ও নয়াকৃষি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত

news24bd.tv/ডিডি
 

এই রকম আরও টপিক