বৈধ উৎস ছাড়াই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জসিমের

জসিম উদ্দিন

বৈধ উৎস ছাড়াই কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জসিমের

অনলাইন ডেস্ক

তেমন কোনো বৈধ আয়ের উৎস না থাকলেও কক্সবাজারে বিলাসবহুল হোটেল, বিদেশে একাধিক ব্যবসা এবং দেশে নামে-বেনামে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ রয়েছে চট্টগ্রামের চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ ও জেসিকা গ্রুপের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন আহমেদের বিরুদ্ধে।

এ ছাড়া তিনি পদ্মা ব্যাংক থেকে ১১৫ কোটি টাকা ঋণ নিয়ে হয়েছেন ইচ্ছাকৃত ঋণখেলাপি। ব্যাংকের ঋণ শোধ না করায় এই ঋণখেলাপির বিরুদ্ধে দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞা, গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ও সম্পদ জব্দ করার আদেশ রয়েছে আদালতের।

উপজেলার উত্তর গাছবাড়িয়া গ্রামের মফজল আহমদের ছেলে জসিম উদ্দিন।

তাঁর বাবা চট্টগ্রাম নগরীর পুরাতন গির্জা এলাকায় সাধারণ একটি খাবারের দোকান চালাতেন। মফজল আহমদের চার ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে জসিম তৃতীয়। হোটেলে পিতাকে সহায়তা করতেন তিনি। পরে ভাগ্য বদলাতে ১৯৯৩ সালে প্রথমে সৌদি আরব যান।

সেখানে সুবিধা করতে না পেরে পাড়ি জমান আরব আমিরাতে। তারপর তিনি আবাসন খাতে, বিশেষ করে কক্সবাজার ও দুবাইয়ে আন্তর্জাতিক চেইন হোটেল ‘হোটেল রামাদা’ গড়ে তুলতে বিনিয়োগ করেন। চট্টগ্রামের খুলশীর অভিজাত এলাকায় ‘জসিম হিল’ নামে গড়ে তোলেন অভিজাত বাড়ি। গ্রামের বাড়িতেও কয়েক কোটি টাকায় নির্মাণ করেছেন বিশাল প্রাসাদ।

এত কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা জসিম কোথায় পেলেন, তা নিয়ে জনমনে সৃষ্টি হয় বিস্ময়। এমন উত্থান দেখে সবাই হতবাক।

স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি জানান, চট্টগ্রামের পাথরঘাটায় জসিমের নিজস্ব বিল্ডিংয়েই তাঁর বাবা বসবাস করছেন। ছোট দুই ভাই জমি বেচাকেনার ব্যবসা করেন। এর মধ্যে ছোট ভাই নাসির চন্দনাইশ পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের দুই দফায় কাউন্সিলর ছিলেন।

পুরাতন গির্জা এলাকার এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমকে বলেন, জসিম ১৪ কোটি টাকা দিয়ে চট্টগ্রামের লালদীঘির পশ্চিম পারে লয়েল রোডে অবস্থিত মহল শপিং কমপ্লেক্স কিনে নেন। মার্কেট কেনা উপলক্ষে বিশাল মেজবানেরও আয়োজন করেছিলেন। এই মার্কেট দেখিয়ে পদ্মা ব্যাংক খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে ঋণ নিয়েছিলেন জেসিকা ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেডের চেয়ারম্যান জসিম।

চন্দনাইশ আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এলাকায় জসিম সাবেক আইজিপি বেনজীরের ঘনিষ্ঠজন বলে প্রচার করতেন। কথায় কথায় লোকজনকে দেখে নেওয়ার হুমকি দিতেন। দুবাইয়ে স্বর্ণ চোরাচালান চক্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তিনি নিজের একটি নেটওয়ার্ক তৈরি করেন। ওই নেটওয়ার্কের সূত্রেই বেনজীরের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক হয়। তার পর থেকেই তাঁর উন্নতি।

জসিমের মাধ্যমেই সংযুক্ত আরব আমিরাতে কয়েকটি হোটেল নেন বেনজীর। সেগুলোর দেখাশোনার দায়িত্ব দেওয়া হয় জসিমকে। এ ছাড়া বেনজীরের কক্সবাজারের হোটেল, টেকনাফের বেশ কিছু জমি এবং চট্টগ্রামের কিছু গোপন ব্যবসা দেখাশোনা করেন জসিম এবং রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রফিক। এভাবেই জসিম কয়েক বছরের ব্যবধানে বনে যান শত শত কোটি টাকার মালিক। চট্টগ্রাম নগরী, দুবাইসহ বিভিন্ন জায়গায় তাঁর রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি ও গাড়ি।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সম্পর্কের সূত্রে তিন মাস আগে চট্টগ্রাম এলজিইডির প্রায় দুই কোটি টাকার টেন্ডার বাগিয়েছেন। এসকেবি এন্টারপ্রাইজ নামের এক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ সড়কের কাজ করছে।

অভিযোগ রয়েছে, ২০১৯ সালের ৩১ মে বন্দুকযুদ্ধে নিহত টেকনাফের ইয়াবার গডফাদার সাইফুল করিমকে কৌশলে দেশে পাঠান জসিম উদ্দিন। নিহত হওয়ার আগে তিনি দুবাই ছিলেন। দুবাইয়ে স্বর্ণ চোরাচালান, ইয়াবা ও হুন্ডির ব্যবসায় জড়িত ছিলেন তিনি। সাইফুল ইয়াবা বিক্রির টাকা দিয়ে কাজীর দেউড়ি ভিআইপি টাওয়ারসহ একাধিক স্থানে অভিজাত অ্যাপার্টমেন্ট কিনেছিলেন জসিমের মাধ্যমে। পরে সাইফুলের সঙ্গে বিরোধের জেরে কৌশলে তাঁকে সরিয়ে দেন জসিম।

দক্ষিণ খুলশীতে অবস্থিত ‘জসিম হিল পার্ক’-এর জায়গা জসিম জোর করে লিখে নিয়েছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। বেনজীরের ভয় দেখানোর ফলে জায়গার মালিক বাধ্য হয়ে কম মূল্যে জায়গা ছেড়ে দেন। জসিম হুন্ডির মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে টাকা পাচার করেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রাম নগরীর রিয়াজ উদ্দিন বাজার, খাতুনগঞ্জের ভোগ্য পণ্যে ব্যবসায়ী ও হাজারী গলির স্বর্ণ ব্যবসায়ীদের একটি অংশ তাঁর এজেন্ট হিসেবে কাজ করে বলে জানা গেছে। ওই টাকার সামান্য অংশ আবার ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে পাঠিয়ে ব্যাংক থেকে মোটা অঙ্কের ঋণ নেন। ওই ঋণ আর পরিশোধ করেন না জসিম। এবারের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনেও কয়েক কোটি টাকা খরচ করে তিনি বিজয়ী হন।

চন্দনাইশ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জসিমের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু আহমেদ জুনু। তিনি  বলেন, ‘জসিম এলাকায়ও প্রচার করতেন তিনি সাবেক আইজিপি বেনজীরের ব্যবসায়িক পার্টনার ও ঘনিষ্ঠ সহযোগী। তাঁর সঙ্গে রয়েছেন রংধনু গ্রুপের চেয়ারম্যান রফিক। তিনি আদালতের সাজা পরোয়ানা মাথায় নিয়েও চালিয়েছেন নির্বাচনী প্রচারণা। ঋণখেলাপি হিসেবে দণ্ডিত হওয়ার পরও প্রার্থিতা বাতিল করেননি রিটার্নিং অফিসার। ভোটের মাঠেও প্রভাব খাটিয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। ’ 
news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক