আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করলেন দ্রৌপদী মুর্মু ও মোদি

আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করলেন দ্রৌপদী মুর্মু ও মোদি

অনলাইন ডেস্ক

আন্তর্জাতিক যোগ দিবস উপলক্ষে জম্মু-কাশ্মীরের শ্রীনগরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যোগ দিয়েছিলেন এক আয়োজনে। এইদিন দেশটির রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদি মুর্মু দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে যোগাসনে অংশ নেন।  শুক্রবার (২১ জুন) ১০তম যোগ দিবসে এই আনুষ্ঠানিকতার অংশ হন তারা।

আন্তর্জাতিক যোগ দিবসে এ বছরের থিম 'ইয়োগা ফর সেলফ এন্ড সোসাইটি'।

মূলত নিজের সুস্বাস্থ্য ও সমাজের একতা রক্ষায় যোগের অবদানের বিষয়টি মাথায় রেখেই থিমের এই নামকরণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

এদিন ডাল লেকের ধারে শের-ই-কাশ্মীর ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে আয়োজিত এই যোগ দিবসে প্রায় আধাঘণ্টা যোগাসন করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই অনুষ্ঠানে পুরুষদের পাশাপাশি বহু নারীদেরও অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়।

যদিও খোলা আকাশের নিচে এই যোগ ব্যায়ামের অনুষ্ঠান হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে কনফারেন্স সেন্টারের ভেতরে তা করতে হয়।

যোগাসনের ফাঁকেই অংশগ্রহণকারীদের বিশেষ করে কাশ্মীরি যুবতীদের সাথে সেলফিও তুলতে দেখা যায় মোদিকে। এরপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে সেই ছবিও পোস্ট করেন মোদি।

পরে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে দেশের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদি বলেন, আমি যোগ দিবসে দেশের মানুষকে এবং বিশ্বের প্রতিটি কোণে যোগব্যায়াম করা মানুষদের শুভেচ্ছা জানাই। বিশ্বব্যাপী যোগব্যায়াম অনুশীলনকারী মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আন্তর্জাতিক যোগ দিবস ১০ বছরের একটি ঐতিহাসিক যাত্রা পূর্ণ করেছে। ২০১৪ সালে আমি জাতিসংঘে আন্তর্জাতিক যোগ দিবসের প্রস্তাবনা রেখেছিলাম। ভারতের সেই প্রস্তাবটি ১৭৭টি দেশ সমর্থন করেছিল এবং সেটা ছিল একটি রেকর্ড। সেই থেকেই যোগ দিবস নতুন রেকর্ড তৈরি করে আসছে।

এসময় নরেন্দ্র মোদি আরও জানান, গত ১০ বছরে যোগব্যায়ামের বিস্তার তার ধারণাকে বদলে দিয়েছে। ভারতে তাকালে দেখা যাবে, ঋষিকেশ ও কাশী থেকে কেরালা পর্যন্ত পর্যটনের একটি নতুন সংযোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। পর্যটকরা সারা বিশ্ব থেকে ভারতে আসছে কারণ তারা ভারতে খাঁটি যোগ শিখতে চায়।

এসময় শ্রীনগরের প্রশংসা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, 'যোগ ও সাধনার ভূমি এই কাশ্মীরে আসতে পেরে আমি ধন্য। আমরা যে শক্তি অনুভব করি সেটা যোগ থেকেই পাই। যোগব্যায়াম শক্তি, সুস্বাস্থ্য এবং সুস্থতা বৃদ্ধি করে। শ্রীনগরে এই বছরের যোগ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেরে আমি খুবই আনন্দিত। কাশ্মীরের ক্ষেত্রে যোগব্যায়াম জীবিকার একটা বড় উৎস হয়ে উঠতে পারে বলেও অভিমত ব্যক্ত করেন মোদি।

যোগব্যায়ামের গুরুত্ব এবং এর স্বাস্থ্য উপকারিতাগুলির উপর জোর দিয়ে মোদি বলেন, যোগ নিজের এবং সমাজের জন্য। যেহেতু আমরা ১০তম আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালন করছি, আমি প্রত্যেককে অনুরোধ করবো, তারা যেন যোগব্যায়ামকে তাদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ করে তোলে।

এদিকে দিল্লিতে রাষ্ট্রপতি ভবনে যোগাসনে অংশ নেন ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। সাথে ছিলেন তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষী, রাষ্ট্রপতি ভবনে কর্মকর্তা ও কর্মীরা। উত্তরপ্রদেশের মথুরায় যোগাসনে অংশ নেন কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং ও বিজেপি সাংসদ অভিনেত্রী হেমা মালিনী, দিল্লিতে যোগায় অংশ নেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর, কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জেপি নাড্ডা, সংসদ ভবন চত্বরে যোগায় অংশ নেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা, গুজরাটে যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, পাকিস্তান সীমান্তবর্তী ভারতের আত্তারি আন্তর্জাতিক সীমান্তেও যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে বিএসএফ জওয়ানরা, তাজমহলের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিকিউরিটি কর্মকর্তারাও যোগায় অংশ নেন। উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগ রাজের যমুনা নদীতে পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে যোগায় অংশ নেন সাঁতারুরা। এমনকি কোথাও আবার সেনাবাহিনীর সদস্যদের সাথে দেখা যায় ডগ স্কোয়াডের কুকুরদের।

এছাড়াও ভারতের প্রতিটি রাজ্যে উৎসাহের সাথে এই যোগ দিবস পালন করা হয়। পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় রাজভবনে যোগাসনে অংশ নেন রাজ্যপাল ড. সিভি আনন্দ বোস, দীঘার সমুদ্র পাড়ে যোগাসনের অংশ নেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী, মালদহের গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অব ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি কলেজে যোগা দিবসে অংশ নেন কেন্দ্রীয় শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী ও রাজ্যের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার, কলকাতার ধর্মতলায় ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল চত্বরেও যোগাসনে অংশ নেন একাধিক মানুষ।
উল্লেখ্য, দিল্লিতে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইসরায়েলের দূতাবাসগুলিতেও মর্যাদার সাথে এই যোগ দিবস পালন করা হয়। ভারত ছাড়াও আয়ারল্যান্ড, ইসরায়েল, বাংলাদেশসহ বিশ্বের একাধিক দেশে এই যোগ দিবস পালন করা হয়।

বিগত ২০১৪ সালে জাতিসংঘে ভাষণকালে আন্তর্জাতিক যোগ দিবস পালনের প্রস্তাবনা রাখেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেটি পরবর্তীতে সর্বসম্মতভাবে জাতিসংঘে পাস হয়। এর ঠিক পরের বছর ২০১৫ সালের ২১ জুন দিনটি প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক যোগ দিবস হিসাবে গোটা বিশ্বে পালন করা হয়। (সূত্র: এনডিটিভি

news24bd.tv/SC