সিলেটে পানিবন্দী সাড়ে ৮ লাখ মানুষ

সংগৃহীত ছবি

সিলেটে পানিবন্দী সাড়ে ৮ লাখ মানুষ

অনলাইন প্রতিবেদক

সিলেটের নদনদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা। মেঘালয় থেকে নামা পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত বৃষ্টিতে সৃষ্ট বন্যায় পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সাড়ে ৮ লাখ মানুষ।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, বিভাগে আগামী তিন দিন ভারি বৃষ্টির পূর্বাভাস থাকায় বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসনের তথ্য অনুযায়ী, জেলা সবকটি উপজেলা ও সিটি করপোরেশনের বেশকিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

বন্যার্তদের জন্য ৬৫৬টি আশ্রয়কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত ২০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছেন।

সিলেটের পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী, সুরমা, কুশিয়ারা, গোয়াইন, সারি নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। বিকেল ৩টা পর্যন্ত সুরমার কানাইঘাট পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ৯৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। একই সময়ে সুরমার সিলেট পয়েন্টে ৩৬ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার অমলশীদ পয়েন্টে ৫৬ সেন্টিমিটার, ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে ৯৯ সেন্টিমিটার ও শেরপুর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার, গোয়াইন নদীর গোয়াইনঘাট পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া কুশিয়ারার শেওলা পয়েন্টে ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
এদিকে, নদীর পানি বাড়ায় সিলেট শহরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। অভিজাত এলাকা হিসেবে পরিচিত ২২ নম্বর ওয়ার্ডের উপশহরের সবকটি ব্লকে সড়ক ডুবে গেছে, বাসাবাড়িতেও পানি ঢুকে পড়েছে।

জানা গেছে, সিলেট নগরের ১০, ১৪, ১৫, ২৫, ২৬, ২৭, ৩৮, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। নগরের তালতলায় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের নিচতলায় পানি ঢুকে পড়েছে। এ অবস্থায় সিটি করপোরেশনের সব কর্মকর্তা কর্মচারীর ছুটি বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।

বরইকান্দিতে অবস্থিত বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রে পানি ঢোকার উপক্রম হলে সিটি করপোরেশনের অনুরোধে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়। নদীর তীরে বালুর বস্তা ফেলে বাঁধ সৃষ্টি করে উপকেন্দ্রটির সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

গণমাধ্যমে সিলেট সিটি করপোরেশনে মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেছেন, সিলেট নগরে বন্যার্ত মানুষের সহযোগিতায় সিটি করপোরেশনের স্বেচ্ছাসেবক টিম কাজ করছে। সার্বক্ষণিক সহযোগিতার জন্য কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্রে প্রয়োজনীয় খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ শাহ মো. সজিব হোসেন জানান, মঙ্গলবার সকাল ৬টা থেকে বুধবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। আজ সকাল ৬টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ১০৭.২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।

সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান জানান, বুধবার সকাল পর্যন্ত সিলেট জেলার ১৩টি উপজেলার ১০৬টি ইউনিয়নের ১,৫৪৮ গ্রাম, একটি পৌরসভা, সিলেট সিটি করপোরেশনের ৪২টি ওয়ার্ডের মধ্যে ২৩টি এরই মধ্যে প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এদিকে হবিগঞ্জের সকল নদ নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। খোয়াই নদীর পানি চুনারুঘাটের বাল্লা সীমান্তে বিপদ সীমার ১৩১ সে.মি., শায়েস্তাগঞ্জ পয়েন্টে ২১ সে. মি. ও শহরের মাছুলিয়া পয়েন্টে ৭৫ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এছাড়া বানিয়াচংয়ের মার্কুলিতে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার ২১ সে. মি. ও আজমিরিগঞ্জে কালনী কুশিয়ারা নদীর পানি বিপদ সীমার ৩১ সে. মি. উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় মোট ১১৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এছাড়া টানা ভারী বর্ষণে হবিগঞ্জ শহরের বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড বলছে, নদ নদীর পানি আরও বাড়বে।  -বাসস

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক