ওজন করে কোরবানির পশু বিক্রি, ইসলাম কী বলে

ওজন করে কোরবানির পশু বিক্রি, ইসলাম কী বলে

 সাআদ তাশফিন

ইদানিং বিভিন্ন খামার থেকে ওজন করে কোরবানির পশু কেনার প্রতি ঝুঁকছে মানুষ। যেহেতু বাজারে ঘুরে ন্যায্য মূল্যে পশু কেনার অভিজ্ঞতা সবার নেই, তাই অনেকে এই পদ্ধতিকেই সহজ মনে করেন। আস্ত পশুকে বিশেষ পাল্লায় মেপে কেজি দরে মূল্য পরিশোধ করেন ক্রেতারা। পশু ক্রয়-বিক্রয়ের এই পদ্ধতির সঙ্গে এ অঞ্চলের মানুষের পরিচয় বেশি দিনের নয়, তাই অনেকের মনে প্রশ্ন জাগে, এভাবে ওজন করে কোরবানির পশু কেনা কি জায়েজ?

এর উত্তর হলো, প্রথমত হারাম পণ্যের বেচাকেনা নাজায়েজ।

আর হালাল পণ্যের বেচাকেনা শুদ্ধ হওয়ার জন্য ইসলামে কিছু নির্দিষ্ট শর্ত রয়েছে। যেমন— ক্রেতা-বিক্রেতা প্রাপ্তবয়স্ক ও সুস্থ মস্তিষ্ক সম্পন্ন হওয়া, ইজাব (পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের প্রস্তাব) ও কবুল (প্রস্তাব গ্রহণ) থাকতে হবে, বিক্রিত পণ্য ও বিনিময় মাধ্যম ইসলামের দৃষ্টিতে স্বীকৃতি হতে হবে, যে পণ্যটি বিক্রয় করতে চাচ্ছে, তা উপস্থিত থাকতে হবে, পণ্য ও বিনিময় মাধ্যম সম্পর্কে স্পষ্ট জ্ঞান ও এগুলো নির্দিষ্ট থাকতে হবে অর্থাৎ কী বেচাকেনা করছেন এবং তার বিনিময় মাধ্যম কী হবে তা পরিস্কার থাকতে হবে, পণ্যটি বিক্রেতার মালিকানাধীন হতে হবে, যে জিনিসটি বেচাকেনা হচ্ছে, ক্রেতা তা নিজের কব্জায় নেওয়ার উপযোগী হতে হবে, ইজাব-কবুল এক বৈঠকে হতে হবে। (ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া) 

পাশাপাশি কেউ যদি সেই শর্ত মেনে বেচাকেনা করে তাহলে বেচাকেনা শুদ্ধ হয়ে যাবে। নিম্নে বেচাকেনার শর্তগুলো তুলে ধরা হলো—

লেনদেনে কারো ক্ষতি করা যাবে না
রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং অন্যের ক্ষতি করা কোনোটিই উচিত নয়।


(ইবনে মাজাহ, ২৩৪১)

ধোঁকা ও প্রতারণার আশ্রয় নেওয়া যাবে না
বেশি দামে পণ্য বিক্রির জন্য মিথ্যার আশ্রয় নেওয়া যাবে না। পণ্যের কোনো ত্রুটি গোপন করে কোনো ভাবেই ক্রেতাকে ধোঁকা দেওয়া যাবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, কোনো একসময় রাসুলুল্লাহ (সা.) (বাজারে) একটি খাদ্যশস্যের স্তূপ অতিক্রম করে যাচ্ছিলেন। তিনি নিজের হাতকে স্তূপের মধ্যে প্রবেশ করালেন।

তিনি তাঁর হাতে ভিজা অনুভব করেন। স্তূপের মালিককে তিনি প্রশ্ন করেন, এ কি? সে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! এটা বৃষ্টির পানিতে ভিজে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ভেজাগুলো স্তূপের উপরে রাখলে না কেন, যাতে লোকেরা দেখতে পেত? অতঃপর তিনি বলেন, প্রতারণাকারী ও ধোঁকাবাজকারীদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। (তিরমিজি, হাদিস : ১৩১৫)

ওজনে কারচুপি করা যাবে না
ক্রেতাকে ওজনের দিক থেকে প্রতারণার করার বহু সুক্ষ্ম পদ্ধতি রয়েছে, ওজনে কম দেওয়ার উদ্দেশ্যে এধরনের কোনো পদ্ধতিই অবলম্বন করা যাবে না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ধ্বংস যারা পরিমাপে কম দেয় তাদের জন্য।

যারা লোকদের কাছ থেকে মেপে নেওয়ার সময় পূর্ণমাত্রায় গ্রহণ করে। আর যখন তাদের মেপে দেয় অথবা ওজন করে দেয় তখন কম দেয়। (সুরা মুতাফফিফীন, আয়াত : ১-৩)

পারস্পরিক সম্মতিতে বিক্রি হতে হবে রাসুল (সা.) বলেন, সাবধান কারো সম্পদ তার মনোতুষ্টি ছাড়া অন্যের জন্য হালাল হবে না। (বায়হাকি)

গোশত পাওয়াই উদ্দেশ্য হতে পারবে না
লাইভ ওয়েট স্কেলে কোরবানির উপযুক্ত পশু বিক্রিতে যদি উল্লিখিত শর্তগুলোর পাশাপাশি গোশত পাওয়াই উদ্দেশ্য না হয়ে বরং আল্লাহর জন্যই কোরবানি উদ্দেশ্য হয়, তাহলে সে বেচাকেনাকে নাজায়েজ বলার সুযোগ নেই।