সুনেত্রার মৃত্যুর খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে যা বললেন অঞ্জনা 

সুনেত্রার মৃত্যুর খবরে ক্ষোভ প্রকাশ করে যা বললেন অঞ্জনা 

অনলাইন ডেস্ক

ঢাকাই চলচ্চিত্রের এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সুনেত্রা কুমার দেড় মাস আগে মারা গেছেন। তবে  তার মৃত্যুর খবরটি প্রকাশ্যে আসে শুক্রবার (১৪ জুন) এসেছে চিত্রনায়ক জায়েদ খানের এক পোস্টের মাধ্যমে। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।

এদিন চিত্রনায়ক জায়েদ খান নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে লেখেন, ‘এক সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা, শৈশবের আমার পছন্দের একজন নায়িকা, চোখের প্রেমে পড়তো যে কেউ, তিনি সুনেত্রা।

অনেকদিন বাংলাদেশ ছেড়ে কলকাতায়। আমি চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক থাকাকালে বেশ কয়েকবার ফোনে কথা বলেছিলাম। আজ হঠাৎ শুনলাম তিনি আর নেই, মৃত্যুবরণ করেছেন। নীরবে নিভৃত্বে চলে গেলেন।
এভাবেই হারিয়ে যায় মানুষ, চলে যায়। আপনি ভালো থাকবেন ওপারে। অনেক চলচ্চিত্র দেখবো আর আপনাকে মিস করবো। ’

এরপরই সুনেত্রার সহকর্মী ও ভক্তরা তার মৃত্যুর বিষয়ে জানতে পারে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেন স্মৃতিকাতর স্ট্যাটাসও। তাদেরই একজন চিত্রনায়িকা অঞ্জনা।

তিনি লিখেছেন, সুনেত্রা আমাদের মাঝে আর বেঁচে নেই শুনে এতটা কষ্ট পেলাম, যা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। অশ্রুসিক্ত নয়নে বারবার সেই মায়ামাখা মিষ্টি হাসির অপরূপ চেহারাটা চোখে ভাসছে। আশির দশকে আমাদের বাংলা চলচ্চিত্রের অসংখ্য সুপারহিট ব্যবসাসফল চলচ্চিত্রের গুণী চিত্রনায়িকা সুনেত্রা। কিংবদন্তি চিত্রনায়কদের সাথে সে অনেক ভালো মানের, মনে রাখার মতো চলচ্চিত্র উপহার দিয়েছে। নায়করাজ রাজ্জাক, আলমগীর, সোহেল রানা, ফারুক, জাফর ইকবাল, জসীম, ইলিয়াস কাঞ্চন, উজ্জ্বল, ওয়াসিম, মাহমুদ কলি, জাভেদ, রুবেল ও মান্নার সাথে রয়েছে তার অভিনীত অনেক চলচ্চিত্র। কিন্তু তারপরও একরাশ কষ্ট নিয়ে সে এক সময় কলকাতায় পাড়ি জমায়। সেখানেও সে কিছুসংখ্যক চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পর একসময় লোকচক্ষুর অন্তরালে চলে যায়। আর কখনোই কারও সামনে আসেনি।

অঞ্জনা আরও লিখেছেন, একবুক কষ্ট নিয়ে, অনেক পাওয়া-না পাওয়ার বেদনায় জর্জরিত হয়ে বড্ড অভিমান করে সে পরপারে পাড়ি দিয়েছে। তোমার অন্তিমযাত্রা শান্তির হোক বোন। আমাদের ক্ষমা করে দিও, আমরা তোমার সঠিক মূল্যায়ন করতে পারিনি। অনেক ভালো রুচিসম্মত চলচ্চিত্র তুমি আমাদের উপহার দেওয়ার পরও তোমাকে দিতে পারিনি জাতীয় ও রাষ্ট্রীয় কোনো সম্মান। গুণীরা এভাবেই অনেক চাপা অভিমান নিয়ে চলে যায় না ফেরার দেশে।

এই চিত্রনায়িকা লিখেছেন, আমরা ব্যর্থ তোমার মতো অনেক গুণী শিল্পীকে রাষ্ট্রীয় পুরস্কার আমরা সঠিক সময়ে দিতে পারিনি বলে, মেধার মূল্যায়ন করতে পারিনি বলে। চলচ্চিত্রের নোংরা রাজনীতির শিকার হয়েছিল সুনেত্রা। এই নোংরা রাজনীতির কারণে আশির দশকে সুনেত্রার মতো অনেক গুণী শিল্পী জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন। তখনকার সময় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরিবোর্ডে থেকেও যারা সুনেত্রার মতো এমন প্রতিভাময়ী গুণী শিল্পীদের প্রাপ্য সম্মান থেকে বঞ্চিত করেছেন, সকলের প্রতি আমি ধিক্কার জানাই।

তিনি আরও লিখেছেন, তুমি বেঁচে থাকবে তোমার অসংখ্য ভক্ত-অনুরাগী লক্ষ-কোটি সিনেমাপ্রেমী দর্শকের হৃদয়ে, বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্বল আকাশে এক জ্যোতির্ময় নক্ষত্র হয়ে।

উল্লেখ্য, ঢাকাই চলচ্চিত্রে প্রতিষ্ঠা পেলেও ছিলেন কলকাতার মেয়ে সুনেত্রা। সেখানেই অভিনয় করতেন মঞ্চে। পরে গুণী নির্মাতা মমতাজ আলী তাকে নিয়ে আসেন এ দেশের চলচ্চিত্রে। এরপর দেখা গেছে সুপারহিট বহু সিনেমার নায়িকা হিসেবে। তবে ১৯৯০ সালে মুক্তি পাওয়া দেলোয়ার জাহান ঝন্টু পরিচালিত ‘পালকী’ সিনেমাটি তাকে এনে দিয়েছিল আলাদা পরিচিতি। এরপর সুনেত্রা উপহার দেন একের পর এক হিট সিনেমা। তার অভিনীত ‘পালকি’, ‘উসিলা’, ‘বোনের মতো বোন’, ‘ভাবীর সংসার’, ‘সাধনা’সহ অসংখ্য সিনেমা রয়েছে।

news24bd.tv/TR