ভ্রমণ ও সেনজেন ভিসায় পর্তুগালে অভিবাসন সুবিধা বন্ধ

সংগৃহীত ছবি

ভ্রমণ ও সেনজেন ভিসায় পর্তুগালে অভিবাসন সুবিধা বন্ধ

অনলাইন ডেস্ক

ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিমের আটলান্টিক পাড়ের ছোট্ট একটি দেশ পর্তুগাল। দেশটিতে নব্বই দশকের পর থেকেই বাংলাদেশিদের আসা যাওয়া। সহজ শর্তে বৈধতা ও সহজ অভিবাসন নীতির ফলে দেশটি ধীরে ধীরে অভিবাসীদের কাছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে জনপ্রিয় অভিবাসন স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠে। ফলে দেশটিতে প্রতিদিনই নতুন অভিবাসীদের আগমন ও থেকে যাওয়ার প্রবনতা প্রবল আকারে ধারণ করেছে।

অবশেষে বন্ধ হতে যাচ্ছে ইউরোপের শেষ আশ্রয়স্থল অভিবাসীবান্ধব দেশ পর্তুগালের দরজা। গত সোমবার পর্তুগালের নতুন প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রো মন্ত্রিসভার বৈঠকে অভিবাসননীতিমালায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে, যা শিগগিরই গেজেট আকারে পাস হবে।

অভিবাসন ইস্যুতে ৪১টি প্রস্তাব কাউন্সিলর মিনিস্টাররা পাশ করার পর সোমবার (০৩ জুন) রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের জন্য তা পাঠানো হয়। পাঠানোর ঠিক ৩ ঘন্টার মধ্যেই স্বাক্ষর করে দেন রাষ্ট্রপতি এ বিষয়টি উঠে এসেছে দেশটির প্রভাবশালী গণমাধ্যমে।

এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রো বলেছেন, পর্তুগালের দরজা বন্ধ হচ্ছে না। তবে যেরকম অরক্ষিত ছিলো এখন আর সেরকম থাকবে না। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পর্তুগাল আসা যাবে, তবে থাকতে হবে কাজের কন্ট্রাক্ট ও আবাসনের নিশ্চয়তা। চাকরি বা নিয়োগ দেয়া কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কড়া নির্দেশনা দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী।

এতদিন ভ্রমণ ভিসায় কিংবা অন্য যেকোনো ভাবে পর্তুগালে এসে কাজের চুক্তি করলে তোলনা মূলক ইউরোপের অন্যান্য দেশের তোলনায় সহজে মিলতো বৈধ হবার সুযোগ। এ কারণে ইউরোপের অভিবাসন প্রত্যাশীদের ভীড় পর্তুগালে সব সময়ই লেগে থাকতো । পর্তুগালে বর্তমানে প্রায় অর্ধ লক্ষ প্রবাসী বাংলাদেশীর বসবাস।

নাগরিকত্ব পাওয়ার আশায়। তবে ইতিমধ্যেই যারা বৈধ হওয়ার জন্য অভিবাসন ও ইমিগ্রেশন সংস্থায় সেফ এন্টি করে ফেলেছেন তাদের আতংকিত বা চিন্তার কোনো কারন নেই বলে জানিয়েছেন পর্তুগালে বাংলাদেশ ফেন্ডসশিপ এসোসিয়েশনের সভাপতি রানা তসলিম উদ্দিন।

তিনি বলেন, যারা সেফ এন্টি করেছেন তাদের কার্যক্রম পূর্বের নিয়মেই চলমান থাকবে। বর্তমানে পর্তুগালে অতিরিক্ত অভিবাসি প্রত্যাশী হওয়ায় বাসস্থান ও কর্মসংস্থান সংকট দেখা দিয়েছে। এছাড়াও অভিবাসন বিষয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কিছু চাপও রয়েছে দেশটিতে। বেশ কিছু কারণে দেশটির নতুন সরকার অভিবাসন নীতিমালায় এই পরিবর্তন আনছে। নতুন এ প্রস্তাবে অদক্ষ কর্মীর পরিবর্তে মেধাবী শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন খাতে দক্ষ পেশাজীবীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি হবে। ভোগান্তি কমবে পর্তুগালে বসবাসরত নাগরিকদের পরিবারের সদস্যদের পর্তুগাল আসাসহ অন্যান্য ইস্যুতেও। সেই সঙ্গে বিভিন্ন দেশে থাকা পর্তুগালের কনস্যুলেটগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করার বিষয়টিও উঠে এসেছে নতুন প্রস্তাবে।

ইউরোপের অন্য দেশের ভিসা নিয়ে পর্তুগাল এসে রেসিডেন্স পারমিটের আবেদন করতে পারবে না শিক্ষার্থীরা। তবে নিজ দেশে পর্তুগীজ কনস্যুলেট থেকে স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে আসা যাবে। নতুন এ প্রস্তাবে- সুযোগ বাড়বে পর্তুগিজ ভাষাভাষী বা সিপিএলপি দেশের অভিবাসীদের। সিপিএলপি দেশের শিক্ষার্থীদের জন্য রাখা হচ্ছে বৃত্তির ব্যবস্থাও। পড়াশোনা শেষ না করে কোন শিক্ষার্থী রেসিডেন্স স্ট্যাটাস চেঞ্জ করতে পারবে না এমন বিষয়ও রয়েছে নতুন প্রস্তাব।

এদিকে, এরইমধ্যে বৈধ হওয়ার অপেক্ষায় থাকা অভিবাসীদের কাছ থেকে ৩০ মিলিয়ন ইউরো সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা করেছে পর্তুগালের অভিবাসন সংস্থা আইমা। এখনো ৪ লাখের বেশি আবেদনের নিষ্পত্তি করতে কাজ করছে সংস্থাটি। দ্রুত এসব আবেদনের নিষ্পত্তি করা হবে বলে জানিয়েছেন পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী।

তবে পর্তুগালে কেউ অমানবিকতার শিকার হবে না বলেও আশ্বস্ত করেছে প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রো। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত আসার পরপরই নতুন করে আবেদন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলেও ধারণা করছে অভিবাসন প্রত্যাশীরা।

news24bd.tv/DHL