ইউক্রেন, ইসরায়েল এবং তাইওয়ানের জন্য ৯৫ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা প্যাকেজে সই করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। কংগ্রেসে গৃহীত বিলটিকে আইনে পরিণত করার পর সাংবাদিকদের বাইডেন বলেন, এর মধ্য দিয়ে আমেরিকা ও বিশ্ব নিরাপদ হবে। খবর বিবিসির।
এদিকে, রাশিয়ার আক্রমণ প্রতিহত করতে শীঘ্রই ইউক্রেনে নতুন অস্ত্র পাঠানো হবে বলে জানিয়েছেন বাইডেন।
কংগ্রেসে কয়েক মাস ধরে অচলাবস্থার পর অবশেষে মার্কিন সিনেটে সহায়তা প্যাকেজ গৃহীত হওয়ার একদিন পর বাইডেন এ কথা বলেন।সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা বৃদ্ধি করতে চাপ দিয়ে আসছে ইউক্রেন।
সহায়তা প্যাকেজের ৬১ বিলিয়ন ডলার ইউক্রেনের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে। বিলটি মার্কিন সিনেটে ৭৯-১৮ ভোটে গৃহীত হয়।
সিনেটে ডেমোক্র্যাটিক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠদের নেতা চাক শুমার জানান, ছয় মাস ধরে নানা নাটকীয়তার পর অবশেষে আমেরিকা বিশ্ববাসীকে এই বার্তা দিতে সক্ষম হলো যে- আমরা আপনাদের ওপর থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবো না।
সহায়তা প্যাকেজ প্রসঙ্গে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, ের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হলো যে আমেরিকা মুক্ত বিশ্ব ও গণতন্ত্রের নেতা।
গত ফেব্রুয়ারি একই ধরণের একটি সহায়তা প্যাকেজ সিনেটে গৃহীত হলেও কয়েকজন রক্ষণশীল নেতার বিরোধীতায় বিলটি শেষ পর্যন্ত প্রতিনিধি পরিষদে গৃহীত হয়নি।
গত সপ্তাহে প্রতিনিধি পরিষদের ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান উভয় দলের নেতারাই এই বিরোধীতা মোকাবিলায় একজোট হন। তারা একটি প্যাকেজ বিলে সম্মত হন, যার মধ্যে বৈদেশিক সাহায্য ছাড়াও রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, ইরান, চীন ও রাশিয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ এবং টিকটক বিক্রিতে চীনের বাইটড্যান্স কোম্পানিকে বাধ্য করার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
শনিবার প্রতিনিধি পরিষদের অধিকাংশ রিপাবলিকানই সহায়তা প্যাকেজের বিপক্ষে ভোট দেন। সিনেটেও একই ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার সিনেটের রিপাবলিকান নেতা টমি টুবারভিল বলেন, ইউক্রেনকে আরও অর্থ দিলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে এবং আরও অনেক প্রাণহানি হবে। হোয়াইট হাউজ বাঁ পেন্টাগনের কারো পক্ষেই এই যুদ্ধে জয় নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
ধারণা করা হচ্ছে এই সহায়তার ফলে সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্র ও আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সংকটে থাকা ইউক্রেনের সামরিক সক্ষমতা অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে ৪০ বিলিয়ন ডলারের সহায়তা দিয়েছে বলে জানিয়েছে জার্মান গবেষণা প্রতিষ্ঠান কিয়েল ইন্সটিটিউট।
মঙ্গলবার গৃহীত সহায়তা প্যাকেজের মধ্যে ইসরায়েলের জন্য ১৭ বিলিয়ন ডলার এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে সংঘাতের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য ৯ বিলিয়ন ডলার বরাদ্দ রাখা হয়েছে। পাশাপাশি, চীনের উত্থানকে প্রতিহত করতে তাইওয়ান সহ এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের দেশগুলোর জন্য প্যাকেজে ৮ বিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে।
ইসরায়েলের নিরাপত্তায় মার্কিন সমর্থনকে স্বাগত জানিয়েছে সহায়তা প্যাকেজ ঘোষণা করায় মার্কিন সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। তিনি বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় ও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করছে।
প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে ৩ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকে।
এদিকে, তাইওয়ানকে সহায়তা দেয়ার তীব্র বিরোধীতা করেছে চীন। চীনের সরকারের একজন মুখপাত্র জানান, এই সহায়তা ‘এক চীন’ নীতির পরিপন্থী এবং এর ফলে তাইওয়ানের স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠী ভুল বার্তা পাবে। তাইওয়ানের সামরিকীকরণের মাধ্যমে তাদের স্বাধীনতার আকাঙ্খাকে বৃদ্ধি না করতে আমরা মার্কিন সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।
তাইওয়ানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম লাই সহায়তা প্যাকেজকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং এর ফলে কর্তৃত্ববাদের বিরুদ্ধে তার দেশের সংগ্রাম শক্তিশালী হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন।
তাইওয়ান হচ্ছে স্বশাসিত একটি দ্বীপ যারা নিজেদেরকে চীনের থেকে আলাদা মনে করে। কিন্তু চীন মনে করে তাইওয়ান তাদের থেকে আলাদা হয়ে যাওয়া একটি প্রদেশ এবং তাইওয়ানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনার ব্যাপারে চীন বদ্ধপরিকর।
news24bd.tv/ab