সিরাজগঞ্জে ২৯ নিহতের ঘটনায় মামলা হয়নি

সিরাজগঞ্জে ২৯ নিহতের ঘটনায় মামলা হয়নি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে শুরু করে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে সিরাজগঞ্জে ২৯ জন নিহতের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা দায়ের হয়নি। তবে নাশকতার অভিযোগে বিএনপি-জামায়াত ও ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৬টি মামলা ইতিমধ্যে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। মুক্তি দেওয়া হয়েছে এসব মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া দুই শতাধিক আসামিকে।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঢেউ ১৬ জুলাই সিরাজগঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে।

ওই দিন শহরের ইসলামিয়া কলেজ থেকে ছাত্ররা মিছিল বের করলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এ সময় অনেক ছাত্র-পুলিশ আহত হয়। বেশ কয়েকজন ছাত্র চোখ হারায়। এরপর থেকেই ৩ আগস্ট পর্যন্ত মিছিল সমাবেশ হলেও ৪ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের একদফা আন্দোলন চরম আকার ধারণ করে।
৪ আগস্ট সিরাজগঞ্জ শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে ছাত্র-জনতার সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। পুড়িয়ে দেওয়া হয় সাবেক একাধিক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি এবং দলীয় কার্যালয়সহ বিভিন্ন সরকারি-বসতবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। এসব ঘটনায় ১৫ পুলিশসহ মোট ২৯ জন নিহত হন।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, ৪ আগস্ট রোববার সকালে ছাত্র-জনতা ও বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীরা পুরো শহর দখল করে নেয়। এক পর্যায়ে এস এস রোডে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সাথে ছাত্র-জনতা ও বিএনপি-জামায়াতের সংঘর্ষ হয়। এতে যুবদল-ছাত্রদলের তিন নেতাকর্মী নিহত হন।

এরা হলেন-  জেলা যুবদলের যুগ্ম আহবায়ক রঞ্জু, যুবদল কর্মী আব্দুল লতিফ ও ছাত্রদলকর্মী রুবেল।

ওইদিন দুপুরে রায়গঞ্জ উপজেলার ধানগড়া বাজারে আওয়ামী লীগ অফিসে ছাত্র-জনতার হামলায় নিহত হন এক সাংবাদিক ও ৫ আওয়ামী লীগ নেতা। তারা হলেন, ব্রহ্মগাছা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম সরওয়ার লিটন, তার ভাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম হাসনাত টিটু, উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন ও সাধারণ সম্পাদক আল-আমিন এবং দৈনিক খবরপত্রের রায়গঞ্জ প্রতিনিধি প্রবীন সাংবাদিক প্রদীপ ভৌমিক।

একই দিন এনায়েতপুর থানায় পুলিশের রাবার বুলেটের আঘাতে তিন ছাত্র-জনতা নিহত হয়। নিহতরা হলো- বেতিল গ্রামের কলেজছাত্র শিহাব ও সিয়াম এবং খুকনী গ্রামের মোহাম্মদ ইয়ায়াহিয়া। নিহতের ঘটনায় ছাত্র-জনতা উত্তেজিত হয়ে থানায় হামলা চালায় এবং ১৫ পুলিশকে পিটিয়ে হত্যা করে। নিহতদের মধ্যে ওসি, ৫ এসআই, এক এএসআই ও ৮ কনস্টেবল।  

নিহত ওসি আব্দুর রাজ্জাক চাপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের মহারাজপুর গ্রামের মাহতাব মন্ডলের ছেলে।

নিহত এসআইরা হলো- পাবনার সুজানগর উপজেলার ভাদরভাগ গ্রামের শাহাদত হোসেন খানের ছেলে রইজ উদ্দিন খান, একই উপজেলার মানিকহাট গ্রামের প্রশান্ত কুমার বিশ্বাসের ছেলে প্রনবেশ কুমার বিশ্বাস, নীলফামারীর জলঢাকা বাজার এলাকার খলিলুর রহমান মন্ডলের ছেলে তহছেনুজ্জামান, দিনাজপুরের পার্বতীপুরের দেবকুন্ডা গ্রামের মনছুর আলী মোল্লার ছেলে আনিছুর রহমান মোল্লা ও নাজমুল।

নিহত এএসআই নওগাঁ সদরের কোমায়গাড়ি গ্রামের মোয়াজ্জেম হোসেনের ছেলে ওবায়দুর রহমান।

নিহত কনস্টেবলরা হলেন- পাবনা সুজানগরের খয়রান গ্রামের সেকেন্দার আলী মল্লিকের ছেলে আরিফুল আযম, একই উপজেলার বড়খাপুর গ্রামের আবু জাফরের ছেলে রিয়াজুল ইসলাম, নওগার পত্নীতলার আমন্তপুর গ্রামের তোজাম্মেল হকের ছেলে রবিউল আলম, পাবনার সাথিয়া হাঁড়িয়া গ্রামের ই্উসুফ আলীর ছেলে হাফিজুল ইসলাম, ফরিদপুর উপজেলার আগপুংগলী গ্রামের আল আমিন মোল্লার ছেলে আব্দুস সালেক, রাজশাহীর গোদাগাড়ি উপজেলার বাসুদেবপুর গ্রামের লোকমান আলীর ছেলে লোকমান আলী ও জয়রামপুর গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে শাহিন উদ্দিন।

এদিকে ৪ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে সাবেক এমপি জান্নাত আরা হেনরীর পুড়ে যাওয়া বাসা থেকে দুজনের কঙ্কাল উদ্ধার করা হয়। তাদের একজন শহরের জানপুর মহল্লার ছাত্রলীগ কর্মী শাহীন ও অপরজন সদর উপজেলার গজারিয়া মুন্সীপাড়া গ্রামের মকবুল হোসেন ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন।

এসব হত্যাকাণ্ডের পর পুলিশের কর্মবিরতি, সময়মতো সুরুতহাল রিপোর্ট প্রস্তুত না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে মামলা দায়ের হয়নি। তবে নিহতের পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নাজমুল ইসলাম বলেন, নিহত যুবদল-ছাত্রদল নেতাকর্মীর পরিবারের পক্ষ থেকে মামলার প্রস্তুতি চলছে। আমরা ৭টি মামলা মোটামুটি রেডি করে রেখেছি। খুব শিগগিরই মামলাগুলো দায়ের করা হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

সদর থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম বলেন, হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। তবে বৈষম্যবিরোধী কোটা আন্দোলনকে ঘিরে দায়ের করা সবগুলো মামলা প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক