রাগ দূর করা প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন নবীজি (সা.) 

প্রতীকী ছবি

রাগ দূর করা প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন নবীজি (সা.) 

 সাইয়েদ আল আমিন

রাগ বা ক্রোধ যদিও মহান আল্লাহ প্রদত্ত স্বভাবজাত বৈশিষ্ট্য, তবু এটা নিয়ন্ত্রণ করা ও নিজেকে সংবরণ করার মধ্যে আল্লাহ তাআলা প্রচুর কল্যাণ রেখেছেন। রাগ নিয়ন্ত্রণকারীকে আল্লাহর রাসুল (সা.) সফল ও শক্তিশালী বলেছেন।

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা রাগ নিয়ন্ত্রণকারীকে ‘মুহসিন’ বান্দাদের মধ্যে গণ্য করেছেন। ইরশাদ করেন, ‘রাগ সংবরণকারী ও মানুষকে ক্ষমাকারী আর মহান আল্লাহ মুহসিন বান্দাদের ভালোবাসেন।

’ (সুরা : আলে-ইমরান, আয়াত : ১৩৪)

রাগ না করার উপদেশ
হুমাইদ ইবনু আবদুর রহমান (রহ.) বলেছেন, একজন সাহাবি নবী করিম (সা.)-এর কাছে বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, আমাকে উপদেশ দিন। নবীজি জবাবে বলেন, ‘রাগ কোরো না। ’ (অর্থাৎ রাগ করার স্বভাব বর্জন করো) সাহাবি বলেন, অতঃপর চিন্তা করতে লাগলাম, এমন উপদেশ আমাকে কেন দিলেন, পরে বুঝতে পারলাম বহু মন্দ কাজ রাগের মধ্যে আছে। ’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস ৫/৩৭৩)  

রাগ আসে শয়তানের প্ররোচনায়
নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই রাগ শয়তানের প্ররোচনায় আসে, শয়তান হচ্ছে আগুনের তৈরি আর আগুন পানি দিয়ে নির্বাপিত হয়।

তাই যখন তোমাদের কাউকে রাগান্বিত করা হয় তখন সে যেন অজু করে নেয়। ’ (আবু দাউদ, হাদিস ৪৭৮৪ ও আল মুসনাদ, ৪/২২৬)  

দ্রুত প্রতিশোধ নয়
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘দ্রুত প্রতিশোধ নেওয়ার মধ্যে প্রাবল্য নেই, বরং শক্তিশালী সেই ব্যক্তি, যে রাগের সময় নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬১১৪; সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২৬০৯) 

রাগ নিয়ন্ত্রণের বিনিময় জান্নাত
বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন, ‘যে রাগ প্রতিফলনে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও নিজের রাগ সংবরণ করে, আল্লাহ‌ তাআলা তার অন্তর ঈমান নিরাপত্তা দিয়ে পূর্ণ করে দেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৮) 

অন্যত্র ভিন্ন বর্ণনায় নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে সক্ষম হওয়া সত্ত্বেও নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করবে, মহান আল্লাহ তাকে সব সৃষ্টির সম্মুখে আহ্বান করে তাকে জান্নাতের যেকোনো হুর ইচ্ছা গ্রহণ করার অনুমতি দেবেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৭৭; তিরমিজি, হাদিস : ২০২১ ও ২৪৯৩; ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৪১৮৬) 

রাগান্বিত হয়ে বিচারকার্য না করা
রাগান্বিত অবস্থায় বিচারকাজ করা উচিত নয়, কেননা এতে ফায়সালার ক্ষেত্রে ইনসাফ করা কঠিন হবে। ফলত বিচার ত্রুটিপূর্ণ হওয়ার প্রবল আশঙ্কা আছে। এ ক্ষেত্রে আবু বাকরাহ নাফে ইবনু হারেস (রা.) বলেছেন, কখনো রাগান্বিত হয়ে দুজনের মধ্যে বিচার করবে না। কেননা আমি আল্লাহর নবী মুহাম্মদ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘কোনো বিচারক যেন দুজন ব্যক্তির মধ্যে ক্রোধান্বিত অবস্থায় ফায়সালা না করে। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৭১৫৮)  

রাগ দূর করার সুন্নাহ বর্ণিত পদ্ধতি
রাগ হওয়ার পর দ্রুত সেটা কমিয়ে ফেলা কিংবা নিয়ন্ত্রণ করা উত্তম। হাদিস শরিফে সে সম্পর্কে সুন্দর পদ্ধতি বলে দেওয়া হয়েছে। আবু জর গিফারি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের মধ্যে কেউ যদি দণ্ডায়মান অবস্থায় রাগান্বিত হয় তাহলে সে যেন বসে যায়, অতঃপর যদি তার রাগ দূরীভূত না হয় তাহলে সে যেন শুয়ে পড়ে। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৮২)

পরিশেষে রাগ-ক্রোধ মানুষের ফিতরাত বা স্বভাবের অপরিহার্য বিষয়। মানুষের স্বভাব মূলত আল্লাহই সৃষ্টি করেছেন। তিনি প্রত্যেকের মেজাজ বা স্বভাবের মধ্যে আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য দান করেছেন। কিন্তু স্বভাবগত দিক থেকে রাগ বা ক্রোধ অমঙ্গল ডেকে আনে। যেকোনো কাজে রাগের বহিঃপ্রকাশ থাকলে কাজটিতে সুফলের চেয়ে কুফলের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। তাই আমাদের উচিত রাগের মতো ক্ষতিকর স্বভাব পরিহার করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।


 

এই রকম আরও টপিক