হিজরি দ্বিতীয় সন থেকে মুসলিম উম্মাহকে কোরবানির বিধান দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবিরা গুরুত্বসহ তা পালন করতেন। তাই সামর্থ্যবানদের জন্য তা পালন করা ওয়াজিব এবং তা পরিত্যাগ করা মাকরুহ ও অত্যন্ত অপছন্দনীয়। অর্থাৎ কোরবানি ফরজ স্তরের নিচে এবং সুন্নতে মুয়াক্কাদা স্তর থেকে কিছুটা ওপরে।
কোরআনের আলোকে কোরবানি
আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতএব আপনি আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন। ’ (সুরা কাউসার, আয়াত : ২)
উক্ত আয়াতে নির্দেশ হয়েছে, আপনি ‘নাহর’ তথা কোরবানি করুন আপনার প্রতিপালকের সন্তুষ্টির লক্ষ্যে। এই নির্দেশের মাধ্যমে কোরবানি করা ওয়াজিব প্রমাণিত হয়।
প্রখ্যাত মুফাসসির তাবারি ও ইবনে কাসির (রহ.) লেখেন, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-সহ বহু তাবেঈনের বক্তব্য অনুসারে আয়াতে কোরবানির নির্দেশ করা হয়েছে।
উক্ত আয়াতে ‘ওয়ানহার’ শব্দটি আরবি ব্যাকরণমতে নির্দেশসূচক, যা নির্ভরযোগ্য মতানুসারে সাধারণত ফরজ-ওয়াজিবের অর্থবাহী, যদি ভিন্ন উদ্দেশ্য শক্তিশালী হওয়ার প্রমাণ না থাকে।
এই নীতি অনুসারে এর দ্বারা কোরবানি ওয়াজিব প্রমাণিত হয়। (আহকামুল কোরআন : ৫/৮৬)
হাদিসের আলোকে কোরবানি
অসংখ্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানির নির্দেশ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। যেমন—
১. রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে। ’ (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩১২৩)
২. একবার রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ঈদের নামাজ পড়ানোর সময় কিছু লোক নামাজের পূর্বেই কোরবানি করে ফেলে। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) নির্দেশ দিলেন, ‘যারা নামাজের আগে কোরবানি করেছে তাদের অবশ্যই পুনরায় কোরবানি করতে হবে। ’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৯৬৪)
৩. আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) মদিনায় ১০ বছর অবস্থানকালে প্রতিবছরই কোরবানি করতেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৫০৭)
৪. ইবনে ওমর (রা.)-কে জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞাসা করল, কোরবানি কি ওয়াজিব? তিনি উত্তরে বললেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) কোরবানি করেছেন এবং মুসলমানরাও কোরবানি করেছেন। ’ প্রশ্নকারী বারবার জিজ্ঞাসা করলে ইবনে ওমর (রা.) একই কথার পুনরাবৃত্তি করলেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৫০৬)
৫. একদা আরাফার ময়দানে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে মানুষ সকল, পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের ওপর প্রতিবছর কোরবানি করা আবশ্যক এবং আতিরাও (রজব মাসে পশু জবাই করা)। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৭৮৮)
মোটকথা, কোরবানি করা ওয়াজিব তথা আবশ্যকীয় একটি আমল এবং তা ইসলামের নিদর্শন।
