৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযুদ্ধকে ম্লান করবে

ডা.গুলজার হোসেন উজ্জ্বল

মুক্তমত

 ৩০ শতাংশ কোটা মুক্তিযুদ্ধকে ম্লান করবে

ডা. গুলজার হোসেন উজ্জ্বল

মুক্তিযোদ্ধার তৃতীয় প্রজন্মকে কোটা সুবিধা দেওয়ার কোনো যুক্তিই আমার কাছে ভালো যুক্তি মনে হয়নি। মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করবে তার নিশ্চয়তা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের তৃতীয় প্রজন্ম কোন বিবেচনায় সুবিধা ডিজার্ভ করে? সে ওই পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে শুধু সেই জন্য? এগুলো তো প্রাচীন আমলের ধারণা। উপজাতি কোটা হতে পারে।

নারী কোটা হতে পারে। পিছিয়ে পড়া, সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীকে বাড়তি সুবিধা দিয়ে সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা করার রীতি সব সমাজেই আছে। সেটারও একটা যৌক্তিক সীমা থাকে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বা নাতি সেরকম আলাদা কোনো সামাজিক বাস্তবতা তৈরি করে না।
 মুক্তিযোদ্ধা কোটায় মেডিকেলে ভর্তি হওয়া ছাত্রকে দেখেছি ক্যাম্পাসে স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠনের রাজনীতি করতে। এটা আমার প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা।  
ত্রিশ পারসেন্ট কোটা সুবিধা সমাজে ভারসাম্য নষ্ট করবে, যার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে মুক্তিযুদ্ধ এবং এর চেতনার চর্চাকারীদের উপরই। একজন নিরীহ সাধারণ মানুষও মুক্তিযুদ্ধ ও তার সুবিধাভোগী প্রজন্মকে হিংসা করবে, নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করবে। নিজেকে বঞ্চিত মনে করবে। একধরনের দূরত্ব তৈরি হবে। যার ফল হবে মারাত্মক। আর এই সুযোগটা নেবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীরা। আজকে হয়তো মনে হবে না। কিন্তু বিশ বছর পর মিলিয়ে দেখবেন। ত্রিশ পারসেন্ট কোটা সুবিধা দিলে মানুষ ভুয়া সার্টিফিকেট তৈরি করবেই। বাংলাদেশের জন্য এটা খুবই স্বাভাবিক। আরো অনেক কিছুই করবে। পুরো মুক্তিযুদ্ধই তখন একটা উপহাসের বিষয় হয়ে যাবে। সুবিধাভোগীরা যে রাজনীতিতে কোনো কাজে লাগে না এই অভিজ্ঞতা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়েই এক দফা হয়ে যাবার কথা। হয়নি দেখে আফসোস লাগছে। মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সর্বোচ্চটাই করুক রাষ্ট্র। দেশের মানুষের মনে মুক্তিযুদ্ধের প্রতি, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি দরদ, সম্মান, ভালোবাসা জেগে ওঠে এমন কাজ করুক রাষ্ট্র। এরকম কাজ এখনো করার বাকি আছে।  

লেখক: চিকিৎসক

news24bd.tv/ডিডি

সম্পর্কিত খবর