সাতক্ষীরায় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

সাতক্ষীরায় ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

বঙ্গপোসাগরের সৃষ্ট প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদে ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সাতক্ষীরা-১ ও ২ এর অধীনে ২০টি পয়েন্টে এসব বাঁধ বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদী বেষ্টিত সুন্দরবন সংলগ্ন ব দ্বীপ অঞ্চল গাবুরা ইউনিয়নের সাড়ে ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ও নতুন করে ফাঁটল দেখা দেওয়ায় হুমকির মুখে পড়েছে এখানকার বসবাসরত ৪৩ হাজার মানুষ।

এছাড়া আশাশুনির উপজেলার প্রতাপনগর, বিছট, অনুলিয়া ও খাজরা ইউনিয়নের পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর ৭/২ নম্বর পোল্ডারের আওতায় পশ্চিম খাজরা রাজবংশী পাড়া এলাকার কপোতাক্ষ নদের তীরবর্তী জরাজীর্ণ বাধ নতুন করে ফাঁটল দেখা দিয়েছে।

এছাড়া কালিগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত নদী ইছামতির খানজিয়া, দেবহাটা উপজেলার টাউনশ্রীপুর ও ভাতশালা এলাকায় ব্যাপক ফাঁটল ও ভাঙন দেখা দিয়েছে। ফলে নদীর প্রবল জোয়ারে ভাঙন ভয়ে চরম ঝুঁকিতে রয়েছে এসব অঞ্চলের মানুষ।

তবে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে ও সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে ২৬ জুন প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় রিমাল ১০০ থেকে ১১০ কিলোমিটার গতিবেগে উপকূলে আঘাত হানে। আর তা স্থায়িত্ব হয় অনন্ত ৩০ থেকে প্রায় ৪০ ঘণ্টা।

এই সময়ের মধ্যে তিন থেকে চারটি জোয়ার ভাটায় সুন্দরবন সংলগ্ন কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া, চুনাসহ সকল নদ-নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬ থেকে ৭ ফুট উচ্চতায় বৃদ্বি পায়। ঝড়ো বাতাস ও জলোচ্ছ্বাসের ক্ষীপ্রতায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধে বার বার জোয়ারের পানি আছড়ে পড়তে থাকে। ফলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের-১ ও ২ এর আওতাধীন মোট ৬৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের ১৫ কিলোমিটার চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্থানভেদে ২০টি ফাঁটল ও ভাঙন কবলিত পয়েন্টের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গাবুরা ইউনিয়নের লেবুবুনিয়া, পাশ্বেমারি, হরিষখালী, গাবুরা বাদার ও ৯ নম্বর সুরা অঞ্চল। যেখানে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন প্রকল্পের আওতায় সাড়ে ২৯ কিলোমিটার গাবুরা ইউনিয়নের টেকসই বাঁধ নির্মানের কাজ চলমান রয়েছে। গত ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু হয়। ২০২৫ সালের ২৫ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

গাবুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মাসুদ হোসেন জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতে কপোতাক্ষ ও খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি যেভাবে বেড়িবাঁধে আছড়ে পড়েছিল। তাতে বাঁধ ভেঙে এই নদী বেষ্ঠিত ব-দ্বীপ অঞ্চল গাবুরা ইউনিয়ন সম্পূর্ণরূপে পানিতে প্লাবিত হতো। কিন্তু ঘূর্ণিঝড়ের মধ্যেই পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং এলাকাবাসীর সমন্বয়ে দলগত প্রচেষ্টায় অরক্ষিত বাঁধ ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পায়। ঝুকিপূর্ণ ফাঁটল ও ভাঙন কবলিত এলাকায় জিওব্যাগ ফেলে ও গাছের ডাল পুঁতে বাঁধ রক্ষা করা হয়। তবে সাতক্ষীরা জেলার পোল্ডার নং-১৫ পুনর্বাসন প্রকল্পের গাবুরা ইউনিয়নে টেকসই বাঁধ নির্মাণের কাজ গত দেড় বছরে মাত্র ২২ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সাড়ে ২৯ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে মাত্র আড়াই কিলোমিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী কাজের কিছুই এখনো সম্পন্ন হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আমির ইঞ্জিনিয়ারিং ও ইউনুস এন্ড ব্রাসাস বলছে মেগা এই প্রকল্পে এক হাজার বিশ কোটি টাকা বরাদ্দের মাত্র ১৭ শতাংশ টাকা বরাদ্দ পেয়েছে তারা। প্রকল্পের বরাদ্দ সংকটের কারণে কাজের অগ্রগতি করা সম্ভব হচ্ছে না।

সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সালাউদ্দিন জানান, পাউবো ১ ও ২ এর আওতায় ৬৮০ কিলোমিটার বেড়িবাঁধের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় রিমেলের আঘাতে ২০টি পয়েন্টে মোট ১৫ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  এসব এলাকায় জিওব্যাগ ও অনান্য নির্মাণ সামগ্রী দিয়ে বাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। ঝড়ের মধ্যে সার্বক্ষণিক এলাকাবাসীকে নিয়ে বাঁধ মেরামত করা হয়েছে গাবুরাসহ অনান্য স্থানে। ফলে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে সাতক্ষীরা উপকূলের মানুষ। স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৬ থেকে ৮ ফুট জলোচ্ছ্বাস ও প্রবল জোয়ার থেকে বাঁধ সম্পূর্ণরূপে রক্ষা করা সম্ভব হয়। ক্ষতিগ্রস্ত ও ফাঁটল কবলিত এলাকা চিহ্নিত করে তা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক