কেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন এমপি আনার?

আনোয়ারুল আজিম আনার

কেন হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন এমপি আনার?

মো. ইস্রাফিল আলম

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজিম আনার ভারতের কলকাতায় হত্যার শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ। বাংলাদেশের একাধিক মন্ত্রীও আজ বুধবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। কলকাতার নিউটাউন এলাকার সঞ্জিভা গার্ডেনের যে ফ্ল্যাটে তিনি হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন, সেখানে রক্তের দাগ পাওয়া গেছে, কিন্তু তার লাশ পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ।  

ডাক্তার দেখানোর কথা বলে তিনি ভারত গিয়ে নিখোঁজ হন।

৯ দিন পর তার হত্যার খবর এলো। কেন সংসদ সদস্যকে হত্যা করা হলো তা নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে জনমনে।  

বুধবার (২২ মে) সন্ধ্যায় নিউজ টোয়েন্টিফোরের ‘ইনসাইড পলিটিক্স’ প্রোগামে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার বলেন, ‘এমপি আনার ভারত যাওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি প্রটোকল মেনে যাননি। অন্য জগতের সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত বলে তথ্য আছে।

তিনি কোনো কাজে গেলে তো প্রটোকল ছাড়া যাওয়ার কথা নয়। আমার ধারণা, আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সংঘাতে তিনি হত্যার শিকার হতে পারেন। ’    

একই অনুষ্ঠানে অনুসন্ধানী সাংবাদিক জুলফিকার আলী মানিক বলেন, ‘উনার প্রোফাইল বলে তিনি গডফাদার। এক সময় চরমপন্থীদের গডফাদার ছিলেন এমনটা আমরা দেখেছি। উনি সংসদ সদস্য হলেও তার বিরুদ্ধে আইনবিরোধী কাজের অভিযোগ ছিল। অন্ধকার জগতের কোনো দ্বন্দ্বে তিনি হত্যার শিকার হয়ে থাকতে পারেন। ’    

অনুষ্ঠানে ঘটনাস্থল থেকে সরাসরি যুক্ত হন নিউজ টোয়েন্টিফোরের কলকাতা প্রতিনিধি। তিনি বলেন, কলকাতা পুলিশ জানিয়েছে এটা পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড।  যে কক্ষে হত্যা করা হয়েছে সেখানে অনেকের পায়ের ছাপ রয়েছে। রক্তের দাগ দেখা গেছে। ’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল দুপুরে এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে বলেছেন, ‘এমপি আজিমকে পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে। বাংলাদেশের সন্ত্রাসীরা এ হত্যার সঙ্গে জড়িত। ’ এ ঘটনা ‘বাংলাদেশ ও ভারতের দ্বিপক্ষীয় কোনো ইস্যু নয়’ বলে মন্তব্য করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।

জানা যায়, গত ১২ মে দুপুরের দিকে ঝিনাইদহ থেকে সড়কপথে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে করে দর্শনা চেকপোস্ট পর্যন্ত যান আজিম। পরে দর্শনা-গেদে ইমিগ্রেশন পার হয়ে ভারতে প্রবেশ করেন তিনি। কলকাতায় গিয়ে এমপি আনোয়ারুল আজিম তার কথিত বন্ধু স্বর্ণ ব্যবসায়ী গোপাল বিশ্বাসের বাড়িতে উঠেছিলেন। কলকাতার অদূরে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকার বরাহনগর থানার মণ্ডলপাড়া লেনে গোপাল বিশ্বাসের বাড়ি। গণমাধ্যমে জানা গেছে, এই ব্যবসায়ীর সঙ্গে তার দুই দশকের বেশি সময় ধরে সখ্য ছিল।

গোপাল বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমকে জানান, তার বাড়িতে ওঠার পরদিন ১৩ মে দুপুরে ‘বিশেষ প্রয়োজনের’ কথা বলে আজিম বেরিয়ে যান। দুপুরের দিকে বিধান পার্ক এলাকা থেকে ভাড়া করা গাড়িতে উঠে চলে যান আনোয়ারুল আজিম। সন্ধ্যায় ফিরে আসার কথা থাকলেও আর ফেরেননি তিনি।

পরে ওই দিনই আজিমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বর থেকে গোপালের নম্বরে মেসেজ আসে, ‘বিশেষ কাজে দিল্লি চলে যাচ্ছি এবং পৌঁছে ফোন করবো, তোমাদের ফোন করার দরকার নেই। ’

১৪ মে থেকে পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আজিমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। তার ব্যবহৃত হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরটিও বন্ধ ছিল। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে থেকে দিল্লিতে বাংলাদেশ দূতাবাস ও কলকাতায় উপদূতাবাসে যোগাযোগ করে খোঁজ নিতে বলা হয়।

এদিকে ১৮ মে কলকাতার বরাহনগর থানায় লিখিত ‘মিসিং ডায়েরি’ করেন গোপাল বিশ্বাস।

বুধবার (২২ মে) সকালে গোপাল বিশ্বাস স্থানীয় গণমাধ্যমকে জানান, এমপি আজিমকে হত্যা করা হয়েছে বলে কলকাতা পুলিশ তাকে জানিয়েছে।

এদিকে বুধবার সন্ধ্যায় সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যার ঘটনায় রাজধানীর শেরে-বাংলা নগর থানায় অপহরণ মামলা করেছেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। তবে মামলায় কাউকে আসামি করা হয়নি। মামলাটি নথিভুক্ত হয় বলে গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক