এমপি আনার হত্যা: যেসব কারণে সন্দেহের তীর মিন্টুর দিকে 

সাইদুল করিম মিন্টু

এমপি আনার হত্যা: যেসব কারণে সন্দেহের তীর মিন্টুর দিকে 

অনলাইন ডেস্ক

ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনার হত্যাকাণ্ডে গ্রেপ্তার হয়েছেন ঝিনাইদহের আলোচিত ব্যক্তি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার মিন্টু বর্তমানে ৮ দিনের রিমান্ডে রয়েছেন। জানা গেছে, আনার হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার ৬ দিন আগেই জেনে যান মিন্টু। কিন্তু কেন তিনি সেটা পুলিশ বা কাউকে জানালেন না তা নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠছে।

 

তাছাড়া তিনি দেড় দশক ধরে ঝিনাইদহকে এক হাতে নিয়ন্ত্রণ করছেন। রাজনীতিতে কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চাইতেন না বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। তিনি আনার হত্যার সঙ্গে জড়িত কিনা সে বিষয়ে নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। গোয়েন্দারা জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে সেটাই জানার চেষ্টা করছেন।

জানা যায়, আনারের আসনে সংসদ সদস্য হতে দীর্ঘদিনের চেষ্টা ছিল মিন্টুর। পাশের একটি আসনের এমপির মৃত্যুর পর সেখান থেকেও তিনি মনোনয়নপত্র কেনেন।

জানা যায়, বিরোধী মতের হওয়ায় ২০১৪ সালের মার্চে জেলা বাস টার্মিনালের ইজারা সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে প্রায় এক কোটি টাকার দ্বন্দ্বে সাবেক মেয়র মিন্টুর নির্দেশে খুন হন তৎকালীন জেলা বাস, মিনিবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফফার বিশ্বাস।  

বিরোধী মতের হওয়ায় ২০১৫ সালের জুনে যুবলীগ নেতা তরিকুল ইসলামকে শহরের মর্ডান মোড় এলাকায় কুপিয়ে হত্যা, একই বছরে অক্টোবরে সদর উপজেলার হরিশংকরপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা সানাউল্লাহ সানাকে কুপিয়ে হত্যা, ২০২১ সালে এপ্রিলে সদর উপজেলার খাজুরা এলাকায় যুবলীগ নেতা আবনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা, ২০২২ সালের অক্টোবরে সরকারি ভেটেনারী কলেজ ছাত্র সংসদকে নিজের নিয়ন্ত্রণে নিতে ভিপি মুরাদ, ছাত্রলীগ কর্মী তৌহিদুল ইসলাম ও সমরশে বিশ্বাসকে কুপিয়ে হত্যা করে মিন্টুর ক্যাডারবাহিনী।

ঝিনাইদহ পৌরসভার মেয়র থাকাকালে মিন্টু নিজেই বিভিন্ন সালিস বৈঠকের বিচার, পৌরসভার নানা প্রকল্প, শহরের হাটের দোকান বেচাকেনাসহ নানা অপকর্ম করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

সেই সঙ্গে শুরু করেন ঠিকাদারি ব্যবসা। নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী দিয়ে জোর পূর্বক জমি দখলের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এছাড়া শহরের পুরাতন হাটখোলা এলাকায় জেলা বিএনপির কার্যালয়ের জায়গা নাম মাত্র টাকা দিয়ে কিনে সেখানে গড়ে তোলেন ৬ তলা মার্কেট। পৌরসভার মহিষাকু এলাকায় এক সংখ্যালঘুর জমি জোরপূর্বক লিখে নিয়ে সেখানে আমোদ প্রমোদের জন্য বানিয়েছেন বাগানবাড়ি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমানে মিন্টুর বিরুদ্ধে দুটি মামলার বিচার চলমান। এর মধ্যে একটি পৌরসভার মেয়র থাকাকালীন মশক নিধন, গাড়ি মেরামত, রাস্তা পরিষ্কারসহ অন্যান্য প্রকল্পের বিলের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের মামলা। জালিয়াতি করে ৩৮টি চেকের মাধ্যমে প্রায় ৭৪ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০২৩ সালের ২২ জানুয়ারি মামলাটি করে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়। মামলায় সাইদুল করিম মিন্টুসহ চারজনকে আসামি করা হয়। এ ছাড়াও সদর থানায় ২০১৫ সালের ১ জুলাই ৩০২ ধারায় করা একটি হত্যা মামলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে।

কালিগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ডা. রাশেদ শমসের বলেন, রাজনীতিতে কোনো প্রতিপক্ষ রাখতে চাইতো না মিন্টু। গত সংসদ নির্বাচনের আগে কালীগঞ্জের বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন মিন্টু। আনারের বিরুদ্ধে একাধিকবার হুমকিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। ওই আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন মিন্টু নিজেও। তবে মনোয়ন না পেলেও আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনারকে ঘায়েল করতে তার বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড় করিয়ে নিজেই প্রচারণার মাঠে নেমে পড়েন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রবীণ নেতা বলেন, মিন্টুর কাজই হচ্ছে বিরোধিতা করা। জেলা আওয়ামী লীগ যাকে সমর্থন করে তিনি তাঁর বিপক্ষে চলে যান। সংসদ নির্বাচনে আনোয়ারুল আজীম আনার ও আব্দুল হাইয়ের বিপক্ষে কাজ করেছেন। এগুলো নিজের স্বার্থসিদ্ধি ও প্রতিহিংসা পরায়ণতার কারণেই করে থাকেন তিনি।  

সংবাদ মাধ্যমকে তিনি আরও বলেন, গত সংসদ, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান ছিল মিন্টুর। এ সব নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীদের কৌশলে হারিয়ে দেন তিনি। তিনি সব সময় দলের মধ্যে ফাটল ধরাতে ব্যস্ত থাকেন।
news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক