মানুষের পঞ্চ ইন্দ্রিয়ের মধ্যে কান অন্যতম একটি ইন্দ্রিয়। কানের বিভিন্ন রোগের মধ্যে কান পাকা রোগ খুবই সাধারণ। সমাজের একটি বড় অংশের মানুষ কান পাকা রোগে ভুগে থাকে। তবে এই রোগ দরিদ্র মানুষের মধ্যেই সাধারণত বেশী দেখা যায়।
ধরণ ও উপসর্গ
কান পাকা রোগ সাধারণত দুই প্রকারের হয়ে থাকে। প্রথমত শুধুই মাঝে মধ্যে কান দিয়ে পুঁচ, পানি পড়ে, কানে কম শোনে ও কানে শো শো শব্দ হয়। আবার এসব সমস্যা ছাড়াও বিভিন্ন ধরণের জটিলতা যেমন-পুঁচের সাথে রক্ত পড়া, মুখ বাঁকা হওয়া, কানে ও মাথায় ব্যাথা, মস্তিষ্কের পর্দায় প্রদাহ ও মস্তিষ্কে পুঁচ হতে পারে।
সাধারণত রোগীরা প্রথমেই হোমিওপ্যাথি, কবিরাজী বা সাধারন চিকিৎসক দেখানোর পর নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের কাছে যান। অনেক সময় চিকিৎকগণ অপারেশন করার পরামর্শ দিলেও রোগীরা কালক্ষেপন করে থাকেন। তবে শুরুতেই একজন নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা নিয়ে ওষুধ সেবন বা অপারেশন করালে কান পাকা রোগ থেকে সুস্থ হওয়া যায়।
অপারেশনের পর করণীয়
- প্রেসক্রিপশন মোতাবেক ওষুধ খেতে হবে।
- দ্বিতীয় দিন থেকেই স্বাভাবিক ও পুষ্টিকর খাবার খাবেন।
- অপারেশনের আগে স্বাভাবিক যেভাবে খেতেন, অপারেশনের পরেও স্বাভাবিক দুই পাশের চোয়ালের সাহায্যে চিবিয়ে খাবার খাবেন।
- অতিরিক্ত নাক ঝাড়া যাবে না।
- যে কানে অপারেশন করা হয়েছে সেদিকে কাত হয়ে কমপক্ষে এক মাস শোয়া যাবে না।
- অপারেশনের দ্বিতীয় দিন পর থেকে ঘরের স্বাভাবিক কাজ করা যাবে। তবে এক সপ্তাহ দিন বাইরে না যাওয়াই ভাল।
- গোসলের সময় অথবা মুখ ধোয়ার সময় কানের মধ্যে যেন কোন পানি প্রবেশ না করে সে জন্য তেলে কটন চুবিয়ে তেল ফেলে দিয়ে ওই কটন কানে দিয়ে ৩ মাস গোসল করতে হবে।
- অপারেশনের পর থেকেই নিয়মিত শরীর ও মাথা ধৌত করা যাবে। তবে কানে যেন পানি না ঢুকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- অপারেশনের পর কানের সামনের ব্যান্ডেজে হাত দিবেন না। কানের সামনের কটন রক্ত বা পানি দিয়ে ভেজা থাকলে শুধুমাত্র কটনটা পরিবর্তন করা যাবে, তবে ভেতরের জালির মত জিনিস বের করা যাবে না।
- ১০ দিনের মাথায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে পরামর্শের জন্য।
- কানের প্যাক খোলার পরে চিকিৎসকের প্রেশক্রিপশনের কানের ড্রপ শেখানো মত ব্যবহার করবেন।
- ১৫ দিন পর আবার ডাক্তারের কাছে যেতে হবে।
- Mastoid Operation এর পরে কান শুকাতে দুই থেকে তিন মাস সময় লাগতে পারে। এরমধ্যে কান থেকে হালকা পানি পানি আসতে পারে। তবে পুঁজ আসলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
প্রতিরোধের উপায়
- কাঁচা পাকা ঘরে বসবাস না করা।
- অতিরিক্ত লোক সমাগম হয় এমন পরিবেশে না থাকা।
- পুকুরে গোসল না করা।
- পুষ্টিকর খাবার খাওয়া।
- অযথা কানে কটন বাট দিয়ে খোঁচাখুচি না করা।
- কানের সমস্যা হলেই নাক কান গলা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
লেখক : নাক-কান-গলা রোগ বিশেষজ্ঞ, বাংলাদেশ ইএনটি হাসপাতাল, সোবহানবাগ, ঢাকা।
news24bd.tv/health