রাইসির মৃত্যু: শিয়া বিরোধিতা করতে গিয়ে জায়োনিস্টদের সাথে হাত মেলানো

রাইসি

রাইসির মৃত্যু: শিয়া বিরোধিতা করতে গিয়ে জায়োনিস্টদের সাথে হাত মেলানো

সাদিক খান 

তুর্কি সুন্নি দেশ। ইরানের সাথে সিরিয়া আর কুর্দিস্থান নিয়ে ওদের মধ্যে বিরাট গ্যাঞ্জাম আছে। অথচ রাইসির হেলিকপ্টার উদ্ধারের জন্য তুর্কি লোক পাঠিয়েছে। সরঞ্জাম পাঠিয়েছে।

রাইসির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে। কাতার সুন্নি দেশ। শোক জানিয়েছে। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা যোদ্ধারাও সুন্নি।
তারাও এই মৃত্যুতে শোক জানিয়েছে। রাইসির জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছে। এর মানে কি রাইসি নির্দোষ? ফেরেশতা? নো। শুধু রাইসিই কেন? আপনি পলিটিক্সের কোনো একজন মানুষকে পুরোপুরি ভালো বা খারাপ বলতে পারবেন না। দেখা যাবে এরদোগান হয়তো কিছু ক্ষেত্রে খুব ভালো কাজ করেছেন, কিছু ক্ষেত্রে আবার ভন্ডামি করেছেন। ভুল পক্ষ বেছে নিয়েছেন।  
যেমন ইমরান খান কাশ্মীর নিয়ে ভোকাল ছিলেন, অথচ জিনজিয়াং নিয়ে একটা কথাও বলেন নাই এবং এসব ভেবে যদি বাতিল করতে থাকেন, তাইলে দিনশেষে কেউই তো ভালো না, নাকি? পৃথিবীতে আমরা মুসলিমরাই একমাত্র জাতি, যারা নেতার মধ্যে মানুষ খুঁজি না, ফেরেশতা খুঁজি। মানুষ মারা গেলে আমরা তার দোষ খুঁজে বের করে বলি, কই, সে তো ফেরেশতা ছিলো না? ভাই, মানুষকে সম্মান করতে হলে, ভালোবাসতে হলে তো তারে ফেরেশতা হতে হবে না। রাইসি সিরিয়াতে ভালো কাজ করেননি। সিরিয়াতে ইরানের ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা কম হইসে? ইরান তো কোনো ড্রিমল্যান্ড না। ওদের মধ্যেও হিপোক্রেসি আছে, ইন্টারনাল পোনাপুনি আছে, পলিটিক্যাল ঝামেলাও আছে।  
কিন্তু কখন সেই সমালোচনাটা করতে হবে আর কখন তাদের ভাই বলে বুকে টেনে নিতে হবে, এই লাইনটাই তো আপনারা বোঝেন না। রাইসি এক মাস আগে পৃথিবীর সবচে শক্তিধর দেশের শক্তির মিথ ভেঙে দিয়েছে। সারা পৃথিবীর সামনে তথাকথিত একটা রাষ্ট্রের আইরন ডোমকে সস্তা বানিয়েছে, প্রমাণ করে দিয়েছে, ওদের আমরা যতটা বাঘ ভাবি, ততোটা বাঘ ওরা না। আমি বিশ্বাস করি, রাইসিকে প্রাণ এইজন্যই দিতে হলো এবং এজন্যই রাইসির প্রাণ দেওয়াটা মহান। রাইসির এই মৃত্যুও মহান। রাইসি এমন একটা অবৈধ স্টেটের বিরোধিতা করতে গিয়ে খুন হলেন, যেই নোংরা দেশটা গত ৭০ বছর ধরে অনবরত মুসলিমদের রক্ত ঝড়িয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তেও ঝড়াচ্ছে।  
এই একটা ক্ষেত্রে এসে তো আমাদের এক হওয়ার কথা ছিলো। ঠিক যেমন তুরস্ক হয়েছে, কাতার হয়েছে। এমনকি জাতিসংঘ, সৌদি পর্যন্ত লোক দেখানোর জন্য হলেও বিবৃতি দিয়েছে, শোকপ্রকাশ করেছে। আর আপনারা তখন আপনাদের কুৎসিত দাঁত বের করে বলছেন, হে হে, শিয়া মরছে, ভালো হয়েছে। জাহান্নামে যাক। বুঝতে পারছেন তো আপনাদের মানসিক দৈন্যতা আর অশ্লীল অসভ্যতা ঠিক কতটা ভয়াবহ অবস্থায় পৌঁছে গেছে? হিংসা আর বিদ্বেষের এমন এক পর্যায়ে গেছেন যে আজ জায়োনিস্টদের সাথে আপনি রাইসির মৃত্যুতে উল্লাস করছেন। শিয়া বিরোধিতা করতে করতে শেষপর্যন্ত সম্ভবত জায়োনিস্টদের সাথে হাত মেলাতেও আপনাদের রুচিতে বাঁধবে না একটুও। বিশ্বাসের প্রাচীর শক্ত হওয়া ভালো। বাট এতোটা শক্ত হওয়ার দরকার নাই, যতটা শক্ত হলে ভাইয়ের রক্ত দেখেও আমাদের মন গলবে না। এতোটা অন্ধ কেন হবেন, যতটা অন্ধ হলে শিয়া মরার আনন্দে আপনাকে জায়োনিস্টদের সাথে বুক মেলানোর মতো নোংরামি করতে হয়?

news24bd.tv/ডিডি