সাজানো-গোছানো স্কুল ক্যাম্পাস। আলাদা আলাদা শ্রেণিকক্ষ, বিশুদ্ধ পানির ট্যাঙ্ক, খাবার জায়গা, রান্নাঘর, খেলার মাঠসহ কতোই না সুব্যবস্থা। কিন্তু সমস্যা একটাই; বন্য হাতি!
স্কুলের চারপাশে শাল ও সেগুনের জঙ্গল থাকায় সেখানে প্রায়ই চড়াও হয় জঙ্গলি হাতির দল। যদিও এ নিয়ে মোবাইলে নিয়মিত সতর্কবার্তা পাঠানো।
এই অবস্থার মধ্যেই গেল ফেব্রুয়ারিতে অবসর নিয়েছেন তিনি। এরপর আর নতুন কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। ফলে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে স্কুলটি।
এই স্কুলটির অবস্থান ভারতের পশ্চিমবঙ্গের (বাংলায়) বাঁকুড়া জেলায়। সেখানকার বিষ্ণুপুর পৌর এলাকা থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে হাতগাড়া গ্রামে দাঁড়িয়ে আছে এই বিদ্যাপীঠ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুলটি। ফলে শুধু পড়াশোনা নয়; মিড ডে মিল (দুপুরের খাবার) থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার শিশুরা।
জঙ্গলে ঘেরা এই গ্রামে ৪০টি পরিবারের বাস। ৩০টি আদিবাসী আর ১০টি লোহার পরিবার। প্রথম থেকে চতুর্থ শ্রেণী পর্যন্ত ২৬জন শিশু ওই স্কুলে পড়তো। তাদের কারও পরিবারের নিজস্ব জমি নেই। সবাই দিনমজুর আর শালপাতা সংগ্রহই তাদের পেশা।
আরও পড়ুন → প্রস্রাব করে ব্রিজে লাগা আগুন নেভালো যুবক!
গ্রামের একটি মাত্র পাকা ঘর, সেটাই স্কুল। ১৯৯৯ সালে দু’জন শিক্ষককে নিয়ে যাত্রা শুরু করেছিল স্কুলটি। চাঁচর গ্রামের মৃণাল চক্রবর্তী ২০১২-এর জানুয়ারি মাসে অবসর নেওয়ার পরে পাশের বেলশুলিয়া গ্রামের সাধন মহাদণ্ড একাই দায়িত্ব সামলাচ্ছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনিও অবসর নেন। তারপর থেকেই স্কুলে তালা। কেউ পড়াতে আসে না। বন্ধ মিড ডে মিলও।
স্কুল বন্ধ, তাই খেলায় ব্যস্ত শিশুরা
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, তারা ভোরে জঙ্গলে শালপাতা তুলতে বেরিয়ে যান। বাচ্চারা স্কুল থাকলে নিশ্চিন্তে থাকতেন। এখন বাচ্চারা গ্রামেই ঘুরে বেড়ায়। হাতি কখন যে বাচ্চাদের ওপর চড়াও হয়, সব সময় সেই আতঙ্কে থাকতে হয় তাদের।
তাদের এলাকা থেকে সব থেকে কাছের বাগডোবা আর বেনাবান্দি গ্রামে স্কুল রয়েছে। তবে সেটাও ৬ কিলোমিটার দূরে। আর বাইরের স্কুলে পড়তে যেতে হলে জঙ্গলের পথ ধরেই যেতে হবে। মানে, আবারও হাতির ভয়!
এই সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন বিষ্ণুপুর পঞ্চায়েত সমিতির প্রাক্তন শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ নূর মোহাম্মদ খান। তিনি বলেন, ‘ওই স্কুলটি জঙ্গল ঘেরা গ্রামে। প্রায়ই সেখানে বন্য হাতি আক্রমণ করে। তাই কেউ পড়াতে যেতে চান না। ’
‘এ ব্যাপারে প্রশাসনের সব স্তরে জানান আছে। বাচ্চারা লেখাপড়ার পাশাপাশি মিড ডে মিল থেকেও বঞ্চিত। দুপুরের খাবারটা ওই জঙ্গলঘেরা দিনমজুর পরিবারগুলোর কাছে খুবই প্রয়োজনের। ’
বিষ্ণুপুর মহকুমা কর্মকর্তা মানস মণ্ডল বলেন, ‘স্কুল শিগগিরই চালু হবে। সমস্যা জানার পর বিশেষ অনুমতি নিয়ে বাঁকুড়া জেলা সরকারি ওয়েবসাইটে বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছে। স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত প্রাইমারি, আপার প্রাইমারি ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষকদের কাছ থেকে আবেদনপত্র চাওয়া হয়েছে। ১ সেপ্টেম্বর (আগামীকাল শনিবার) বিষ্ণুপুরের মহকুমা অফিসেই আগ্রহী শিক্ষকদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হবে। ’
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
অরিন/নিউজ টোয়েন্টিফোর