বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, যৌথবাহিনীর টহল

বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষ, যৌথবাহিনীর টহল

অনলাইন ডেস্ক

প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দোয়া অনুষ্ঠানের স্থান নির্ধারণ নিয়ে বিএনপির দুপক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত  নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার বাবু টকিজ হলের সামনে এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয়রা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে বর্তমান উপজেলা বিএনপির কমিটি ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ রানা পাটোয়ারীর মধ্যে কমিটি গঠন নিয়ে বিরোধ চলছিল।

দুই পক্ষই কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পৃথকভাবে পালন করে আসছেন। ১ সেপ্টেম্বর রোববার বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিল আয়োজনের জন্য বিএনপি নেতা মাসুদ রানা পাটোয়ারীসহ বৈষম্যের শিকার ত্যাগী নেতারা কিশোরগঞ্জ হাইস্কুল মাঠে স্থান নির্ধারণ করেন।

অন্যদিকে একই স্থানে মূল বিএনপিও প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিলের স্থান নির্ধারণ করে। উভয়পক্ষ একই স্থান নির্ধারণ করাকে কেন্দ্র করে শনিবার সকাল থেকে উত্তেজনা বিরাজ করছিল।

এর মধ্যে মাসুদ রানা পাটোয়ারী বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাধারণ সম্পাদক একে এম তাজুল ইসলাম ডালিমকে ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইল ফোনে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। পরে সন্ধ্যার দিকে বর্তমান কমিটির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বাজারের দিকে আসার সময় মাসুদ রানা পাটোয়ারী গ্রুপের নেতাকর্মীরা তার ছোটভাই সদর ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেড বাবুর দোকানের সামনে তাকে আটকানোর চেষ্টা করেন। পরে বর্তমান কমিটির সভাপতির কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে লাঠিসোটা ও ইট পাটকেল হাতে নিয়ে উপজেলা শহরের মুল সড়কে দুপক্ষই মুখোমুখি অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

দুপক্ষের মধ্যে এ সংঘর্ষ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে চলে। এতে মাসুদ রানার ছোটভাই জাতীয় পার্টির সদস্য ও সদর ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গ্রেনেড বাবুসহ বিএনপির ১০ নেতাকর্মী আহত হন। পরে বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা সদর ইউপি চেয়ারম্যানের দোকান ভাঙচুর করেন। এসময় শহরের দোকানপাট বন্ধ ছিল। এ সংঘর্ষের পর শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাসুদ পাটোয়ারী বলেন, তারা নিজেরা পক্ষপাতিত্ব করে একটা কমিটি গঠন করেছেন। আমারা যারা বেবির পক্ষে রাস্তায় নেমেছিলাম তাদের বাদ দিয়েছেন। এ কমিটি কখনো আন্দোলন করতে পারেনি, এটা আওয়ামী লীগের মনগড়া কমিটি। সভাপতি মামুন এসেছেন জাতীয় পার্টি থেকে ও ডালিম সাধারণ সম্পাদক হয়েছে ছাত্রলীগ থেকে এসে। যারা প্রকৃত ত্যাগী নেতাকর্মী তারা সবাই বাদ পড়েছি।

তিনি বলেন, রোববার দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দিনটি উদযাপনের জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছি। আজ হঠাৎ শুনি তারা এখানে অনুষ্ঠান করবে। একই জায়গায় দুই পক্ষকে অনুষ্ঠান করতে দেওয়া যাবে না। এরপর আমি মামুনকে কল করে বলি, তুমি ঝগড়া করার জন্য এমন করছ। পরে সাধারণ সম্পাদককে কল দিলাম। আমি রাতে দোকান বন্ধ করে বাজারে চলে যাই। তাদের কিছু ছেলে লাঠিসোটা নিয়ে আমার দোকানে চলে গিয়েছিল। এসময় আমরা জড়ো হয়ে তাদের ধাওয়া দিলে পালিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর আওয়ামী লীগের যোগসাজশে তারা আবার এসে আক্রমণ করে চেয়ারম্যানের দোকান ভাঙচুর করে তাকেও আহত করেছে।

উপজেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমাকে সকালে মাসুদ রানা কল দিয়ে দেখে নেওয়ার হুমকি দেন। আমি সন্ধ্যার পরে বাজারে গেলে তার ছোট ভাই গ্রেনেড বাবু আমাকে আটকানোর চেষ্টা করে। পরে আমি সেখান থেকে চলে এসে আমার নেতাকর্মীদের বিষয়টি জানাই। তারা সেটি শুনে রাস্তায় দাঁড়ালে মাসুদ রানা ও তার নেতাকর্মীরা হামলা চালায়। এতে আমার কর্মীরা ক্ষিপ্ত হয়ে তা তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ায়।

কিশোরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ পলাশ চন্দ্র মণ্ডল বলেন, স্থানীয় পুলিশের পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব না হওয়ায় পুলিশ সুপারকে বিষয়টি অবগত করি। তারপর সেনাবাহিনীসহ যৌথ বাহিনী আসলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। যৌথবাহিনীর টহল দেখে উভয় পক্ষ স্থান ত্যাগ করে। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক