শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একদিনে ৭টি খুনের মামলা

শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একদিনে ৭টি খুনের মামলা

অনলাইন ডেস্ক

রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে এগার বছর আগে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে ‘গণহত্যার’ অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। রোববার (১৮ আগস্ট) ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) মো. জাকী-আল-ফারারির আদালতে এই মামলার আবেদন করেন বাংলাদেশ পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান বাবুল সরদার চাখারী।  

মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন আদালতের বেঞ্চ সহকারী নাজমুল হাসান তালুকদার।

এ ছাড়া কোটা সংস্কার ও সরকার পতনের আন্দোলনে হত্যার অভিযোগ এনে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, রংপুর, জয়পুরহাট ও নাটোরে এদিন আরো ছয়টি মামলা হয়েছে। সবকয়টি মামলায় শেখ হাসিনাকে আসামি করা হয়েছে।

শাপলা চত্বরের মামলায় বাদির অভিযোগ, ১৩ দফা দাবিতে ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলাম মতিঝিলের শাপলা চত্বরে অবস্থান নেয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে রাত ১১টার দিকে বিদ্যুৎ লাইন বন্ধ করে দেন।

এরপর শাপলা চত্বরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অভিযান চালিয়ে মাদ্রাসাছাত্র ও পথচারীদের ওপর গণহত্যা চালানো হয়। পরে লাশ সিটি করপোরেশনের গাড়িতে করে নিয়ে গুম করা হয়। নিহত ব্যক্তিদের পরিবার থানায় মামলা করতে গেলে তা নেওয়া হয়নি।
 
মামলায় অন্য আসামিদের মধ্যে আছেন- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারিক আহমেদ সিদ্দিক, সাবেক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাবেক আইজিপি হাসান মাহমুদ খন্দকার, সাবেক আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক, এসবির সাবেক প্রধান মনিরুল ইসলাম, পুলিশের যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার, মতিঝিল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক, মতিঝিল ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মনসুর আহমেদ, মতিঝিল থানা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহবুল হক, আওয়ামী লীগ নেতা ইমরান, সাবেক কাউন্সিলর মোহাম্মদ সাঈদ, সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ, আওয়ামী লীগ নেতা আকরাম হোসেন, সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফারজানা আক্তার, সাবেক সংসদ সদস্য মমতাজ আক্তার, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আনিসুর রহমান, আওয়ামী লীগ নেতা আলমগীর হোসেন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান শেখ সালাউদ্দিন, মতিঝিল জোনের সাবেক উপকমিশনার শেখ নাজমুল আলম, হামদর্দ গ্রুপের পরিচালক মেজর (অব.) ইকবাল, মতিঝিল জোনের সাবেক উপকমিশনার আশরাফুজ্জামান, ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারের (এনটিএমসি) সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস এবং মো. শাহাদাত হোসেন, মো. এমদাদুল হক ও শেখ শাহ আলম তালুকদার।

হত্যার অভিযোগে ৬ মামলা

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুরান ঢাকার কবি নজরুল সরকারি কলেজ এবং সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের দুই শিক্ষার্থী হত্যার অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে রবিবার মামলা করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাসরিন বেগম।

ঢাকার মূখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) তরিকুল ইসলামের আদালতে এই মামলা করেন তিনি। শুনানির পর আদালত বাদীর অভিযোগ নিয়মিত এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করে আইনি ব্যবস্থা নিতে সূত্রাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দেন।

এই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, ঢাকার দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাসান মাহমুদ, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, সাবেক ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্‌মেদ, ঢাকা রেঞ্জের সাবেক উপমহাপরিদর্শক সৈয়দ নুরুল ইসলাম, পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক আবদুল্লাহ আল-মামুন, ডিএমপির সাবেক গোয়েন্দাপ্রধান হারুন অর রশীদ, সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার ও ডিএমপির সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানকে আসামি করা হয়েছে।

মামলায় বলা হয়েছে, ১৯ জুলাই পুরান ঢাকার জনসন রোডে শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কার আন্দোলন কর্মসূচি ছিল।

সেদিন বিকেলে শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ  হামলা চালায়। হামলাকারীদের গুলিতে কবি নজরুল সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী ইকরাম হোসেন কাউসার ও সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থী ওমর ফারুক গুরুতর জখম হন। পরে ইকরামকে পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালে চিকিৎসকেরা মৃত ঘোষণা করেন। আর ওমর ফারুক মারা যান ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।

নারায়ণগঞ্জ: সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার দিন ৫ আগস্ট শহরের চাষাঢ়া এলাকায় আবুল হাসান স্বজন নামের যুবক গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহতের ঘটনায় এই হত্যা মামলা করা হয়। নিহত স্বজনের বড়ভাই আবুল বাশার অনিক বাদী হয়ে এই মামলা করেন। মামলার তথ্য সাংবাদিকদের জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আব্দুস সাত্তার। মামলায় আসামি হিসেবে শেখ হাসিনাসহ ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে আরো ১০০-১৫০ জনকে।

এই মামলায় শেখ হাসিনার সঙ্গে আসামি করা হয়েছে- সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান, তার বড়ভাই নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং বিকেএমইএর সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, শামীম ওসমানের ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান, শ্যালক বিসিবি পরিচালক তানভীর আহমেদ টিটু, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভীর ছোটভাই মহানগর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক আহাম্মদ আলী রেজা উজ্জ্বলকে।

রংপুর: কোটা সংস্কারের আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল-তাহির নিহতের ঘটনায় এই হত্যা মামলাটি হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ৪০ জনকে আসামি করে গতকাল রবিবার রংপুরের কোতোয়ালি মেট্রো থানার আমলি আদালত এই মামলা করেন নিহতের বাবা আবদুর রহমান।

এ ছাড়া আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে ফল ব্যবসায়ী মেরাজুল ইসলাম নিহতের ঘটনায় আরো একটি হত্যা মামলা করা হয়। রবিবার মূখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আমলি আদালতে এই মামলা করেন মেরাজুল ইসলামের মা আম্বিয়া খাতুন। এই মামলায় রংপুর মহানগর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, আওয়ামী লীগ নেতা, সিটির কাউন্সিলরসহ ২১ জন আসামি করা হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ১৯ জুলাই বেলা সাড়ে তিনটার দিকে মিছিল বের হলে রংপুর সিটি বাজারের সামনে পুলিশের গুলিতে তারা মারা যান।

নাটোর: সরকার পতনের একদিন আগে ৪ আগস্ট ইয়াসিন ইসলাম (১৭) নামের এক কিশোরকে ঘরে আটকে রেখে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগে এই মামলা করা হয়েছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নাটোর-২ (সদর-নলডাঙ্গা) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামসহ (শিমুল) ১১১ জনকে আসামি করা হয়েছে মামলায়। রবিবার মামলাটি করেন নিহত ইয়াসিনের বাবা ফজের আলী।

এই মামলার তথ্য নিশ্চিত করেন সদর থানার উপপরিদর্শক কৃষ্ণপদ রায়। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ছুটিতে থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশে অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ’

মামলার এজাহারে শেখ হাসিনা, সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শরিফুল ইসলাম, নাটোর পৌরসভার মেয়র উমা চৌধুরীকে প্রধান আসামি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।

মামলা বলা হয়েছে, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে অন্যান্য আসামিরা ৪ আগস্ট সকাল ১০টার দিকে শহরের মাদ্রাসা মোড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় বাদীর ছেলে ইয়াসিনকে অপহরণ করা হয়। পরে তাকে সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুল ইসলামের বাড়ির দোতলার একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরদিন বিকালে আসামিরা ছেলেটিকে আটকে রেখে ঘরে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। আগুনে পুরো বাড়ি পুড়ে যায়। এতে বাদীর ছেলে ইয়াসিনও নিহত হয়।
 
এজাহারে আরও বলা হয়েছে, ঘটনার পরদিন বাড়ি থেকে নিহত ইয়াসিনের লাশ উদ্ধার করা হয়। মরদেহের ৬০ ভাগ পুড়ে যাওয়ায় ময়নাতদন্ত ছাড়াই তাকে দাফন করা হয়। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খারাপ থাকায় মামলা করতে দেরি হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করেছেন বাদী।

জয়পুরহাট: কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে কলেজছাত্র নজিবুল সরকার (১৮) নিহতের ঘটনায় হত্যার অভিযোগে এনে এই মামলা করা হয়েছে। নজিবুলের বাবা মজিদুল সরকার বাদী হয়ে গতকাল রবিবার জয়পুরহাট মূখ্য বিচারিক হাকিম (সিজেএম) আদালতে এই মামলা করেন।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়াও মামলায় আসামি করা হয়েছে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরসহ ১২৮ জনকে। আদালত মামলাটি এজাহার হিসেবে নথিভুক্ত করতে জয়পুরহাট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) নির্দেশ দিয়েছেন। বাদীপক্ষের আইনজীবী আব্দুল মোমিন ফকির সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এ নিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সারা দেশে ১৬টি মামলার খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১২টি মামলাই হত্যার অভিযোগে। ৩টিতে রয়েছে গণহত্যা ও মানবাতাবিরোধ অপরাধের অভিযোগ। আর অন্যটি অপহরণের মামলা।

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক