জাবি শিক্ষকের পদত্যাগ নাটক

জাবি শিক্ষকের পদত্যাগ নাটক

অনলাইন ডেস্ক

কোটা সংস্কারের আন্দোলনে ‘সংহতি প্রকাশ করে’ পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিম। এরপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ বাহবা পান এই শিক্ষক।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই পদত্যাগের পেছনে অন্য কারণ রয়েছে। তিনি বর্তমানে শিক্ষা ছুটিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন।

তার বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে সহযোগিতার অভিযোগ রয়েছে, যার আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলছে। মূলত, আন্দোলনের এই সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘোষণা দিয়ে নিজেকে ‘হিরো বানানোর নাটকীয় প্রয়াস’ করেছেন এই শিক্ষক। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলছে, এই শিক্ষক পদত্যাগপত্রে কারণ লিখেছেন এক, আর ফেসবুকে বর্ণনা করেছেন আরেক; এটি উদ্দেশ্যমূলক এবং দুরভিসন্ধিমূলক।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান জানান, গত ২৫ জুলাই ‘ব্যক্তিগত ও পারিবারিক’ কারণ দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে একটি মেইল পাঠান জাহিদুল করিম।

কিন্তু তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় চাকরি ছাড়ার যে বর্ণনা দিয়েছেন, তা ছিলো অন্যরকম।

রেজিস্ট্রার মো. আবু হাসান আরও বলেন, তার বিভাগের একটি সেমিস্টার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তিনি আগেই খুলেছিলেন এমন অভিযোগের ভিত্তিতে বিভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হয়। তারপর বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট থেকে একটি স্ট্রাকচারাল কমিটি গঠন হয়।

বিষয়টি যেহেতু খুবই সেনসিটিভ, তাই কমিটির দুই-তিনটি মিটিং হয়। কিন্তু অভিযুক্ত শিক্ষক যেহেতু দেশের বাইরে থাকেন, তাই কথা বলতে পারছিলেন না। তখন তার সাথে ভার্চুয়ালি কথা বলার কথা চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সম্ভব হয়নি। যেহেতু তার সঙ্গে কথা বলা হয়নি, তাই কমিটি রিপোর্টও দিতে পারেনি।

আরও পড়ুন: জন্মদিনের পাঁচদিন আগে জানতে পারলেন, তিনি মারা গেছেন!

উল্লেখ্য, গত বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) ফেসবুকে নিজের আইডি থেকে পদত্যাগপত্রের ছবি প্রকাশ করে জাহিদুল করিম লিখেছিলেন, ‘আমি বিগত ১৪ বছর ধরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগে শিক্ষকতা করছি। দেশের সাম্প্রতিক সহিংসতা এবং নৈরাজ্য সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশ সরকারের উদাসীনতা এবং শিক্ষকদের দলীয় মনোভাব আমাকে অনেক ব্যথিত করেছে। শিক্ষার্থীদের কোটা সংস্কারের একটি ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকারের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে অনেক সাধারণ শিক্ষার্থীকে মূল্যবান জীবন দিতে হয়েছে। সরকার চাইলে দ্রুত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিতে পারতো, তাহলে এত প্রাণহানির ঘটনা ঘটত না। যেসব শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে, তাদের নিয়ে তাদের পরিবারের অনেক স্বপ্ন ছিল। সন্তান হারানোর বেদনায় তারা আজ দিশেহারা। তাদের সঙ্গে সঙ্গে সমগ্র জাতি আজ শোকাহত। শিক্ষকদের ভূমিকা আজ জাতির কাছে প্রশ্নবিদ্ধ। রাজনৈতিক দলীয় কারণে শিক্ষক সমাজের বিবেক লোপ পেয়েছে, শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্পর্ক ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। সমগ্র বাংলাদেশের শিক্ষক সমাজের মূল্যবোধ এবং নৈতিকতাবোধকে জাগ্রত করতে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি ঘোষণা করছি। ’

তার এই বক্তব্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর গতকাল শুক্রবার (২৬ জুলাই) জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ দপ্তর একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। তাতে বলা হয়, পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে সহযোগিতার অভিযোগে শাস্তির আশঙ্কা থেকে চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন জাহিদুল করিম। বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষা ছুটিতে অবস্থানকালীন এবং আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলমান অবস্থায় ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিমের চাকরি থেকে অব্যাহতির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জাহিদুল করিমের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ২৮ আগস্ট থেকে আনুষ্ঠানিক তদন্ত কমিটির কাজ চলমান রয়েছে। এমতাবস্থায় ২০২৪ সালের ২৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়ে একটি মেইল পাঠিয়েছেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মনে করে, জাহিদুল করিম তদন্তে শাস্তির ভয় থেকেই চাকরি থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি উদ্দেশ্যমূলক ও দুরভিসন্ধি থেকে দেশের সাম্প্রতিক ঘটনাকে কারণ হিসেবে অব্যাহতিপত্রে উল্লেখ করেছেন।

তবে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছে যে, তার বিরুদ্ধে গঠিত অভিযোগের আনুষ্ঠানিক তদন্ত চলবে এবং তদন্ত সম্পন্ন হওয়ার পর সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।

news24bd.tv/জেপি বর্মা/SC   

এই রকম আরও টপিক