নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধে জিরো টলারেন্সে বিএনপির হাইকমান্ড

নেতাকর্মীদের সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি বন্ধে জিরো টলারেন্সে বিএনপির হাইকমান্ড

অনলাইন ডেস্ক

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার পরিবর্তনের পর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দখলের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে নড়েচড়ে বসেছে দলটির হাইকমান্ড।

ব্যাপারটি নিয়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান কঠোর বার্তা দিয়েছেন। এরই প্রেক্ষিতে দল এবং এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের কোনো নেতার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তার বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিকভাবে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

করা হচ্ছে বহিষ্কার ও পদ স্থগিত। এমনকি দল থেকে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও করা হচ্ছে।

বিএনপির দলীয় সূত্র জানায়, নানা অভিযোগে এ পর্যন্ত সারা দেশে বিএনপি’র প্রায় ৫০ থেকে ৬০জন নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে কারো পদ স্থগিত করা হয়েছে, কাউকে বহিষ্কার করা হয়েছে এবং কারও বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

পাশাপাশি যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল এবং ছাত্রদলসহ অঙ্গসংগঠনেও চাঁদাবাজি ও দখলদারীর অভিযোগে নেতাকর্মীদের বহিষ্কার, পদ স্থগিত এবং মামলা করা হচ্ছে। এর মধ্যে জাতীয়তাবাদী যুবদলের দু’জন ও ছাত্রদলের একজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ঢাকাসহ সারা দেশে চলছে চাঁদাবাজি ও দখলদারিত্ব। বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিএনপিপন্থিরা দলবল নিয়ে প্রতিপক্ষকে হুমকি দিচ্ছে। কোথাও কোথাও বিএনপি’র দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে।

এসব নিয়ন্ত্রণে আনতে এবং জনসাধারণের কাছে দলটির ইমেজ ধরে রাখতে কঠোর হতে বাধ্য হয়েছে বিএনপি’র হাইকমান্ড।  

এসব ব্যাপারে কথা হলে দলটির সিনিয়র নেতারা বলেন, সম্প্রতি বিভাগীয় পর্যায়ে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। পাশাপাশি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সঙ্গেও তারেক রহমান মতবিনিময় করেন। মতবিনিময়ে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান চাঁদাবাজি ও দখলের বিরুদ্ধে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছেন। যেসব নেতাকর্মী এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকবেন তাদের দল থেকে বহিষ্কার করা হবে। অপরাধ প্রমাণিত হলে দল থেকেই তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। তারেক রহমানের এই নির্দেশনা অনুযায়ী ইতিমধ্যে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে।

২ সেপ্টেম্বর শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে সদ্য বহিষ্কৃত ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ফখরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চুর বিরুদ্ধে দলের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়েছে।

মামলার বাদি বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কতিপয় ব্যক্তি বিএনপি’র নাম ব্যবহার করে অনৈতিক কাজে লিপ্ত রয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ দলীয় নেতৃত্ব এ বিষয়ে সবাইকে বারবার সতর্ক করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। আর তারেক রহমান এসব অপকর্মের সঙ্গে জড়িত, দলের ভাবমূর্তি বিনষ্টকারীদের বিরুদ্ধে এখন শুধু সাংগঠনিক শাস্তিমূলক ব্যবস্থাই নয়, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানসহ দলের হাইকমান্ড এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করছেন।

গত ২৭ আগস্ট ভালুকা উপজেলার কাঠালী এলাকায় এলজি-বাটারফ্লাই ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেডের কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য একটি আবেদনপত্রে সুপারিশ করেন ফখরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু। ওই আবেদনে প্রতিষ্ঠানের সাপ্লাই চেইন, পরিবহন এবং ওয়েস্ট ডিজপোজাল কাজ ভালুকা এন্টারপ্রাইজকে দেয়ার সুপারিশ করা হয়। ওই কোম্পানিকে দেয়া সুপারিশে বিএনপি নেতা ফখরউদ্দিন আহমেদ লিখেছেন, উল্লিখিত (ভালুকা এন্টারপ্রাইজ) প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যবসা পরিচালনার কার্যাদেশ প্রদানের জন্য সুপারিশ করা হইল। তারপরই বিএনপি’র সিনিয়র  যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে তাকে বহিষ্কারের তথ্য জানানো হয়।

তবে শনিবার রাজধানীতে ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে এক সংবাদ সম্মেলনে ফখরউদ্দিন আহমেদ বাচ্চু বলেন, আমি দীর্ঘদিন বিএনপি’র একজন পরীক্ষিত কর্মী। দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি করে সামাজিকভাবে সম্মানিত হয়ে আজকের এ পর্যায়ে এসেছি। এ পর্যন্ত আমার বিরুদ্ধে নেয়া দলীয় সিদ্ধান্ত আমি মাথা পেতে নিয়েছি। যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে আমার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে সে বিষয়ে বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নিকট একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে আমি নির্দোষ প্রমাণিত হলে আমার বিরুদ্ধে নেয়া সাংগঠনিক ও আইনগত ব্যবস্থা প্রত্যাহারের অনুরোধ করছি।  

সভায় উপস্থিত দু’জন নেতা বলেন, গত ১৫ বছর ধরে জনগণের মধ্যে বিএনপি’র যে জনপ্রিয়তা রয়েছে। এই জনপ্রিয়তা নিয়েই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যেতে চান বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এটা যেই নষ্ট করার চেষ্টা করবেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাশাপাশি এ সময়ে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তির বিএনপিতে যোগদানের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন তারেক রহমান। গত ৮ই আগস্ট এ সংক্রান্ত একটি বিবৃতি দেয়া হয়। সেখানে বলা হয়, বিএনপি এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত বিএনপি’র ওয়ার্ড থেকে জাতীয় পর্যায় এবং বিএনপি’র অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের ওয়ার্ড থেকে কেন্দ্রীয় কমিটি পর্যন্ত কোনো স্তরেরই কমিটিতে অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী বা অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে যোগদান করানো যাবে না।

বিএনপি’র সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ এবং নীতি ও আদর্শ পরিপন্থি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকার সুস্পষ্ট অভিযোগ পেলেই সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে বহিষ্কার, পদ স্থগিত এবং মামলাও করা হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছেন জাতীয় পর্যায় থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।

ওদিকে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দখলের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে জাতীয়তাবাদী যুবদলের দু’জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংগঠনটি। এর আগে তাদেরকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়।

কেন্দ্রীয় যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, অপরাধের প্রমাণ পেলে দলের নির্দেশনা অনুযায়ী শাস্তির ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আর অপরাধের মাত্রা বিবেচনা করে সংগঠনের পক্ষ থেকে মামলাও করা হচ্ছে। পাশাপাশি কোথাও কোথাও কমিটি ভেঙে দেয়া এবং পদ স্থগিত করা হচ্ছে। তবে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। চাঁদাবাজি ও দখলের অভিযোগে এ পর্যন্ত ৭ থেকে ৮ জন নেতাকর্মীকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

স্বেচ্ছাসেবকদলের সাংগঠনিক সম্পাদক নাজমুল হাসান বলেন, স্বেচ্ছাসেবকদলের কোনো নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করা হয়নি। তবে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ ৭ থেকে ৮জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এদিকে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস ও দখলের অভিযোগে ঢাকায় ছাত্রদলের এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করেছে সংগঠনটি। এসব অভিযোগে সারা দেশে প্রায় ১০০ জন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আর প্রায় ২০০ নেতাকর্মীকে শোকজ করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির বলেন, কেন্দ্রীয়ভাবে এ পর্যন্ত একজনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। যেসব কাজ করলে সংগঠন ক্ষতিগ্রস্ত হবে এবং সংগঠনের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে- এমন অপরাধে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।

news24bd.tv/তৌহিদ