শুরুতে চিকিৎসা নিলে প্রোস্টেট ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব

ফাইল ছবি

শুরুতে চিকিৎসা নিলে প্রোস্টেট ক্যান্সার নিরাময় সম্ভব

অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম

প্রোস্টেট ক্যান্সার বা মূত্রনালিতে ক্যান্সার কদাচিৎ হয়। তবে শুরুতেই শনাক্ত করে চিকিৎসা নিলে এই রোগ নিরাময় সম্ভব। লিখেছেন বাংলাদেশ ইউরোলজি অ্যান্ড ট্রান্সপ্ল্যানটেশন ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অধ্যাপক ডা. এম এ সালাম

মূত্রথলির ক্যান্সারের সঙ্গে কোনো কোনো সময় মূত্রনালির ক্যান্সার হতে পারে। বেশির ভাগ সময় স্থানীয় জায়গায় বিস্তৃত অবস্থায় ধরা পড়ে।

প্রকারভেদ
শরীরের বিভিন্ন কোষ থেকে বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হয়ে থাকে। তবে মুত্রনালিতে স্কোয়ামাস সেল ক্যান্সার (এসসিসি) ও ট্রাডিশনাল কোষের ক্যান্সারই সাধারণত বেশি দেখা যায়।
এডেনোকারসিনোমা, মেলানোমা, সারকোমা প্রভৃতি টিউমারও মূত্রনালিতে হওয়া সম্ভব। কিন্তু এ ধরনের টিউমার কদাচিৎ দেখা যায়।


 
যাদের বেশি হয়
মূত্রনালির ক্যান্সার পুরুষদের চেয়ে নারীদেরই বেশি দেখা দেয়, বিশেষ করে ষাটোর্ধ্ব নারীদের। তবে এটা যেকোনো বয়সের মানুষেরই হতে পারে।
এই ক্যান্সারের প্রায় ৬০ শতাংশ, বিশেষ করে পুরুষের ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রেই স্কোয়ামাস সেল ক্যান্সার হয়ে যায়।
 
কারণ
ঠিক কী কারণে মূত্রনালির ক্যান্সার হয় তার কারণ এখনো অজানা। প্রাথমিক ঝুঁকিপূর্ণ বিভিন্ন অঙ্গের মধ্যে মূত্রথলির ক্যান্সার, হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস ও যৌনরোগীদের এ রোগ হওয়ার প্রবণতা থাকে বেশি। তা ছাড়া ষাটোর্ধ্ব বয়সে বহুদিন ধরে মূত্রনালির প্রদাহ ও ধূমপানের কারণেও এ রোগ হতে পারে।

লক্ষণ
প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণ চোখে পড়ে না। রোগটি বাড়তে থাকলে কিছু লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন :
>মূত্রের মধ্যে রক্ত যাওয়া
>মূত্রের ধারা চিকন হওয়া ও পরিমাণ কমে যাওয়া
>ঘন ঘন প্রস্রাবের বেগ হওয়া, বিশেষ করে রাতে
>পুরুষাঙ্গ শক্ত হয়ে যাওয়া
>প্রস্রাব অজান্তে ঝরে যাওয়া
>প্রস্রাব করতে কষ্ট হওয়া
>ঘন ঘন প্রদাহ হওয়া
>মূত্রনালি থেকে রত্ত, রস ঝরা ও ফুলে যাওয়া।

পরীক্ষা
এক্স-রে, সিটি স্ক্যান, এমআরআই, ইউরেথোগ্রাফি প্রভৃতি পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে মূত্রনালির ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়।

চিকিৎসা
রোগের অবস্থা ও মূত্রনালির ঠিক কোন অংশ আক্রান্ত এর ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা দিতে হয়।

রোগীর বয়স, লিঙ্গ, রোগের বিস্তৃতির ওপরও অনেকটা নির্ভরশীল। চিকিৎসার মধ্যে সার্জারি, কেমোথেরাপি ও রেডিওথেরাপি অন্যতম। তবে প্রাথমিক চিকিৎসার মধ্যে সার্জারিই সবচেয়ে নির্ভরশীল চিকিৎসা। দীর্ঘদিন ধরে আক্রান্ত রোগীদের কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে।

শল্যচিকিৎসা
এটি রোগের অবস্থার ওপর নির্ভর করে। থেরাপি দিয়ে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে। ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়া রোগীদের ক্ষেত্রে কারো মূত্রথলিসহ মূত্রনালি ফেলে দিতে হয়। কারো কারো পুরুষাঙ্গের কিছু অংশ ফেলে দেওয়ার প্রয়োজন হয়। কারো কারো পুরুষাঙ্গ ও মূত্রনালি অপসারণ করার প্রয়োজন হয়। অবস্থাভেদে কারো লসিকাগ্রন্থিও ফেলে দিতে হয়। নারীদের মূত্রথলি, মূত্রনালি, যৌনদ্বার ফেলে দিতে হয়। মূত্রথলি ফেলে দিলে বিকল্প পথে প্রস্রাব নির্গমনের ব্যবস্থা করতে হয়। শল্যচিকিৎসা আবার কিছু জটিলতাও তৈরি করতে পারে। যেমন—অবশকরণজনিত জটিলতা, খাদ্যনালিতে প্যাঁচ লাগা, মূত্র ঝরা, রোগ সংক্রমিত হওয়া, মৃত্যুবরণ (১-২ শতাংশ)। ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে রোগটি আবার ফিরে আসতে পারে, পচন হতে পারে, মূত্রনালি সরু হতে পারে। প্রস্তুতকৃত বিকল্প পথ ছাড়া অন্য পথ দিয়ে প্রস্রাব ঝরতে পারে।

রেডিয়েশন
বিস্তৃৎত রোগীর ক্ষেত্রে এটি শল্যচিকিৎসার সঙ্গে প্রয়োগ করা হয়। শরীরের বাইরে থেকে এবং রেডিও অ্যাকটিভ বড়ি বা পিলেট ক্যান্সারের জায়গায় বসিয়ে—এই দুইভাবে রেডিয়েশন দেওয়া হয়। এটা সপ্তাহে পাঁচ দিন হিসেবে ছয় সপ্তাহ পর্যন্ত দিতে হয়।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
রেডিয়েশনের প্রভাবে সাধারণত সুস্থ কোষে আঘাতজনিত কারণে কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেমন :
>অন্য জায়গা দিয়ে প্রস্রাব ঝরা
>ত্বক জ্বলে যাওয়া
>ডায়রিয়া
>দুর্বলতা
>মূত্রথলির প্রদাহ
>খাওয়ার অরুচি
>চিকন ধারায় প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি।

কেমোথেরাপি
এটি এমন এক ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা যে ব্যবস্থায় ক্যান্সার কোষকে ধ্বংস করতে অ্যান্টি-ক্যান্সার (সাইটোটক্সিক) ড্রাগস বা ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এতে ক্যান্সারের কোষগুলোকে ধ্বংস করা যায়। এই ওষুধ সাধারণত শিরায় দেওয়া হয়। দেহের অন্য স্থানে ছড়িয়ে পড়া ক্যান্সারের চিকিৎসায় কেমোথেরাপি প্রযোজ্য।

পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কেমোথেরাপির ফলে রক্তশূন্যতা, বমি হওয়া, রুচি কমে যাওয়া, মাথার চুল পড়ে যাওয়া, মুখে ঘা হওয়া ও রোগ সংক্রমিত হওয়া প্রভৃতি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

চিকিৎসার ফলাফল
প্রাথমিক অবস্থায় মূত্রনালির ক্যান্সার নির্ণীত হলে ও শল্যচিকিৎসা গ্রহণ করলে পাঁচ বছর বাঁচার হার প্রায় ৬০ শতাংশ। রোগের পুনরাবৃত্তি হয় প্রায় ৫০ শতাংশের ক্ষেত্রে। তবে প্রাথমিক অবস্থায় শনাক্ত করে চিকিৎসা নিতে পারলে অনেক রোগীই সুস্থ হয়ে যান। তবে মূত্রনালির বিস্তৃতি ক্যান্সার চিকিৎসার ফলাফল বেশ হতাশাব্যঞ্জক। শুধু রেডিয়েশন বা কেমোথেরাপি প্রয়োগ করে এই রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না। তবে শল্যচিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে কেমোথেরাপি বা রেডিয়েশনথেরাপি অধিক কার্যকর।

news24bd.tv/health

সম্পর্কিত খবর