মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এবার কয়লার ছাই নিয়ে নয়ছয়

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎকেন্দ্র

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রে এবার কয়লার ছাই নিয়ে নয়ছয়

অনলাইন ডেস্ক

মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য কয়লা আমদানির দরপত্র প্রক্রিয়ায় অভিযোগ ওঠার পর এবার বিদ্যুৎ কেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লা থেকে উৎপাদিতব্য ড্রাই অ্যাশ (পোড়ানো ছাই) বিক্রির দরপত্রেও বড় ধরনের অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়নকারী রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (সিপিজিসিবিএল) বিরুদ্ধে। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, কয়লার ড্রাই অ্যাশ বিক্রিতে সর্বোচ্চ দরদাতাকে কাজ দেওয়ার কথা থাকলেও সর্বনিম্ন দরদাতাকে দরপত্র পাইয়ে দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন কিছ অসাধু কর্মকর্তা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রকল্পের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দরপত্র প্রক্রিয়ায় প্রাথমিক বাছাইয়ে আর্থিক বিবরণীতে স্বচ্ছতার ঘাটতি থাকায় যে কোম্পানিকে অযোগ্য ঘোষণা করা হয়, সেই প্রতিষ্ঠানকেই কাজ পাইয়ে দিতে অদৃশ্য কারণে ১০ মাস ধরে দরপত্রকে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। ’ 

জানা গেছে, দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির এক সদস্যের ছেলে ওই বিশেষ কনসোর্টিয়ামের একটি কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত আছেন।

পাশাপাশি আর্থিক সুবিধা নেওয়া সাপেক্ষে কমিটির কয়েকজন সদস্য ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতি পক্ষপাত করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, সিপিজিসিবিএলের পরিচালকের ছেলে বিভিন্ন সময় দরপত্র প্রক্রিয়ার সুবিধা গ্রহণে নিজেকে ‘বিদ্যুৎ-জ্বালানি প্রতিমন্ত্রীর আস্থাভাজন ব্যক্তি এবং প্রধানমন্ত্রীয় পরিবারের কাছের লোক’ হিসাবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এ ধরনের প্রতারণা সরকারের ভাবমূর্তিক্ষুণ্ন করছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের। গত এপ্রিলে সিপিজিসিবিএলের বোর্ড সভায় ‘বিশেষ একজন কর্মকর্তা’ কারিগরি কমিটির প্রতিবেদন আমলে না নিয়ে উক্ত কনসোর্টিয়ামকে যোগ্য ঘোষণা করতে বোর্ডকে প্রভাবিত করেন।
তবে বোর্ড এ বিষয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত না নিয়ে দরপত্র পুনঃমূল্যায়নের জন্য কারিগরি কমিটিকে নির্দেশ দেয়। ইতোমধ্যে দরপত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও গত এপ্রিল মাসে চিঠি পাঠিয়ে মেয়াদ বাড়ানোর অনুরোধ করে সিপিজিসিবিএল।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি তার প্রতিবেদন পেশ করার পরপরই অংশগ্রহণকারীদের আর্থিক প্রস্তাবনা উন্মুক্ত করার নিয়ম রয়েছে। তবে ব্যক্তিগত সুবিধা গ্রহণ করে সিপিজিসিবিএলের বিশেষ এক কর্মকর্তা সবার আর্থিক প্রস্তাবনা উন্মুক্ত না করে একটি ‘বিশেষ’ কোম্পানিকে সুবিধা দিতে প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

প্রকল্প কর্মকর্তারা জানান, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডি বিভাগের অধীন বাংলাদেশ পাবলিক প্রকিউরমেন্ট অথরিটির (বিপিপিএ) দরপত্র মূল্যায়ন ট্রাইব্যুনালের পরামর্শ না নিয়ে ওই দফতরের একজন প্রশিক্ষকের মতামত নেওয়া হয়। বিষয়টি প্রকল্পের অনুদানকারী প্রতিষ্ঠান জাইকাকেও জানানো হয়নি। ফলে ওই বিশেষ কর্মকর্তার জালিয়াতিতে পুরো দরপত্র প্রক্রিয়া প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে বলেও তারা জানান। এর আগে কয়লা আমদানির দরপত্রের প্রাথমিক শর্তানুযায়ী কমপক্ষে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন কয়লা আমদানির অভিজ্ঞতার শর্ত উল্লেখ ছিল, যা কয়লা আমদানিসংশ্লিষ্ট দরপত্রের জন্য একটি প্রাসঙ্গিক শর্ত। কিন্তু একটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে ‘অনৈতিক সুবিধা’ প্রদানের উদ্দেশ্যে ওই শর্ত শিথিল করে ১২ মিলিয়ন মেট্রিক টন লোহা, সার, কেমিক্যাল, সিমেন্ট অথবা খাদ্যশস্য আমদানির অভিজ্ঞতাকে যোগ্যতা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়, যা একটি অসম প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করে। এদিকে সম্প্রতি মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সাধারণ কিছু ‘হ্যান্ড টুলস’ আমদানিতে বড় ধরনের অনিয়মের বিষয় উঠে এসেছে। এতে ছোট ছোট পাইপ কাটার, হাতুড়ি, মেটালসহ মোট ১৯টি সাধারণ যন্ত্রপাতি কিনতে হাজার গুণ পর্যন্ত বেশি মূল্য ধরা হয়েছে। একটি পাইপ কাটারের দাম ধরা হয়েছে ৪৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা, যেটির সাধারণ বাজারমূল্য সর্বসাকল্যে ৭ হাজার টাকা। একটি হাতুড়ির দাম ধরা হয়েছে ৯১ হাজার টাকা, যেটির বাজারমূল্য ৮৩৪ টাকা। গত ৯ জানুয়ারি সিপিজিসিবিএলের অনুকূলে জার্মানি থেকে ৩৪৪.৫ কিলোগ্রাম ওজনের একটি চালান আসে। এ চালানের আমদানিমূল্য মোট ২.৭৫ কোটি টাকা, যেখানে দুটি পাইপ কাটারের দাম দেখানো হয়েছে ৯২ লাখ ৯৯ হাজার টাকা।

news24bd.tv/আইএএম