বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর কাজ শেষের দিকে, উদ্বোধন ডিসেম্বরে

যমুনা নদীর ওপর নির্মীয়মাণ ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু রেল সেতুর কাজ শেষের দিকে, উদ্বোধন ডিসেম্বরে

অনলাইন ডেস্ক

যমুনা নদীর ওপর বাংলাদেশ রেলওয়ের মেগাপ্রকল্প বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলতি বছরের ডিসেম্বরেই সেতুটির উদ্বোধন করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান জানান, এর মধ্যে ৮৭ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই বাকি কাজ শেষ হবে।

এরপর উত্তরাঞ্চলবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের এই রেলসেতু ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আশা করছি, ডিসেম্বরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ সেতুর উদ্বোধন করবেন। এ লক্ষ্য নিয়েই সব প্রস্তুতি এগিয়ে চলছে।

এর মধ্যেই যমুনা নদীর গভীরতা ও তীব্র স্রোতের সঙ্গে যুদ্ধ করে সেতুর সুপার স্ট্রাকচার স্প্যান স্থাপনের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল প্রান্তের মধ্যে সংযোগ স্থাপিত হয়েছে।

ফলে নদীর ওপর চার দশমিক আট কিলোমিটার দীর্ঘ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুটি এখন পুরোটাই দৃশ্যমান।

বর্তমানে সেতুর উভয় প্রান্তে স্টেশন আধুনিকায়ন, রেল ট্র্যাক লিঙ্কিং (সংযোগ), ব্যালান্সিংসহ (ভারসাম্য রক্ষা) নানা খুঁটিনাটি কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে।

সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসউদুর রহমান বলেন, সেতুর ওপর বসানো স্প্যানগুলো ভিয়েতনাম ও মিয়ানমার থেকে আনা বিশেষভাবে তৈরি মরিচা প্রতিরোধক স্টিলের কাঠামো দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই সেতুতে দেশে প্রথমবারের মতো ব্যবহার হচ্ছে জাপানের আধুনিক ডাইরেক্ট রেল ফ্যাসেনার প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তিতে স্প্যানের ওপর সরাসরি বসানো হচ্ছে রেল লাইন। এতে সেতুর ওপর রেললাইনের স্থায়িত্ব বাড়ার পাশাপাশি রক্ষণাবেক্ষণ খরচও কম হবে।

এদিকে উভয় প্রান্তে অর্থাৎ টাঙ্গাইলের ভুয়াপুর এবং সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদ রেল স্টেশন আধুনিকায়নসহ সেতুতে ডুয়েল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণও প্রায় শেষের দিকে।

সেতুর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রেল ট্র্যাকসহ নানা ধরনের কাজ এর মধ্যেই শতকরা ৫০ ভাগেরও বেশি শেষ হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তা সম্পূর্ণ শেষ করতে কাজ করছেন প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা।

রেলওয়ে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৮ সালে যমুনা নদীর ওপর বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সরাসরি রেল যোগাযোগ চালু হয়। তবে ২০০৮ সালে সেতুতে ফাটল দেখা দিলে কমিয়ে দেওয়া হয় ট্রেনের গতি।

বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৩৮টি ট্রেন ২০ কিলোমিটার গতিতে সেতু পার হচ্ছে। এতে সময় অপচয়ের পাশাপাশি ট্রেনের শিডিউল জটিলতা তৈরি হয়। বাড়তে থাকে যাত্রী ভোগান্তি।

সমস্যা সমাধানে সরকার যমুনা নদীর ওপর আলাদা একটি রেল সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে বঙ্গবন্ধু রেল সেতু নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্তুর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বঙ্গবন্ধু বহুমুখী সেতুর ৩০০ মিটার উজানে দেশের দীর্ঘতম ডুয়েল গেজ ডাবল লাইনের এই রেল সেতুর নির্মাণ ব্যয়ের ৭২ ভাগ অর্থ ঋণ হিসেবে দিচ্ছে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)।

জাপানের আইএইচআই, এসএমসিসি, ওবায়শি করপোরেশন, জেএফই এবং টিওএ করপোরেশন এই পাঁচটি প্রতিষ্ঠান তিনটি প্যাকেজে সেতুর নির্মাণকাজ করছে।

news24bd.tv/DHL