মসজিদপ্রেমীদের বিশেষ মর্যাদা

মসজিদপ্রেমীদের বিশেষ মর্যাদা

অনলাইন ডেস্ক

মসজিদ হল মুসলমানদের দলবদ্ধভাবে নামাজ পড়ার জন্য নির্মিত একটি ধর্মীয় স্থাপনা। শব্দটির উৎপত্তি আরবি السجود (সুজুদ) শব্দ থেকে, যার আভিধানিক অর্থ "শ্রদ্ধাভরে মাথা অবনত করা অর্থাৎ সিজদা করা। সাধারণভাবে, যে সকল ইমারত বা স্থাপনায় মুসলমানেরা একত্র হয়ে প্রাত্যহিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ (আরবি: الصلاة সালাত) আদায় করেন, তাকে মসজিদ বলে।

দুনিয়ায় আল্লাহর কিছু ঘর আছে, যেখানে মহান আল্লাহর মুমিন বান্দারা তাঁর দরবারে সিজদায় রত হয়, যেখানে মহান আল্লাহর বড়ত্ব ও মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়, যেখানে প্রতি মুহূর্তে মহান আল্লাহর রহমতের বারিধারা বর্ষিত হয়।

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদসমূহ আর সবচেয়ে খারাপ জায়গা হলো বাজারসমূহ। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪১৪)

তাই আল্লাহর নেক বান্দাকে মসজিদ সব সময় আকর্ষণ করে। তারা প্রতি মুহূর্তে মসজিদে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকে। কখন মুয়াজ্জিন আল্লাহু আকবার বলে মহান আল্লাহর ঘরের দিকে আহ্বান করে, সেই সময়ের অপেক্ষায় থাকে।

তারা মসজিদে সুখ খুঁজে পায়। আল্লাহর ঘরে প্রবেশ করলেই তাদের মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে, যা তাদের ইবাদতের একনিষ্ঠতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। মহান আল্লাহ তাঁর এই বান্দাদের কঠিন কিয়ামতের দিনও বিশেষ মর্যাদা দান করবেন।

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘যেদিন আল্লাহর (রহমতের) ছায়া ছাড়া আর কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন সাত ব্যক্তিকে আল্লাহ তাআলা তাঁর নিজের (আরশের) ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। ...(তাঁদের মধ্যে অন্যতম হলো) সে ব্যক্তি, যার অন্তর মসজিদের সঙ্গে সম্পৃক্ত রয়েছে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬০)

এছাড়া যারা মসজিদ নির্মাণে আত্মনিয়োগ করে, মহান আল্লাহ তাদের জন্য জান্নাতে সুউচ্চ প্রাসাদ নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য একটি মসজিদ নির্মাণ করে, আল্লাহ অনুরূপভাবে তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন। (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৭৩৬)

শুধু তা-ই নয়, মহান আল্লাহর বান্দারা প্রতিদিন যতবার তাদের মহান রবের ইবাদত করার জন্য মসজিদে যায়, মহান আল্লাহ প্রতিবারই তাদের জন্য জান্নাতে মেহমানদারির ব্যবস্থা করেন। মহান আল্লাহ তাঁর অনুগত বান্দাদের এভাবেই সম্মান দান করে থাকেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে বা সন্ধ্যায় যতবার মসজিদে যায়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে ততবার মেহমানদারির ব্যবস্থা করে রাখেন। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৬২) অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে পাক-পবিত্র হয়ে (অজু করে) তারপর কোনো ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য হেঁটে আল্লাহর কোনো ঘরে (মসজিদে) যায়, তার প্রতিটি পদক্ষেপে একটি করে পাপ ঝরে পড়ে এবং অপরটিতে মর্যাদা বৃদ্ধি পায়। ’ (মুসলিম, হাদিস : ১৪০৭)

সুবহানাল্লাহ! আমাদের সবার উচিত আল্লাহর ঘর মসজিদকে ভালোবাসা।

সাধ্যমতো মসজিদের খিদমত করা। নিয়মিত মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়া। সম্ভব হলে আগে আগে মসজিদে গিয়ে কিছুক্ষণ কোরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার, নফল ইবাদত ইত্যাদি করা। এতে মহান আল্লাহ ভীষণ খুশি হন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম ব্যক্তি যতক্ষণ মসজিদে নামাজ ও জিকিরে রত থাকে, ততক্ষণ আল্লাহ তার প্রতি এতটা আনন্দিত হন, প্রবাসী ব্যক্তি তার পরিবারে ফিরে এলে তারা তাকে পেয়ে যেরূপ আনন্দিত হয়। ’ (ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৮০০)

মহান আল্লাহ আমাদের সবার অন্তরে মসজিদপ্রীতি বাড়িয়ে দিন। কিয়ামতের দিন মসজিদকে ভালোবাসার কারণে যারা মহান আল্লাহর আরশের ছায়ায় আশ্রয় পাবে, আমাদের তাদের অন্তর্ভুক্ত করুন। আমিন।

লেখক: মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

news24bd.tv/DHL