বাবাকে হত্যার পেছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত থাকতে পারে: ডরিন

আনোয়ারুল আজীম আনারের সাথে তার মেয়ে ডরিন।

বাবাকে হত্যার পেছনে রাজনৈতিক চক্রান্ত থাকতে পারে: ডরিন

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

ঝিনাইদহ-৪ আসনের এমপি আনোয়ারুল আজীম আনার ভারতে ১৩ মে রাতে নিখোঁজ হওয়ার পর ঢাকাতে গিয়ে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করেন এমপি কন্যা মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন, স্ত্রী শেফালী বেগম ও পিএস আব্দুর রউফ। গত বুধবার (২২ মে) সকালে গণমাধ্যমে সংবাদ হয় ভারতের সঞ্জীভা গার্ডেনে আনারের মরদেহ উদ্ধার হয়েছে। ওই সময়ও তারা ঢাকাতে ছিলেন। শেষ পর্যন্ত ভিসা না পেয়ে কালীগঞ্জের বাড়িতে ফিরে আসেন তারা।

এমপি কন্যা ডরিন বলেন, ফ্ল্যাটের সেপটিক ট্যাংক থেকে মাংসের দলা উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানতে পেরেছি। কিন্তু খন্ডাংশ বাবার কিনা তা নিশ্চিত করেনি পুলিশ। এজন্য ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে কলকাতা যেতে হতে পারে। যদি কলকাতা পুলিশ আমাকে ডাকে তাহলে ডিএনএ টেস্টের স্যাম্পল দিতে সেখানে যাব।

আমার বাবা হত্যার সঠিক বিচার চাই। আসামি যারা রয়েছে, তাদের কঠিন শাস্তির আওতায় এনে বিচার করা হোক।

আনারের হত্যার বিচারের বিষয়টি অন্যদিকে ধাবিত করার জন্য প্রতিপক্ষরা উঠে পড়ে লেগেছে উল্লেখ করে এমপি কন্যা ডরিন বলেন, ভোটের আগে তাকে কয়েকবার চেষ্টা করেও হত্যা করতে পারেনি। এখানে রাজনৈতিক চক্রান্ত হতে পারে বলে মনে করি। হত্যার মুল পরিকল্পনাকারীকে ধরতে না পারলে সন্দেহে সঠিক ভাবে বলা যাচ্ছে না। তাদের উপরেও কেউ থাকতে পারে। আমার বাবার সম্পর্কে বিভিন্ন কথা আসছে। বিভিন্ন কথা বের করে তার ইমেজ নষ্ট করার জন্য চক্রান্ত চলছে বলে মনে করি।

গত কয়েকদিন ধরে সাধারন মানুষের মধ্যে আলোচনায় এমপি আনারের ঘনিষ্ঠ ও রাজনৈতিক কয়েকজন প্রতিপক্ষের নাম আসছে। আক্তারুজ্জামান শাহীনের সাথে তার দীর্ঘদিনের ব্যবসায়িক পার্টনার আনারের  দূরত্ব সৃষ্টি হওয়ার পেছনে অনেকগুলো বিষয় উঠে এসেছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো এমপি আনারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের সাথে শাহীনের গত কয়েক বছর ধরে সুমধুর সম্পর্ক গড়ে তোলার বিষয়টি।

এমনকি সদ্য সমাপ্ত জাতীয় নির্বাচনের দলীয় মনোনয়ন নিয়ে এমপি আনারের সাথে যাদের বিরোধিতা ছিল তাদের সাথেও শাহীন গত বছর দেড়েক ধরে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো। এদের মধ্যে অন্যতম ছিল জেলা আওয়ামী লীগের একজন শীর্ষ নেতা। তার মাধ্যমে নিজের ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়ে জেলার গুরুত্বপূর্ন দপ্তরের কাজ হাতিয়ে নিতো শাহীন।

আনারের অনুসারীরা যাকে তার প্রধান প্রতিপক্ষ মনে করেন তিনি হলেন উপজেলার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আইয়ুব হোসেন। ভারতে এমপি খুনের খবর শুনে তিনি তার ব্যবহৃত স্মার্টফোন টয়লেটে ফেলে দেন বলে এলাকায় চাউর হয়। গত ২২ মে আনারের মৃত্যুর খবর এলাকায় আসার পর উপজেলার সকল নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষ তার বাড়িতে আসতে থাকেন। কিন্তু আনারের বিরোধী শিবিরের কালীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক আইয়ুব হোসেন, সাবেক মেয়র ও আওয়ামী লীগ নেতা মোস্তাফিজুর রহমান বিজুসহ তাদের অনুসারীরা তার বাড়ির সামনে মাঝে মাঝে আসলেও বেশী সময় অবস্থান করছেন না বলে জনশ্রুতি উঠেছে।

এদিকে শাহীনের সাথে ঘনিষ্ঠতা ছিল এমপি আনারের অনুসারী ও ব্যবসার পার্টনার গোলাম রসুল ওরফে গো-রসুলের। বিশ্বস্ত একটি সূত্রের দাবী, এমপি আনারকে না জানিয়ে মাঝে মাঝে শাহীনের সাথে দেখা করতো রসুল। রসুলের বিরুদ্ধে নানা রকমের অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয়ে গোলাম রসুল জানান, এমপি আনার আমার বন্ধু। তার সুখে-দুঃখে সবসময় আমি তার পাশে থাকি। সবশেষ গেল ১২ মে ভারতে থাকা অবস্থায় আমার সাথে দীর্ঘ সময় মোবাইলে আলাপ হয়েছে।  

অপরদিকে আনারের আরেক নিকটজন শিবলী নোমানী। সম্প্রতি তিনি উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয়ী হয়েছেন। অভিযোগ রয়েছে, এমপি আনারের সোনা চোরাকারবার দেখভাল করতেন তিনি। তার সাথেও আক্তারুজ্জামান শাহীনের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। গেল রমজানে বিভিন্ন উপহার সামগ্রী নিয়ে শিবলীর সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করে গেছেন শাহীন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শিবলী নোমানী সকল অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

news24bd.tv/ab