আলিঙ্গন করে পশ্চিমা বিশ্বকে কী বার্তা দিলো জিনপিং-পুতিন?

পশ্চিমের প্রভাবমুক্ত একটি নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার সময় এসেছে

আলিঙ্গন করে পশ্চিমা বিশ্বকে কী বার্তা দিলো জিনপিং-পুতিন?

অনলাইন ডেস্ক

চীন সফর শেষে বিদায় নেওয়ার সময় শি জিনপিংয়ের সঙ্গে এমনভাবে আলিঙ্গন করেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, যাতে দেখা যায়, চীনা নেতার প্রতি তাঁর ভালোবাসার বিরল প্রকাশ। তবে এই আলিঙ্গনকে ‌‘ইচ্ছাকৃত’ ভঙ্গি বলে মনে করা হচ্ছে। এর উদ্দেশ্য ছিল- পশ্চিমা বিশ্বকে দেখানো, আগের চেয়ে জিনপিং ও পুতিন আরও কাছাকাছি। তাদের বার্তাটি হলো- পশ্চিমের প্রভাবমুক্ত একটি নতুন বৈশ্বিক ব্যবস্থার সময় এসেছে।

শুধু তাই নয়, ক্রেমলিন দেশের জনগণকেও বোঝাতে চাইছে, রাশিয়া একা নয়। রাশিয়ার আর ইউরোপের দরকার নেই।

এ বিষয়ে সিডনির লোই ইনস্টিটিউটের পূর্ব এশিয়ার সিনিয়র ফেলো রিচার্ড ম্যাকগ্রেগর বলেছেন, ‘বিদায় বেলায় ইচ্ছাকৃতভাবে আলিঙ্গন ছিল ওয়াশিংটনের দিকে ঘৃণা প্রকাশ। কারণ মস্কোর পাশ থেকে সরে যেতে বেইজিংকে চাপ দিচ্ছে ওয়াশিংটন।

দুই দিনের চীন সফরের শেষ দিন শুক্রবার পুতিন দেশটির উত্তর-পূর্বের শহর হারবিনের বাণিজ্য মেলায় যোগ দিয়েছিলেন। একই সঙ্গে সেখানকার অত্যাধুনিক প্রতিরক্ষা গবেষণার জন্য বিখ্যাত সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ও পরিদর্শন করেন রুশ নেতা। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পশ্চিমা চাপে রয়েছে রাশিয়া। কিন্তু এর মাঝেও দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক কতটা বেড়েছে- তা তুলে ধরাই ছিল এই সফরের উদ্দেশ্য। খবর- নিউইয়র্ক টাইমস ও স্কাই নিউজ।

এ ধরনের সফরের মাধ্যমে পুতিন দেখাতে চান, তাঁর শক্তিশালী বন্ধু রয়েছে। সফরের প্রথম দিন বেইজিংয়ে জিনপিংয়ের সঙ্গে আলোচনার পরই পূর্বাঞ্চলে গুরুত্বপূর্ণ এই সফরে যান পুতিন। পশ্চিমা দেশের বিরুদ্ধে দুই শক্তিশালী নেতার শুধু কৌশলগত দৃঢ় অবস্থানই নয়, তাদের মাঝে ব্যক্তিগত সম্পর্কও যে রয়েছে- এটা বোঝাতেই সফরটি এমনভাবে সাজানো হয়েছে।

চীনের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিক আলোচনার পর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সুউচ্চ প্রাচীরঘেরা বেইজিংয়ের ঝংনানহাই পার্কে হাঁটছেন দুই নেতা। এ সময় তাদের দুই দোভাষী ছাড়া আর কেউই ছিলেন না। কিছুদূর হাঁটার পর একটি জায়গায় গিয়ে বসেন দুই নেতা। এ সময় চা পান করেন তারা।  

এ সফরে যেসব বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, তারই চূড়ান্ত প্রকাশ ছিল এই সৌহার্দ্য প্রদর্শন। দুই নেতার যৌথ বিবৃতিতে যুক্তরাষ্ট্রকে উদ্দেশ করে অঙ্গীকার করা হয়েছে, রাশিয়া ও চীন জ্বালানি, মহাকাশ এবং সামরিক বাহিনীর মতো গুরুত্বপূর্ণ খাতে আরও ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করবে। এ দুই নেতাই অভিযোগ করে আসছেন, তাদের দেশের ক্ষতি করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র।

দুই পারমাণবিক অস্ত্রধারী শক্তিধর দেশের ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তা সম্পর্ক জোরদারে হারবিন সফর ছিল কেন্দ্রবিন্দু। অবশ্য চীন ও রাশিয়া সামরিক সহায়তায় একে অপরকে রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকার মতো আনুষ্ঠানিক কোনো চুক্তিতে আবদ্ধ নয়।   

চীন রাশিয়াকে প্রাণঘাতী অস্ত্র সরবরাহ করবে না বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। দেশটি সেমিকন্ডাক্টর ও মেশিন টুলের মতো উপাদানগুলোর শীর্ষ সরবরাহকারী। এসব উপাদান বেসামরিক এবং সামরিক উভয় ক্ষেত্রেই ব্যবহার করা হয়। পুতিন অবশ্য চীনের অত্যাধুনিক সরঞ্জামগুলো পেতে চান।

হারবিন ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি রকেট, ক্ষেপণাস্ত্র ও মহাকাশ প্রযুক্তির গবেষণার জন্য বিখ্যাত। এই প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা কাজে লাগিয়ে ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যাপক উপকৃত হবে রাশিয়া। কারণ, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শক্তিশালী সামরিক শিল্প কমপ্লেক্সের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। চীন ও রাশিয়ার সামরিক সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমারা উদ্বিগ্ন।  

আটলান্টিক কাউন্সিলের নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ মার্কাস গার্লাউসকাস বলেন, ‘সফরটি এত প্রকাশ্যে হয়েছে যে, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সমর্থনের জন্য বেইজিং সরাসরি সামরিক প্রযুক্তি সরবরাহ করতে ইচ্ছুক হওয়ার একটি দৃশ্যমান ও প্রতীকী চিহ্ন। ’

তবে চীনের সাবেক সামরিক কর্মকর্তা সং ঝংপিং বলেন, ‘পুতিনের ইনস্টিটিউটে সফর ছিল মূলত শিক্ষা ক্ষেত্রে রাশিয়ার সঙ্গে সহযোগিতার জন্য। চীন ও রাশিয়ার মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পর্যায়ে যোগাযোগ উভয় দেশের একাডেমিক বিনিময় ও জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। ’ 
news24bd.tv/aa