বিটিভিতে সংগীতশিল্পী তালিকাভুক্তিতে আর্থিক লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস

সংগৃহীত ছবি

বিটিভিতে সংগীতশিল্পী তালিকাভুক্তিতে আর্থিক লেনদেনের ফোনালাপ ফাঁস

অনলাইন ডেস্ক

বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) গত বছর দেড় হাজারের বেশি শিল্পী বিটিভির সংগীতশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এই তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া নিয়ে বেশ কিছু অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে, যার মধ্যে আছে আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারও। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত ফোনালাপের একটি রেকর্ড ফাঁস হয়েছে। এ ঘটনায় এক কর্মীকে সাময়িক বরখাস্তও করা হয়েছে।

তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা ও তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে।

২০২৩ সালের শেষে বিটিভিতে দুই পর্বে শিল্পী বাছাইপ্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। প্রথমে মৌখিক এবং পরে ক্যামেরায় উপস্থাপন পর্বের মাধ্যমে সারা দেশের প্রার্থীদের থেকে শিল্পী বাছাই করা হয়েছে।

গত বছর বিটিভির স্ক্রলে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে শিল্পী তালিকাভুক্তির ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল।

সংগীতের ছয়টি বিভাগ মিলে শিল্পী তালিকাভুক্তির মোট আবেদন জমা পড়েছিল ৬ হাজার ৪৭৩টি। বিপরীতে রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলসংগীত, আধুনিক গান, পল্লিগীতি এবং উচ্চাঙ্গসংগীত বিভাগে ১ হাজার ৭৬০ শিল্পীকে তালিকাভুক্তির জন্য চূড়ান্তভাবে বাছাই করা হয়। এ ছাড়া দলীয় সংগীতে ৭৬টি দলকে বাছাই করা হয়েছে। সামনে শিল্পীদের গ্রেডেশন (মান নির্ধারণ) হবে। শিগগিরই বিটিভিতে গীতিকার, অভিনয়শিল্পীসহ অন্যান্য বিভাগেও প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়া শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

সংগীতশিল্পী বাছাইপ্রক্রিয়া শেষে একটি ফোনালাপের রেকর্ড সামনে আসে। এতে একজন প্রার্থীর সঙ্গে বিটিভির এক কর্মীকে আর্থিক লেনদেন নিয়ে বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়াতে শোনা যায়। ওই কর্মী বিটিভির অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক (প্রোগ্রাম ম্যানেজার) মোল্লা আবু তৌহিদের সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটর জাহাঙ্গীর হোসেন। তিনি ফোনে ৩০ হাজার টাকা না দেওয়ায় এক প্রার্থীকে অডিশনে পাস না করানোর হুমকি দেন। একপর্যায়ে ওই প্রার্থী বিষয়টি নিয়ে মোল্লা আবু তৌহিদের সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছেন বলে কথোপকথনে উল্লেখ করেন।

ওই ফোনালাপের রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর গত ২৩ এপ্রিল জাহাঙ্গীর হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই প্রার্থী বলেন, ৭০ হাজার টাকা দেওয়ার পর বিটিভির অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক আবু তৌহিদকেও দিতে হবে জানিয়ে তার কাছে আরও ৩০ হাজার টাকা দাবি করেন জাহাঙ্গীর।

ওই প্রার্থী বলেন, ‘জাহাঙ্গীর হোসেন সত্যিই আবু তৌহিদকে এই অর্থ দেবেন, নাকি তার নাম ব্যবহার করে টাকা চেয়েছেন, তা বলতে পারব না। কারণ, লেনদেন নিয়ে আবু তৌহিদের সঙ্গে আমার সরাসরি কোনো কথা হয়নি। ’

এ বিষয়ে জানতে গত ৩০ এপ্রিল বিটিভির অনুষ্ঠান ব্যবস্থাপক মোল্লা আবু তৌহিদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘জাহাঙ্গীর হোসেনের দায়িত্বের সঙ্গে আমার কাজের সরাসরি কোনো সম্পর্ক নেই। আমার নাম ব্যবহার করা হয়েছে। একটি পক্ষ আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। ’

বিটিভি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কম্পিউটার অপারেটর জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে গত সপ্তাহে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। কমিটিকে ১০ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কর্মচারী আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাও হয়েছে।

প্রার্থী বাছাইপ্রক্রিয়ায় আর্থিক লেনদেনের প্রসঙ্গে বিটিভির মহাপরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘বাছাইপর্ব শুরুর আগমুহূর্তে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বিটিভির কোনো কর্মকর্তার হাতে নম্বর দেওয়ার সুযোগ রাখা হবে না। এ সিদ্ধান্ত কর্মকর্তাদের আগে জানানো হয়নি। সে ক্ষেত্রে প্রার্থীদের সঙ্গে কেউ কেউ আর্থিক লেনদেন নিয়ে আলোচনা করলেও করতে পারেন। ফোন রেকর্ড শুনে তেমনটাই মনে হচ্ছে। ’

news24bd.tv/DHL