প্রেমের টানে এসে প্রতারিত ভারতীয় কিশোরী

প্রেমের টানে এসে প্রতারিত ভারতীয় কিশোরী

অনলাইন ডেস্ক

প্রেমের টানে বাংলাদেশে ছুটে আসা ভারতীয় এক কিশোরীকে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা কারাবাস না দিয়ে সহজ প্রক্রিয়ায় পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ভারত পাঠিয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। জানা গেছে, প্রেমিক মন্দিরে নিয়ে তাকে বিয়ে করলেও পরে বন্দরে রেখে পালিয়ে যায়।

আজ বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) সকাল ১০ টায় বিজিবি, বিএসএফ ও পুলিশসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সদস্যদের উপস্থিতিতে বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ভারতের পেট্রাপোল ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যদের হাতে মেয়েটিকে তুলে দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সরকার ওই কিশোরীরর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা কারাবাস না দিয়ে সহজ প্রক্রিয়ায় ফেরত দিয়েছে।

এর মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে যে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন সেটি আরও জোরদার হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানায়, ৬ মাস আগে বাংলাদেশি যুবক সমর সরকারের সঙ্গে ফেসবুকে পরিচয়, পরে বন্ধুত্ব থেকে প্রেম হয় ভারতের উত্তর ২৪ পরগনার রায়গঞ্জ উপজেলার গৌলইসারা গ্রামের পিংকি দাসের (১৬)। সংসার বাঁধার আশায় পরিবারের কাউকে না জানিয়ে গত সপ্তাহে সীমান্তপথে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশ করে পিংকি।

পরে প্রেমিক সমর সরকারের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর তারা মন্দিরে গিয়ে সিঁদুর দিয়ে বিয়ে করে।

এরপর একটি বাড়িতে তারা ৩ দিন একসঙ্গে থাকে। এক পর্যায়ে মঙ্গলবার বিকেলে ছেলেটি তার এক বন্ধুসহ ওই কিশোরীকে বেনাপোলে নিয়ে যায়। পরে মেয়েটিকে বেনাপোলে রেখে কৌশলে পালিয়ে যায় তারা। পরে পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া সীমান্তে ঘোরাঘুরি করতে দেখে বিজিবি পিংকিকে উদ্ধার করে।

পরে পিংকির কথা শুনে বিজিবি মানবিক কারণে তাকে আটক করে কারাগারে না পাঠিয়ে স্বজনদের কাছে পৌঁছে দিতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের সঙ্গে আলোচনা করে। পরে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে হস্তান্তর করা হয় তাকে। সাধারণত এ ধরনের বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী কাউকে পেলে আদালতে পাঠায় ভারতীয় বিএসএফ। তবে এই কিশোরীকে দ্রুত সময়ে পরিবারের কাছে পৌঁছে দিতে বিজিবি এসব আইনি প্রক্রিয়া শিথিল করে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে বিএসএফের হাতে তুলে দেয়।

এলাকাবাসী জানায়, অবৈধ অনুপ্রবেশে যে আইনি প্রক্রিয়া তা শিথিল করে বিজিবি মানবিকতা দেখিয়েছে কিশোরীর প্রতি। ভারতে এমন অপরাধে কাউকে আটকের পর দেশে ফেরাতে অনেক সময় ২ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সময় লাগার নজির রয়েছে।

জেলের কথা শুনে যার চোখে মুখে ছিল ভীতির ছবি, দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের সহযোগিতায় স্বজনদের বুকে ফিরতে পারবে জেনে পিংকির চেহারায় এখন আনন্দের প্রতিচ্ছবি।

পিংকি বলে, ‘এভাবে আসা আমার ভুল হয়েছে। তবে প্রতারিত হওয়ার পর আতঙ্কিত ছিলাম পুলিশের হাতে ধরা বা জেল খাটা নিয়ে। বিজিবির সহযোগিতায় দ্রুত পরিবারের কাছে ফিরতে পারছি জেনে ভালো লাগছে। ’

বেনাপোল বন্দর প্যাসেঞ্জার টার্মিনালের ইনচার্জ নাহিদ ইসলাম জানান, ওই কিশোরী বুধবার (৩ জুলাই) সকাল থেকে তার হেফাজতে ছিল। সেই থেকে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছিল। পরে বৃহস্পতিবার যোগাযোগ সম্ভব হলে বিজিবি-বিএসএফের পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে ওই কিশোরীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও জানান, ওই কিশোরী নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। প্রেমের টানে অবৈধভাবে বাংলাদেশে এসেছে। তার প্রেমিক মন্দিরে নিয়ে তাকে বিয়ে করলেও পরে বন্দরে রেখে পালিয়ে যায়।

বেনাপোল বন্দর পরিচালক রেজাউল করিম বলেন, ‘গত ২৮ জুন চুয়াডাঙ্গা সীমান্তপথে অবৈধভাবে দালালের মাধ্যমে মেয়েটি বাংলাদেশ এসেছিল বলে জানতে পেরেছি। বিজিবি উদ্ধার করে বিএসএফের কাছে কিশোরীকে পতাকা বৈঠকের মাধ্যমে হস্তান্তর করেছে। দ্রুত সময়ে হস্তান্তর কেবল দুই দেশের বন্ধুত্বের কারণে সম্ভব হয়েছে। ’

news24bd.tv/তৌহিদ