এখনকার তরুণ প্রজন্ম অনেক স্মার্ট প্রজন্ম। আমরা যারা চল্লিশোর্ধ্ব তারা আছি মাঝামাঝি অবস্থানে। আমরা অনুভব করতে পারছি পরিবর্তনটা। এ পৃথিবী দ্রুত চলে যাচ্ছে নবীনদের দখলে।
আমরা অনেক পড়াশুনা করে এসেছি, এখনকার ছেলেমেয়েরা কিচ্ছু জানেনা বলে যারা বড়াই করেছি এতদিন, তাদের দিন শেষ হয়ে এলো বলে। আমরা যারা ঢাকা শহরের স্মার্ট কর্পোরেট হাউজের কোনো একটিতে চাকরি করি তারা প্রতিদিন অনুভব করি কিভাবে বদলে যাচ্ছে দিন।আমার সঙ্গে যারা কাজ করে সবার বয়স ত্রিশের নিচে কিংবা ত্রিশ ছুঁইছুঁই। তাদের কর্মদক্ষতা দেখে আমি অভিভুত হই।
আজ প্রকাশিত ফোর্বসের ৩০ আন্ডার ৩০ তালিকায় দেখলাম ৯ জন বাংলাদেশী নবীনের নাম। গর্বে বুক ভরে উঠে। এরা অনেক এগিয়ে। এমনি করেই এগিয়ে যাক আমার দেশের তরুণেরা।
বাসায় ফিরে দেখি আমাদের সন্তানেরা কতকিছু জানে, আমি চেষ্টা করেও সেগুলো আয়ত্বে আনতে পারিনা। আজকাল ব্যাংক একাউন্ট খুললেও কত রকম অ্যাপস ডাউনলোড করতে হয়, কতরকমের অনলাইন ব্যাংকিং। ডেবিট কার্ড একটিভ করতে হলেও অনেকরকম প্রযুক্তির সহযোগিতা নিতে হয়। নির্দেশনা ফলো করতে করতে ধৈর্য হারাই আমি। অথচ নবীনেরা কত সহজে, কত আগ্রহের সাথে পটাপট সব সমাধান করে। কিছুতেই পেরে উঠি না তাদের সাথে। আজকাল আর কোনো অফিস খুব অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের নিয়োগ দিতে চায় না। অভিজ্ঞতা থাকলেও তারা যে প্রযুক্তির দৌড়ে পিছিয়ে পড়বে। বরং অনভিজ্ঞ কোনো নবীণকে অল্প একটু ট্রেইনিং দিয়ে নিলেই তারা খুব দ্রুততার সাথে কাজ ধরে ফেলে।
আজকাল বাড়ির বাইরে বের হলেও নেই তেমন কষ্ট, আগে যেমন একটা সিএনজি কিংবা ট্যাক্সির অপেক্ষায় পথে দাঁড়িয়ে থাকতে হতো, এখন আর সেসব ঝামেলা নেই। বাড়িতে বসেই ট্যাক্সি, সিএনজি কিংবা গাড়ি ডেকে নেওয়া যাচ্ছে। বড়ির গেটে গাড়ি এলে পরে নিচে নামলেই চলে। প্রযুক্তি আমাদের কষ্ট অনেক কমিয়ে দিচ্ছে। শুধু আমরা যারা আধবুড়ো তারা একটু প্রযুক্তি ফ্রেন্ডলি হতে পারলেই চলবে।
আমি খুব বেশি লক্ষ্য করি নবীণদের সাথে আমাদের পার্থক্যটা। যারা এখনো বসে বসে ভাবছেন আমরা অনেক লেখাপড়া জানা প্রজন্ম, এ প্রজন্ম কিচ্ছু জানে না, তারা এসব চিন্তা ঝেড়ে ফেলে স্মার্ট হতে শিখুন। নইলে অচিরেই অনেক বেশি পিছিয়ে পড়বেন, পুরনো ধ্যান ধারনা ছেড়ে এদের সাথে তালমিলিয়ে চলতে শিখুন। অবশ্য তাল মিলিয়ে চলতেই হবে এমনটা দিব্যি কেউ দেয়নি। কারন আমাদের প্রজন্মের মানুষতো রয়েছেই। তাদের সাথে চললেই হলো।
আমি অবশ্য এই প্রজন্মের দ্বারা খুব অনুপ্রাণিত হই। তাদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে চেষ্টা করি। পিছিয়ে পড়ি যদিও। আমার চালশে, আমি চোখে আজকাল খুব কম দেখি। আর আমার কনফিডেন্ট নষ্ট করে দিয়েছে এই দৃষ্টিস্বল্পতা। প্রযুক্তি ব্যবহার করতে গেলে তো মোবাইল স্ক্রিনে তাকিয়ে থাকতে হয়। অথচ আমি চশমা ছাড়া মোবাইল স্ক্রিনে কিছুই দেখিনা। আবার চশমাতেও পুরোপুরি অভ্যস্ত হয়ে উঠতে পারিনি। একটা ভিডিও এডিট করতে গেলেও প্রয়োজন হয় খুব বেশি কন্সেন্ট্রেশন। আমার দৃষ্টিশক্তি আমার কন্সেন্ট্রেশন নষ্ট করে দেয়।
আবার সোশ্যাল মিডিয়াতে যখন এই প্রজন্মের নানা রকম নেগেটিভ কমেন্ট কিংবা ট্রোলিং দেখি তখন যে হতাশ হই না তা নয়। কিন্তু ভাবি যে অলস কিছু তরুণ যাদের আসলেই কোনো কাজ নেই তারা বসে বসে এসব করছে। কিন্তু এই নষ্টদের এক অংশওতো নানা রকম ভিডিও তৈরি করে কত শত বৈদেশিক মুদ্রা ঘরে আনছে। বৈধ উপায়ে যদি নিজেদের ক্রিয়েটিভিটি কাজে লাগিয়ে নিজে রোজগার করে স্বচ্ছল জীবনযাপন করতে পারে তাহলে আর নষ্ট থাকলো কই! তৈরি করুক যত ফানপোস্ট। সবসময় সিরিয়াস টাইপের কাজই করতে হবে এমন কথা কে বলেছে? ফানও তো জীবনে প্রয়োজন আছে। বলতে গেলে রঙ্গ রসিকতা খুব বেশি প্রয়োজন আছে জীবনে। ফানি কিছু দেখে যদি দু’মুহূর্ত প্রাণ খুলে হাসতে পারি ক্ষতি কি। আর আমার হাসির কারনে যদি কোনো ভ্লগার লক্ষ টাকা রোজগার করে জীবনে সাচ্ছন্দ্যে আনতে পারে ক্ষতি তো নেই কিছু।
এগিয়ে যাক প্রযুক্তি, এগিয়ে যাক আমার দেশের তরুণেরা। তোমরা এগিয়ে গেলেই এগিয়ে যাবে দেশ।
news24bd.tv/ডিডি