যে কারণে বিবাদ মীমাংসায় সবচেয়ে বেশি পুণ্য

যে কারণে বিবাদ মীমাংসায় সবচেয়ে বেশি পুণ্য

 মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ

সমাজে বসবাস করতে গেলে ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের মধ্যে কখনো কখনো পারস্পরিক ভুল-বোঝাবুঝি, মন-কষাকষি বা ঝগড়া-বিবাদ হতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে তৃতীয় একটি পক্ষ এগিয়ে এসে তাদের মধ্যকার বিবাদ মিটিয়ে দিতে হবে। এটা তার ঈমানি দায়িত্ব। মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুমিনরা পরস্পর ভাই ভাই।

সুতরাং তোমাদের ভাইদের মধ্যে মীমাংসা করে দাও। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। আশা করা যায়, তোমরা রহমতপ্রাপ্ত হবে। ’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ১০)

মুমিনরা দ্বন্দ্বে জড়ালে অন্যদের উচিত দ্রুত তাদের মধ্যে সমাধান করে দেওয়া।

কিছুতেই বিরোধ উসকে দেওয়া যাবে না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিনদের দুই দল দ্বন্দ্বে লিপ্ত হলে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেবে...। ’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৯)

দাম্পত্য জীবনে আপস নিষ্পত্তি : পবিত্র কোরআনে অশান্তিময় দাম্পত্য জীবনের সমস্যাগুলো পারস্পরিক আপস নিষ্পত্তির মাধ্যমে সমাধান করার কথা বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘কোনো নারী যদি তার স্বামীর পক্ষ থেকে দুর্ব্যবহার বা উপেক্ষার আশঙ্কা করে, তবে তারা পরস্পর মীমাংসা করে নিলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। আর আপস নিষ্পত্তিই উত্তম...। ’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১২৮)

বিবাদ মেটানো সর্বাধিক পুণ্যময় কাজ : বিবাদরতদের মধ্যে মীমাংসা করে দেওয়া অনেক বড় ফজিলতের বিষয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের রোজা, নামাজ ও সদকা থেকেও উত্তম বিষয় সম্পর্কে বলব না? সাহাবিরা বলেন, আল্লাহর রাসুল! অবশ্যই বলুন। তিনি বলেন, বিবাদরতদের মধ্যে মীমাংসা করা। আর জেনে রেখো, পরস্পর বিবাদ মানুষের দ্বিন-ধর্ম মুণ্ডিয়ে দেয়। (তিরমিজি, হাদিস : ২৫০৯)

কেননা সামান্য ভুলভ্রান্তির কারণে মানুষের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা মারাত্মক আকার ধারণ করে। তাই দ্রুত বিবাদ নিষ্পত্তি করে ফেলা জরুরি।

বিবাদ মীমাংসায় মিথ্যা কথা বলা : মহানবী (সা.) ঝগড়া-বিবাদ নিরসনের লক্ষ্যে প্রয়োজনে যৎসামান্য মিথ্যা বলার অনুমতি দিয়েছেন। যেমন তিনি বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের মধ্যে আপস-মীমাংসা করে দেয়, সে মিথ্যাবাদী নয়। বস্তুত সে ভালো কথা বলে এবং উত্তম কথাই আদান-প্রদান করে। (বুখারি, হাদিস : ২৬৯২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) আরো বলেন, তিনটি ক্ষেত্র ছাড়া মিথ্যা বলা জায়েজ নয়—১. কোনো ব্যক্তি তার স্ত্রীর সঙ্গে (স্ত্রীকে খুশি করার জন্য) কথাবার্তা বলার সময়; ২. যুদ্ধের ময়দানে এবং ৩. মানুষের মধ্যে মীমাংসা করার জন্য। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩৯)

বিবাদ পরিহারকারীর জন্য জান্নাত : ন্যায়ের ওপর থাকা সত্ত্বেও কেউ যদি এই কাজটা করতে পারে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন। এক হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তি ন্যায়ের ওপর থাকা সত্ত্বেও বিবাদ পরিহার করে, তার জন্য জান্নাতের মধ্যে একটি ঘর তৈরি করা হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৯৩)

মহান আল্লাহ আমাদের আমল করার তাওফিক দান করুন।

এই রকম আরও টপিক