তেঁতুলিয়ার বৃহৎ মরিচ-সুপারির হাটে বেচা কেনা বন্ধ

সংগৃহীত ছবি

অতিরিক্ত খাজনা ও বাড়তি কেনার অভিযোগ

তেঁতুলিয়ার বৃহৎ মরিচ-সুপারির হাটে বেচা কেনা বন্ধ

পঞ্চগড় প্রতিনিধি

পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার শালবাহান হাটে মরিচ ও সুপারি কেনা বেচা বন্ধ করেছে চাষি ও ব্যবসায়িরা। উপজেলার এটি সর্ববৃহৎ হাট। প্রতি হাটে প্রায় ৩ থেকে ৪ কোটি টাকার মরিচ ও সুপারি কেনা বেচা হয় এই হাটে। চাষি ও ব্যবসায়িদের অভিযোগ, ইউনিয়ন পরিষদ থেকে হঠাৎ খাজনার পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়ার কারণে লোকশান গুণতে হচ্ছে তাদের।

এতে বিপাকে পড়েছে চাষি এবং ক্ষুদ্র ব্যবসায়িরা।

উপজেলার শালবাহান হাট জেলার বেশ কয়েকটি বৃহৎ হাটের মধ্যে একটি। এই হাটে মরিচ, সুপারি, ভ’ট্টা, শাক সবজি, ধান, পাটসহ নানা ফসল কেনা বেচা করেন চাষি এবং ব্যবসায়িরা। সপ্তাহের শনিবার ও বুধবার দেশের নানা প্রান্ত থেকে ব্যবসায়িরা এসে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করেন এই হাটে।

 
বুধবার শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদ মরিচ ও সুপারীতে খাজনা আদায়ের পরিমান বাড়িয়ে দেয়। হঠাৎ করে নতুন খাজনা নির্ধারণের প্রতিবাদে মরিচ ও সুপারি ব্যবসায়িরা কেনা বেচা বন্ধ করে দেয়।

জানা গেছে, উপজেলার প্রায় ৫০ হাজার চাষি এই হাটে নানা ফসল কেনা বেচা করেন। এদের মধ্যে মরিচ ও সুপারি চাষি রয়েছেন প্রায় ১০ হাজার। সুপারি ও মরিচ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন ৫ হাজার ক্ষুদ্র, মাঝারী ও বৃহৎ ব্যবসায়ি।  

চাষিরা বলছেন, একদিকে প্রতি কেজিতে ৫ টাকা করে খাজনা নির্ধারণ করেছে ইউনিয়ন পরিষদ। তাই ব্যবসায়িরা মরিচ ও সুপারি কেনা বন্ধ করেছে। অন্যদিকে ব্যবসায়িরা প্রতিমণ মরিচে এক কেজি করে বেশি নিচ্ছেন। ফলে লাভের থেকে লোকশান হচ্ছে চাষিদের। তারা মরিচ বিক্রী না করতে পেরে বিপাকে পড়েছেন।

রওশনপুর গ্রামের মরিচ চাষি আবু তালেব জানান, একটি মরিচের গাছের পেছনে খরচ পড়ে ১৫ থেকে ২০ টাকা। তারপর প্রতি কেজিতে গান্ডি দিতে হয় ৫ টাকা। ব্যবসায়িরা প্রতিমণে অতিরিক্ত নেয় ১ কেজি। তাহলে আমরা যাবো কোথায়। আমাদের তো লোকশান হচ্ছে। এই রোদে পুড়ে মরিচ চাষ করে কি লাভ হলো। সার কিটনাশক, শ্রমিকের মুজুরি সব বেড়ে গেছে। আজ মরিচ বিক্রী করতে পারলাম না। এখন আমি বাড়ির জন্য বাজার করবো কি দিয়ে। শ্রমিককে টাকা দেবো কিভাবে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে আমরা মাঠে মারা যাবো।

ব্যবসায়িরা বলছেন, জেলা প্রশাসন থেকে ২০২৩ —২০২৪ সালে খাজনা নির্ধারণ করে দিয়েছে ৩ টাকা। কিন্তু জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্তকে তোয়াক্কা না করে ইউনিয়ন পরিষদ একতরফা ভাবে খাজনা আদায় করছে।

মরিচ ব্যবসায়ি আমজাদ হোসেন জানান, অন্য কোন হাটে এতো বেশি খাজনা আদায় করা হয়না। আগে আমরা ট্রাক প্রতি ২’শ টাকা খাজনা দিতাম। এখন প্রতি বস্তায় ৩০ টাকা নির্ধারন করা হয়েছে। সেই অনুযায়ি খাজনা দিলে এখন প্রতি ট্রাকে ৬ হাজার টাকা খাজনা দিতে হবে। আমরা তো লাভ করতে পারবোনা। তাই মরিচ কেনা বন্ধ করেছি।

তিনি বলেন, সব হাটেই চাষিদের কাছ থেকে মন প্রতি অতিরিক্ত ১ কেজি করে নেয়া হয়। কারণ অনেক সময় তারা পঁচা মরিচ দেয়।

এদিকে ইউনিয়ন পরিষদ কতৃপক্ষ বলছে, কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ি খাজনা বাড়ানো হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয়েছে। ৪ নং শালবাহান ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আশরাফুল ইসলাম জানান, খাজনার পরিমান বেশি হয়েছে এই অভিযোগ ব্যবসায়িরা এখনো করেনি। তারা বললে ব্যবস্থা নেবো। কিন্তু চাষিদের কাছ থেকে প্রতি মণে অতিরিক্ত ১ কেজি করে বেশি নিচ্ছে এমন অভিযোগ পেয়েছি।

এদিকে হাটের এই পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করার জন্য হাট পরিদর্শন করেছেন তেঁতুলিয়া উপজেলার সহকারি ভূমি কমিশনার মাহবুবুল আলম। তিনি বলেন, ইউনিয়ন পরিষদ কতৃপক্ষ সম্ভবত ভুল করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিষয়টি পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আপাতত তিনি আগের নির্ধারিত খাজনাই আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন।

news24bd.tv/DHL