সূরা বাকারাহ’র প্রথম আয়াত হচ্ছে কয়েকটি অক্ষরের সমষ্টি। কয়েকটি অক্ষর দিয়ে শুরু হওয়ায় এই সূরার প্রতি সবার দৃষ্টি একটু অন্য রকম। কয়েকটি অক্ষর নিয়েই একটি শব্দ হয় এবং শব্দের নির্দিষ্ট অর্থ থাকে। অর্থহীন অক্ষর সমষ্টিকে শব্দ বলা হয় না।
الم (1)
আলিফ-লাম-মিম (২:১)
এ ধরনের ভঙ্গিমা আরবী ভাষায় সম্পূর্ণ নতুন এবং নজীরবিহীন। কোরআন বিশ্লেষকগণ একে "হরুফে মুকাত্বায়া" বলেন।
এই সূরার দ্বিতীয় আয়াতে বলা হয়েছে,
ذَلِكَ الْكِتَابُ لَا رَيْبَ فِيهِ هُدًى لِلْمُتَّقِينَ (2)
"এটি সেই গ্রন্থ যাতে কোন সন্দেহ নেই এবং খোদা ভীরু পরহেজগারদের জন্য এটি পথ নির্দেশক। " (২:২)
অতীতের সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হলো বই বা কিতাব। বর্তমান যুগের মানুষের জন্য এ বই নিরব ভাষায় সর্বোৎকৃষ্ট ভাব ও জ্ঞান পৌঁছে দেয়। কোরআন কোন গ্রন্থ আকারে নাযিল হয়নি। কিন্তু রাসূলে খোদা (সা.) ঐশী বাণীকে যে কোন বিকৃতির হাত থেকে রক্ষা করার জন্যে, তাঁর ওপর যা কিছুই অবতীর্ণ হতো, তা-ই পড়ে শোনাতেন। লেখকরা তা লিখে নিত এবং অনেকেই মুখস্ত করে নিত। মানুষ যদি এই ঐশী গ্রন্থ অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে পড়ে, বিষয়বস্তু উপলদ্ধি করে, তাহলে বিশ্বাস করতে বাধ্য হবে যে এই কিতাব আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। কোন মানুষের পক্ষে এ ধরনের বক্তব্য পেশ করা সম্ভব নয়।
যেমনটি আমরা কোরআনের আলো অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে বলেছি,পবিত্র কোরআন মানুষকে সৌভাগ্য ও সফলতার দিকে পরিচালিত হওয়ার সব উপায় বলে দিয়েছে। কাজেই যে ব্যক্তি সফলকাম হতে চায় তাকে অবশ্যই স্রষ্টার কাছ থেকে প্রেরিত দিক নির্দেশনার শরণাপন্ন হতে হবে। যে সব জিনিস তার দেহ কিংবা মনের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো থেকে দূরে থাকতে হবে। সূরা বাকারাহ'র ১৮৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন- "পবিত্র কোরআন মানুষকে পথ প্রদর্শনের জন্য নাযিল করা হয়েছে। " তবে এটা অত্যন্ত স্পষ্ট যে, এ ঐশী গ্রন্থ থেকে কেবলমাত্র তারাই উপকৃত হবে, যারা সত্যকে বুঝতে চায় এবং সত্যকে গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত থাকবে। গোঁড়া ও সংকীর্ণমনা ব্যক্তিরা কখনও সত্যকে গ্রহণ করতে চায় না। সত্য তাদের কাছে প্রমাণিত হলেও তারা তা অস্বীকার করে। কোরআনের শিক্ষা তাদের কোন উপকারে আসে না। কাজেই কোরআনের পথনির্দেশনা তাদের মধ্যেই প্রভাব বিস্তার করে,যাদের মনে খোদা ভীতি রয়েছে। সুতরাং এ আয়াতে বলা হয়েছে-"কোরআন খোদা ভীতি ও পরহেজগার লোকদের জন্য পথ নির্দেশক। "
আরও পড়ুন
করোনা মহামারিতে কুরবানি ও ইসলামি শিক্ষা
জলবায়ু-করোনার প্রভাব মোকাবিলায় অতিরিক্ত তহবিলের ব্যবস্থা করা উচিত
গ্রাহকের শত শত কোটি টাকা নিয়ে কি করেছে ইভ্যালী?
করোনা নিয়ন্ত্রণে বিএনপির ৫ দফা প্রস্তাব
এবারে দেখা যাক এ আয়াতে কী কী শিক্ষণীয় বিষয় আছে-
প্রথমত: রাসূলে খোদা (সা.) এর সহচররা পবিত্র কোরআন লেখা এবং এর রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে ভীষণ সতর্ক ছিলেন। কাজেই আল্লাহর কাছ থেকে অবতীর্ণ আয়াতগুলো এখন গ্রন্থাকারে আমাদের মাঝে রয়েছে। এ ঐশী গ্রন্থের পবিত্রতা রক্ষার দায়িত্ব আমাদের সবার।
দ্বিতীয়ত: পবিত্র কোরআন মানব জাতির পথ প্রদর্শক। এটি বিশেষ কোন শ্রেণীর মানুষের জন্য অবতীর্ণ হয়নি। কাজেই পবিত্র কোরআনে পদার্থ বিদ্যা, রসায়ন কিংবা গণিতের বিষয়বস্তু খোঁজা অর্থহীন।
তৃতীয়ত: পবিত্র কোরআনের জ্যোতি কেবল তখনই আমাদের অন্তরকে প্রভাবিত করবে যখন আমরা সত্যকে গ্রহণ করার জন্য তৈরী হব। মাটি কিংবা ময়লার মধ্যে আলোর বিকিরণ ঘটেনা, আলো কেবল স্বচ্ছ আয়নার মধ্যেই প্রতিফলিত হয়।
news24bd.tv এসএম