কেন গণপিটুনি থামানো যাচ্ছে না, আইনে শাস্তি কী?

গণপিটুনি

কেন গণপিটুনি থামানো যাচ্ছে না, আইনে শাস্তি কী?

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বেশ কয়েকটি গণপিটুনির ঘটনা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

কখনও বিগত সরকারের কর্মী-সমর্থক সন্দেহে কখনও বা ধর্ম অবমাননার অভিযোগে আবার কখনও চুরির সন্দেহে এসব গণপিটুনির ঘটনা ঘটেছে যেখানে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে।

মানবাধিকার কর্মীদের দাবি, পুলিশের দুর্বলতা এবং তদন্তে ঘাটতির কারণে এসব গণপিটুনি থামানো যাচ্ছে না।

অন্যদিকে, পুলিশ প্রতিটি ঘটনা গুরুত্ব সহকারে নিয়ে বিচারের ‌আওতায় আনার আশ্বাস দিয়েছে।

কাউকে কেবল সন্দেহের বশে অপরাধী বলে তাৎক্ষণিক জনমত তৈরি করা এবং পরে গণপিটুনি দিয়ে হতাহত করা বাংলাদেশে নতুন কোনো ঘটনা নয়।

সবশেষ বুধবার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল নামে এক ব্যক্তিকে গণপিটুনি এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদকে গণপিটুনির ঘটনা নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

এর আগে ৭ই সেপ্টেম্বর রাতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদ গণপিটুনিতে নিহত হন।

এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে একাধিক গণপিটুনির ঘটনায় হতাহত হওয়ার খবর প্রকাশ হয়েছে।

বেশিরভাগ ঘটনায় মামলা দায়ের হলেও আলোচনায় না আসলে পুলিশের তেমন তৎপরতা থাকে না। সেই মামলার তদন্ত বিচার ঝুলে থাকে বছরের পর বছর।

২০১৯ সালের ২০শে জুলাই সকালে বাড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে তাসলিমা বেগম রেণু নামে এক নারীকে গণপিটুনি দেয়ার ঘটনা বেশ আলোচিত হলেও এখন পর্যন্ত ওই হত্যা মামলার নিষ্পত্তি হয়নি।

সংবিধানে মানবাধিকার নিশ্চিত করা হলেও দেশের প্রচলিত আইন ও তদন্ত ব্যবস্থায় গণপিটুনিতে শাস্তি নিশ্চিত করা বেশ কঠিন।

এ কারণে গণপিটুনিতে অংশ নেয়ার অপরাধে বাংলাদেশে কারো দণ্ড হওয়ার নজির বাংলাদেশের আদালতে বিরল বলে মনে করেন মানবাধিকার কর্মীরা।

সাম্প্রতিক গণপিটুনির যেসব ঘটনা আলোচনায়

বুধবার রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ব্যক্তির ভাত খাওয়ার ছবি ছড়িয়ে পড়ে। ছবিতে থাকা ব্যক্তির নাম তোফাজ্জল এবং ছবিটি ধারণের কিছুক্ষণ পর তাকে পিটিয়ে মারা হয়।

ঘটনাটি ঘটেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক মুসলিম হলে। বুধবার ওই ব্যক্তিকে চোর সন্দেহে আটক করে গণপিটুনির দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, রাত সাড়ে আটটা/নয়টার দিকে দিকে ফজলুল হক হলের শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জল হোসেনকে চোর সন্দেহে আটক করে গেস্টরুমে নিয়ে যায়।

সেখানে তাকে রাত ১০টা পর্যন্ত কয়েক দফা মারধর করা হয়। একপর্যায়ে ক্যান্টিনে বসিয়ে ভাত খাইয়ে ছবি ধারণ করা হয়।

এরপর আবার তার ওপর চলে পাশবিক নির্যাতন। রাত ১২টার দিকে মুমূর্ষু অবস্থায় কয়েকজন শিক্ষার্থী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ঢাকা মেডিকেল কলেজের পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মো. ফারুক বিবিসি বাংলাকে জানান, হাসপাতালে নিয়ে আসলে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জানা যায়, তোফাজ্জল মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। ক্যাম্পাসে চলাফেরা থাকায় হলে ঢুকে পড়েছিলেন তিনি।

বুধবার রাতেই সাভারের একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শামীম আহমেদ।

সেদিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে গণপিটুনির শিকার হয়ে গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, বুধবার বিকেলে তিনি ক্যাম্পাসে গেলে একদল শিক্ষার্থী তাকে ঘিরে ধরে পেটায়।
খবর পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আহত শামীমকে নিরাপত্তাকর্মীদের সহায়তায় নিরাপত্তা শাখায় নিয়ে যায়। সেখানেও উত্তেজিত শিক্ষার্থীরা আবারও তাকে মারধর করে।

পরে প্রক্টরিয়াল টিম তাকে উদ্ধার করে গুরুতর আহত অবস্থায় পুলিশের কাছে সোপর্দ করে। তাকে সাভার গণস্বাস্থ্য হাসপাতালে ভর্তি করে পুলিশ। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

এর আগে গণপিটুনিতে আহত অবস্থায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আব্দুল্লাহ আল মাসুদের যন্ত্রণায় কাতরানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

ওই ভিডিওতে দেখা যায় তিনি অস্ফুট স্বরে বলছেন, ‘স্ত্রীর জন্য ওষুধ নিতে এসেছিলাম ভাই। আমি ছাত্রলীগ করতাম ওই জন্য ধরেছে। আমি পাঁচই আগস্ট মেডিকেলে ছিলাম। আমার পা ২০১৪ সালে কেটেছে ভাই। রগ-টগ সব কাটা ভাই। আমি তো অনেক দিন আগে থেকেই ছাত্রলীগ করা বাদ দিয়েছি ভাই। ’

গত ৭ই অগাস্ট রাত ১০টার দিকে রাজশাহী বিনোদপুর বাজারে ওষুধ কিনতে যাওয়ার সময় তিনি গণপিটুনির শিকার হন।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে প্রথমে মতিহার থানায় পরে বোয়ালিয়া থানায় পুলিশে সোপর্দ করা হয়। বোয়ালিয়া থানায় মেঝেতে শুয়ে থাকা অবস্থায় মাসুদের বক্তব্য ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল।

তার শারীরিক অবস্থা দেখে পরে সেনাবাহিনীর সদস্যরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে কন্যা সন্তানের বাবা হয়েছিলেন মাসুদ।

দশ বছর আগের এক হামলায় পা হারিয়েছিলেন তিনি। স্থানীয় সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ২০১৪ সালের ২৯শে এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিপক্ষ ছাত্র সংগঠনের সদস্যরা তার হাত ডান পায়ের গোড়ালি বিচ্ছিন্ন করে ফেলে, বাম পাও মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার হাতের রগও কেটে দেয়া হয়।

কেন গণপিটুনির এই প্রবণতা?

গুজব বা জনমনে ক্ষোভের উদ্রেকের কারণে গণপিটুনি দিয়ে হত্যা করার ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়।

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, গত পাঁচই অগাস্টের পর বগুড়া, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম, খুলনা, মিরসরাই, যাত্রাবাড়ী, টঙ্গী, রাজশাহী এবং বরিশালে গণপিটুনির ঘটনায় ২১ জন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে।

প্রকৃত সংখ্যা এর চাইতে আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য মতে, দেশে গত সাড়ে ছয় বছরে গণপিটুনিতে কমপক্ষে ২৮৬ জনকে হত্যা করা হয়েছে।

এর কোনোটিতে ছেলেধরা বা ডাকাত সন্দেহে, আবার কোনো কোনো ঘটনায় চোর সন্দেহেও পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা ঘটেছে।

অধিকাংশ ঘটনায় হত্যা মামলা হলেও শাস্তি হওয়ার সংখ্যা খুবই কম।

গুম হওয়া ব্যক্তিদের তথ্য সংগ্রহে গঠিত তদন্ত কমিশনের সদস্য ও মানবাধিকার কর্মী নূর খানের মতে, রাষ্ট্রব্যবস্থা পুরোপুরি পুনর্গঠন না হওয়ায় দুষ্কৃতকারীরা সুযোগ নেওয়ার অপচেষ্টা করছে।

মি. খান বলেন, “গত ১৫/১৬ বছর মানুষ স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের দ্বারা নানাভাবে নিপীড়িত হয়েছিল। এতে সব ধরনের মানুষদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ জমা ছিল। ৫ই অগাস্টের পরবর্তী সময়ে মব জাস্টিসের মতো নানা সহিংসতার মাধ্যমে সেই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে যা কোনভাবেই কাম্য নয়। ”

এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাদের এমন অপকর্ম থেকে দলীয় কর্মীদের বিরত রাখতে কঠোর বার্তা দেয়া জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

“এখন জরুরি হলো জনগণের মধ্যে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে যেন স্বৈরশাসনের পুনরাবৃত্তি না হয়। অপরাধীকে শাস্তি দেয়ার এখতিয়ার শুধুমাত্র বিচার ব্যবস্থার, আর কারো নয়,” তিনি বলেন।

পাশাপাশি সর্বস্তরের নাগরিকদেরও এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখার তাগিদ দিয়েছেন তিনি যেন প্রত্যেকে যার যার অবস্থান থেকে এ ধরনের সামাজিক অপরাধ নিয়ন্ত্রণে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখে।

পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা

সাম্প্রতিক এমন সহিংস পরিস্থিতির পেছনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করছেন মানবাধিকার কর্মীরা।

মি. খানের মতে, গত ১৫ বছরে প্রশাসন এতোটাই আজ্ঞাবহ ও ঠুনকো হয়ে পড়েছে যে এখন এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করার জন্য পুলিশের যতটা তৎপর হওয়ার দরকার ছিল, সেখানে দুর্বলতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে ভয় পাচ্ছে, কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা কালক্ষেপণ করছে, যথাযথভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না।

তাই অনেকেই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে এবং মানুষের মধ্যে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।

এক্ষেত্রে পুলিশকে যতো দ্রুত সম্ভব কার্যকর করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

“পুলিশকে সমাজের জন্য দরকার, এজন্য যা যা করার করতে হবে, পুলিশকে সেই সাহস দিতে হবে, আস্থায় আনতে হবে। তারা জনগণকে রক্ষা করার যে ব্রত নিয়েছে সেই দায়িত্বে তাদের ফেরাতে হবে,” তিনি বলেন।

এক্ষেত্রে তিনি পুলিশকে এলাকাভিত্তিক অনুসন্ধান করে গণপিটুনিসহ সামাজিক অপরাধে জড়িতদের শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার পরামর্শ দিয়েছেন।

পুলিশে ব্যাপকভাবে বদলির ঘটনাও বর্তমান সহিংস পরিস্থিতির বড় কারণ বলে তার ধারণা।

তার মতে, সাম্প্রতিক বদলির কারণে ঢাকার বাইরের পুলিশের ঢাকায় এবং ঢাকার পুলিশ বাইরে নিযুক্ত হচ্ছে। এ কারণে তারা নতুন এলাকায় অপরাধের প্যাটার্ন ধরতে পারছেন না, ওই এলাকা সম্পর্কে ধারণা অর্জন করতে, পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করতে সময় লাগছে। মধ্যবর্তী সময়ে এ ধরনের অপরাধের আশঙ্কা বেড়ে যায় বলে তিনি জানান।

গণপিটুনি নিয়ে সংবিধান ও আইনে কী বলা আছে?

বাংলাদেশে সংবিধানে, অপরাধী-নিরপরাধী নির্বিশেষে প্রতিটি নাগরিককে আইনের আওতাও বিচার লাভ এবং আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া হয়েছে।

সংবিধানের ২৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রের সকল নাগরিক আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী।

অনুচ্ছেদ ৩১ বলছে আইনানুযায়ী ব্যতীত এমন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে না যাতে কোনো ব্যক্তির জীবন, স্বাধীনতা, দেহ, সুনামে বা সম্পত্তির হানি ঘটে।

অনুচ্ছেদ ৩৩ অনুযায়ী একজন ব্যক্তির অবশ্যই তার মনোনীত আইনজীবীর সাথে পরামর্শ এবং নিজেকে সমর্থন করার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ ৩৫ অনুযায়ী অর্থাৎ, আইনের দৃষ্টিতে অপরাধী প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না এবং অপরাধের জন্য যতটুকু শাস্তি প্রাপ্য তার চেয়ে বেশি বা ভিন্ন কোনো শাস্তি দেয়া যাবে না।

এছাড়া ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৯ ধারা অনুযায়ী, অপরাধী ধরা পড়লে তাকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করতেই হবে। এর ব্যতিক্রম করলে দণ্ডবিধির ১৮৭ ধারা অনুযায়ী অনূর্ধ্ব ছয় মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

আটক রাখার পর যদি ওই ব্যক্তিকে যদি সামান্য আঘাতও করা হয় তাহলে ৩১৯ ধারায় উল্লিখিত আঘাতের অপরাধে অপরাধীকে ৩২৩ ধারার অধীনে এক বছরের সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ড অথবা ১০০০ টাকা জরিমানা করা যাবে।

যদি পিটুনি দেয়া হয় তবে কারাদণ্ডে মেয়াদ বেড়ে গিয়ে দাঁড়াবে অনূর্ধ্ব তিন বছর এক মাসে। সেইসাথে অনূর্ধ্ব ৫০০ টাকা জরিমানা দিতে হবে।

যদি ইচ্ছাকৃতভাবে গুরুতর আঘাত দেয়া হয় তবে ৩২৫ ধারার অধীনে সাত বছর পর্যন্ত সশ্রম বা বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা যায়।

এছাড়া দণ্ডবিধির ৩৩৫ ধারা অনুযায়ী কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড উভয় দণ্ডেও দণ্ডিত হতে পারেন আঘাতকারীরা।

হামলা চালানোর ফলে যদি ব্যক্তির মৃত্যু হয় তাহলে দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারা অনুযায়ী দশ বছরের কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ডের সাজা দেয়া যায়।

আর যদি অপরাধীকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে মেরে ফেলার বিষয়টি প্রমাণিত হয় তবে শাস্তি হলো যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা অনূর্ধ্ব দশ বছর মেয়াদের যে কোনো কারাদণ্ড এবং অর্থদণ্ড।

গণপিটুনিতে ওই ব্যক্তি নিহত হলে দণ্ডবিধির ৩৪ ধারা অনুযায়ী গণপিটুনিতে অংশ নেয়া সব ব্যক্তি সমানভাবে এজন্য দায়ী হবে।

কেননা আইনে 'যৌথ দায়িত্বশীলতা' বলে একটি নীতি আছে। সেখানে বলা হয়েছে, একই অভিপ্রায় নিয়ে একাধিক ব্যক্তি কোনো অপরাধ সংঘটন করলে, তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তি এমনভাবে দায়ী হবেন যেন তিনি নিজেই অপরাধটি করেছেন।

এর মানে গণপিটুনিতে যারাই অংশ নেবেন সেটা আদালতে প্রমাণ করা গেলে সবারই শাস্তি নিশ্চিত করার সুযোগ আছে। এক্ষেত্রে কেউ বড় ধরনের জখম করলেও যে শাস্তি পাবেন, একজন সামান্য ধাক্কা দিলেও একই শাস্তির আওতাভুক্ত হবেন।

এছাড়া গণপিটুনিতে যদি কেউ মারা যায় আর সেটা যদি খুন হিসেবে আদালতে প্রমাণ করা যায় তাহলে দণ্ডবিধি- ১৮৬০ এর ২৯৯ ধারায় উল্লিখিত খুনের অপরাধে অপরাধীকে ৩০২ দ্বারার অধীনে মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডিত করা যায়।

সে হিসেবে আদালতে গণপিটুনিতে হত্যা প্রমাণিত হলে আইনানুযায়ী সবারই ন্যূনতম দণ্ড হবে 'যাবজ্জীবন কারাদণ্ড'।

এদিকে ২০১৯ সালে বাড্ডায় গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম রেণু হত্যার পর আইনজীবী ইশরাত হাসানের দায়ের করা একটি রিটের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আদালত গণপিটুনি রোধে পাঁচ দফা নির্দেশনা প্রদান করেন।

১. পুলিশের প্রত্যেক সার্কেল অফিসার তার অধীনের প্রতিটি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে ছয়মাসে অন্তত একবার গণপিটুনি প্রবণতার বর্তমান অবস্থা নিয়ে বৈঠক করবেন।

২.গণপিটুনির বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তার প্রচার কার্যক্রম গণমাধ্যমে প্রচারণা অব্যাহত রাখবে।

৩. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যেকোনো ধরনের অডিও, ভিডিও, মেসেজ যা গুজব সৃষ্টি বা গণপিটুনিতে মানুষকে উত্তেজিত করতে পারে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা বন্ধের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। যে দুষ্কৃতকারীরা একাজে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৪. যখনই গণপিটুনির কোনো ঘটনা ঘটবে, কোনো রকম দেরি না করে তখনই থানার ওসি এফআইআর নিতে বাধ্য থাকবেন এবং তা সংশ্লিষ্ট পুলিশ সুপারকে অবহিত করবেন।

৫. গণপিটুনিতে তাসলিমা বেগম হত্যার ঘটনায় ঢাকা জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তর বাড্ডা প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের অবহেলার ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।

এক্ষেত্রে পঞ্চম দফার নির্দেশনা শুধু তাসলিমা বেগম রেণু হত্যার ঘটনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। বাকি চারটি নির্দেশনা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তথা পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট যার তিনটি প্রতিরোধমূলক এবং একটি প্রতিকারমূলক।

news24bd.tv/আইএএম

এই রকম আরও টপিক