বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় তোফাজ্জেল

চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাসুদ কামাল তোফাজ্জল

বাবা-মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় তোফাজ্জেল

বরগুনা প্রতিনিধি: 

গ্রামের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায় জানাজা শেষে বাবা- মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন মাসুদ কামাল তোফাজ্জল।  শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে বরগুনা পাথরঘাটার তালুক গ্রামের পারিবারিক কবরস্থানে বাবা, মা ও ভাইয়ের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন তিনি।

এর আগে শুক্রবার সকাল নয়টায় স্থানীয় মাদরাসা মাঠে তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তোফাজ্জলের জানাজায় মানুষের ঢল নামে।

এ সময় তারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।  

চার বছর আগে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। বাবা, মা, ভাই, বোন কেউ না থাকায় তোফাজ্জলের সুচিকিৎসার ব্যবস্থাও হয়নি। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ার কারণে বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়াতেন তোফাজ্জল।

স্থানীয়রা জানান, মেধাবী তোফাজ্জল হোসেন একসময় ছাত্র রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলী ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন তিনি। পড়াশোনা করতেন পাথরঘাটা কলেজে। স্থানীয়দের কাছে অত্যন্ত সজন, পরিচ্ছন্ন ও বিনয়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তোফাজ্জেল। কিন্তু হঠাৎ করেই তার পরিবারে নেমে আসে একের পর এক স্বজন হারানোর বেদনা। আট বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তার বাবা।  

এরপর স্থানীয় এক মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের বিচ্ছেদ হওয়াকে কেন্দ্র করে তিনি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। চার বছর আগে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার মা। মা হারানো শোকে মানসিক সমস্যা আরও বৃদ্ধি পায় তোফাজ্জলের।  

এরপর তোফাজ্জলকে সুস্থ করতে চিকিৎসার উদ্যোগ নেন পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক পদে কর্মরত তার একমাত্র বড় ভাই। এরই মধ্যে হঠাৎ করে লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তার বড় ভাইও। তাই বাবা, মা, ভাই, বোনহীন হয়ে পড়ায় তোফাজ্জলের আর চিকিৎসা হয়নি। এরপর থেকেই তার ভবঘুরে জীবন শুরু হয়।

তোফাজ্জলকে মাঝে মাঝে পাথরঘাটা দেখা গেলেও অধিকাংশ সময় তিনি থাকতেন লাপাত্তা। তবে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাকে দেখেছেন পাথরঘাটার অনেকে। কখনও উদোম শরীরে, আবার কখনও নোংরা পোশাকে তাকে দেখা যেত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও। পরিচিত কেউ তাকে দেখলে খাবার কিনে দিতেন। আবার কারো কারো কাছ থেকে টাকা নিয়েও তিনি খাবার কিনে খেতেন।

মানসিক ভারসাম্যহীন তোফাজ্জলকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নির্মম নির্যাতন করে মেরে ফেলায় ক্ষুব্ধ পাথরঘাটার স্থানীয় বাসিন্দারা। তাদের দাবি, খুনি কখনও মেধাবী হতে পারে না। অপরাধীর পরিচয় শুধু অপরাধীই। তাই তারা তোফাজ্জলকে নির্যাতনকারী সকলের শাস্তির দাবি করেছেন।

news24bd.tv/কেআই