তামান্না সুলতানা তুলির তিনটি কবিতা

 তামান্না সুলতানা তুলি

কবিতা

তামান্না সুলতানা তুলির তিনটি কবিতা

 তামান্না সুলতানা তুলি

নিঃসঙ্গ ক্যালেন্ডার

সব একাকিত্বের ঘোর মানষের দিকে যাবে

পত্র-পল্লবে সর্বনাশ মানুষের দিকে যাবে

মানুষ মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ক্রমাগত নিঃসঙ্গ

কতবার পালাতে চেয়েছি ঘোর কেটে

পাতার কফিন থেকে উঠে মানুষের সমুদ্রে

পালাতে চেয়েছি জনহীন চিৎকার কেটে

বিস্মৃতির কাফন ছেড়ে তাদের দিকে

মানুষ মানুষের দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে ব্যক্তিগত ঘোরে

মরে আছে

সমস্ত নৈঃশব্দ ফিরে আসে একান্ত ঘোরে

পত্র-পল্লবে সর্বনাশ আসে আমার নিঃসঙ্গ ক্যালেন্ডারে ।

দেইনি  কখনও বিদায় সংবর্ধনা

ভালোবাসার অদ্ভুত সব রং থাকে

অদ্ভুত কিছু সুগন্ধ

যেমন আপনি সামনে দিয়ে় চলে গেলে জারবেরা ডেউজি গুলো মাল্টিকালার রংধনুতে ভরে যায়

মগ্ন চৈতন্যে ভেসে আসে একের পর এক দুষ্প্রাপ্য সুগন্ধি-

জানেন ?

অন্য কিছু আর হয়নি দেখা

বলা হয়নি অন্য কোন গল্প

ডাকিনি আর দীপ্যমান দিনের প্রখর অর্ক

চাইনি ডাকুন আপনি

ভাবিনি আমরা দেখি স্বপ্ন

তবুও তীব্র সম্মোহনে আপনারই চশমার গ্লাসে বারবার ভেসে উঠে আমার সবুজ উপত্যকা।

আপনার কাঁধ ছুঁয়ে যে প্রজাপতি উড়ে আসে আমার কাধে, ফুল হয়ে ফুটে থাকে স্নিভলেস বাহুতে আর আপনি ঠোঁটের কোণে বিবর্ণ হাসিতে ফুটে থাকেন টকটকে লাল পলাশের দুঃখ!

আপনার চোখ, হ্যাঁ আপনারই চোখ আমার বিষণ্ণ উপত্যকা। অসমান পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে বারোমাসি ফুলের মৌসুম, আপনি বৃষ্টি হলেন, তুমুল বর্ষা, উত্তাপ-গ্রীষ্ম, হিম! আমার নেশা।

এমন এক মুগ্ধতা ধরেন, বারবার নীলকণ্ঠ আমি তুলে নেই বিষের পেয়ালা

আপনি সেই অচ্ছুত আগুন যে আগুনে পুড়ছে আমার

ঈশান অগ্নি নৈঋত বায়ু-দশদিক

স্কুল বালিকার টিফিনবক্স থেকে খোলা চত্বরে আপনি দুর্মর আহ্বান

যখন তাকাই পরিচিত মুখগুলো শুধু অপরিচয়ের আপনিতে ভাস্বর হয়ে যায়

এই যে কলম হাতে চুপচাপ বসে থাকার শূন্যতা অথবা আপনি ফেরালেন না মুখ, তারপরেও শুনছি আপনাকে

মধ্যমার আংটি দেখছি, দেখছি ব্লাকবেরি টি-শার্ট

কণ্ঠের ওঠা-নামা, আবেগ চেপে ভুল হিসাবের মানুষের বালকগন্ধা ঠোঁট

আপনি বলছেন যেনো, তলিয়ে যাচ্ছে আমার সমুদ্র

আপনি বললেই অশান্ত গর্জন, শীর্ণার বাঁকে বাঁকে স্রোতের আনাগোনা

স্তুতি নয়, বন্দনা নয় , আপনি অশেষ বিস্ময় আমার বিস্মৃতিপরায়ন মন মর্নিং গ্লোরি থেকে নাইট কুইনে শুধুই মনে রাখে ভুলে যাওয়া মানুষটাকে

আপনি মানুষ, মিত্র ?

কেমন আপনি জানিনি

রাখিনি ঠিকানা

ভুলেও বলিনি আবার আসবেন

দেইনি কখনও বিদায় সংবর্ধনা।

পুষ্পে পত্রে রঙ্গীন আপনি, তবুও ঝলমলে রোদ ভেঙ্গে ঝাপসা বৃষ্টি হয়ে আসেন, আমার মেঘ ভ'রে যায় হাজার হাজার রংয়ে।

আপনি ফেরালে মুখ পৃথিবীর সমস্ত গোলাপ বঞ্চিত করে আমার চোখ শুধু সেদিকেই ছুটে যায়-

ভালোবাসার রংগুলো আপনারই মতো, সুগন্ধীতে মিশে থাকে আনাচ কানাচ!

যতবার চোখ রেখে যাই আপনি স্বপ্নে আসেন

মায়া কাননের অসীম রংয়ের ফুল।

সমস্ত গোলাপ ফুটে ফুটে, চিবুক ও বুক সমান্তরাল হয়ে যাওয়ার নাম আপনি -

আপনি জানেন

জানেন

জানেন!

তোমারও অধিক অন্ধকার

তোমার দিকে যাচ্ছি ভিজে যাচ্ছে হাওয়া।

পেছনে ছুটছে ট্রাইবাল রমনীর বেহুশ রাত।

মহুয়ার রাত থেকে সংক্ষিপ্ত আলোর মহাদেশে গোপন বাদকের আঙ্গুলের সংঘাতে ত্রিতালে মিশছে সোম।

তোমার দিক থেকে আসছে নরম বর্ষা, বৃষ্টির সিম্ফনি; সুমেরুর রাত প্রবেশ করছে সবুজ শেকড়ে-

তোমার দিকে যেতে যেতে তোমারও অধিক অন্ধকার দেখছি না কোথাও।

news24bd.tv/ডিডি 

সম্পর্কিত খবর