কোটা আন্দোলনের আড়ালে কুচক্রী মহলের উদ্দেশ্য ও একটি পর্যালোচনা

কোটা আন্দোলনের আড়ালে কুচক্রী মহলের উদ্দেশ্য ও একটি পর্যালোচনা

অনলাইন ডেস্ক

জনসাধারণের দাবির সঙ্গে বর্তমান সরকারের একমত হওয়া এবং সরকারের ইতিবাচক উদ্যোগের কারণেই ২০১৮ সারের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরির ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড পর্যন্ত চাকরির বিদ্যমান কোটা পদ্ধতি বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। এর বিরুদ্ধে হাইকোর্টে রিট করা হলে গত ৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ সালের পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে পূর্বের মতো কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হয়। এ রায় স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে, যা গত ৯ জুন চেম্বার আদালতে ওঠে।

চেম্বার আদলত রায় স্থগিত না করে আবেদনটি আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির জন্য দিন দেয় ৪ জুলাই। গত ৪ জুলাই আপিল বিভাগ ওই আবেদনটি গ্রহণ না করে হাইকোর্টের রায়ের কপি পেলে পূর্ণাঙ্গ আপিল আবেদন করতে বলেন। এর ফলে আপিল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কোটা পদ্ধতি পুনর্বহাল হয়। এরপর থেকেই দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে সড়ক অবরোধসহ কোটাবিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়, যা বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
 

সম্প্রতি কোটা আন্দোলনকারীদের উত্থাপিত দাবিদাওয়ার প্রতিও সরকার একমত পোষণ করে বিধায় আন্দোলনকারীদের পক্ষে কোটা সংস্কার ইস্যুতে বিচার বিভাগের কাছে জোরালোভাবে সুপারিশ পেশ করেন, যার ফলাফল ইতোমধ্যে জনসাধারণের কাছে সুস্পষ্ট।  

তথাপিও, কোটা আন্দোলন নিয়ে কতিপয় কুচক্রীমহলের ইন্ধনে কিছু সংখ্যক ছাত্রনামধারী ব্যক্তিবর্গের অসৎ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের তরুণ সমাজ তথা সাধারণ ছাত্র ছাত্রীর সরলতাকে পূঁজি করে কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই আন্দোলনকে প্রসারিত করছে। সার্বিক প্রেক্ষাপট নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হয় যে, এই কুচক্রী মহলের কোটা আন্দোলনের আড়ালে অন্য কোন অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। কারো প্ররোচনায় প্রভাবিত না হয়ে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ে একটু মনোযোগ দিলে ঘটনার সত্যতা এবং বাস্তবতা জনসাধারণের নিকট আরও সুস্পষ্ট হবে।  

যেমন, বর্তমানে আন্দোলন সমর্থনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে অর্ধেকের বেশিই নারী। বিদ্যমান নারী কোটা না থাকলে নারীর ক্ষমতায়নে নিঃসন্দেহে তারা পিছিয়ে পড়বে। সুতরাং কোটা আন্দোলনে যেসব নারীরা রয়েছে তাদের এ বিষয়ে বোঝা উচিত। ন্যূনতম নারী কোটা না থাকলে দেশের উয়ন্ননের অগ্রযাত্রায় নারীদের ভূমিকা নিঃসন্দেহে হ্রাস পাবে। এ বিষয়ে মাত্র তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ক্যাডারের উত্তীর্ণ নারী প্রার্থীর পরিসংখ্যান পর্যালোচনা করলে বিষয়টি আরও সুস্পষ্ট হবে।

 ৪০ তম বিসিএস পরীক্ষায় পুলিশ ক্যাডারে ৫টি জেলা (জয়পুরহাট, বগুড়া, গাজীপুর, ফরিদপুর ও চট্টগ্রাম) হতে একজন করে নারী প্রার্থী এবং খুলনা জেলা হতে দুইজন নারী প্রার্থী (সর্বমোট ৭ জন) উত্তীর্ণ হলেও ৫৮টি জেলার কোনো নারী প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়নি।  

৪১তম বিসিএস পরীক্ষায় ৪টি জেলা (ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, শরীয়তপুর ও ফেনী) হতে একজন করে নারী (সর্বমোট ৪ জন) পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হলেও ৬০টি জেলার কোনো নারী প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়নি।  

৪৩ তম বিসিএস পরীক্ষায় ৭ টি জেলা (কুড়িগ্রাম, পাবনা, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, মুন্সীগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও খাগড়াছড়ি) হতে একজন করে নারী প্রার্থী এবং চট্টগ্রাম জেলা হতে দুই জন নারী প্রার্থী (সর্বমোট ৯ জন) পুলিশ ক্যাডারে উত্তীর্ণ হলেও ৫৭টি জেলার কোনো নারী প্রার্থী উত্তীর্ণ হয়নি।

এছাড়া সামাগ্রিকভাবে পুলিশ ক্যাডারে নারী এবং পুরুষের জেলাভিত্তিক পরিসংখ্যান আজ ১৪ জুলাই  প্রকাশিত দৈনিক সমকালের একটি প্রতিবেদনেও বিষয়টি আরও সুষ্পষ্ট হয়। সুতরাং কোটা না থাকলে দেশের অধিকাংশ জেলা পিছিয়ে পড়বে এবং তারা উন্নয়নের সড়কেও শামিল হতে পারবেনা। কোটা প্রথা বহাল থাকা অবস্থার চেয়ে কোটা প্রথা বাতিলের পর বিসিএস পরীক্ষায় ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী প্রার্থীর উত্তীর্ণের সংখ্যা যথেষ্ট হ্রাস পেয়েছে, যা নিচের ছক পর্যালোচনা করলে সুস্পষ্ট হবে।

২০১৮ সালের কোটাবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের মধ্যে একজনও সরকারি চাকরিতে যোগদান (বিসিএস) পরীক্ষায় কেউ উত্তীর্ণ হতে পারেনি এবং এরাই বর্তমান আন্দোলনকারীদের উসকে দিচ্ছে এবং নিশ্চয় কোনো অসৎ উদ্দেশ্যকে বাস্তবায়নের জন্য চলমান কোটা আন্দোলনকে যে ব্যানার হিসেবে ব্যবহার করছে, তা সম্পূর্ণরূপে বোধগম্য। উল্লেখযোগ্য এবং পরিচিত কিছু নাম বিস্তারিতসহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো:

বিশ্বায়নের এই যুগে অন্যান্য দেশের সাথে তুলনা করলে দেখা যায় যে, প্রতিটি দেশেই বাংলাদেশের অনুরূপ বিভিন্ন শ্রেণি এবং অঞ্চলভিত্তিক কোটা রয়েছে। তাই কোটাপ্রথা সম্পূর্ণরূপে বাতিল করা হলে রাষ্ট্র নিঃসন্দেহে উন্নতির ধারাবাহিকতা থেকে অনেক পিছিয়ে পড়বে, যা কোনো জনগোষ্ঠীর জন্যই শুভকর নয়।

এই রকম আরও টপিক