আব্বাস-খোকার সাম্রাজ্যে ধস, দৃশ্যপটে হাওয়া ভবন (দ্বিতীয় পর্ব)

সংগৃহীত ছবি

আব্বাস-খোকার সাম্রাজ্যে ধস, দৃশ্যপটে হাওয়া ভবন (দ্বিতীয় পর্ব)

রবিউল হাসান

বিএনপিতে চলছে কমিটি ভাঙা-গড়ার খেলা। দৃশ্যত একে স্বাভাবিক রদবদল মনে হলেও আদতে দলে শুদ্ধি অভিযান চালাচ্ছেন তারেক রহমান। বিএনপি সূত্র বলছে, মোটাদাগে তিন কারণে 'প্রভাবশালী'দের বাদ দেয়া হচ্ছে গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে। তার মধ্যে, সরকারি সংস্থার সাথে সম্পর্ক, আর্থিক কেলেঙ্কারি, আন্দোলনে নিষ্ক্রিয়তা ও সিন্ডিকেট ঘিরে ব্যস্ততা।

চলতি বছরের ১৪ জুন গভীর রাতে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল মহানগরের চারটি আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত করেছে বিএনপি। পাশাপাশি বাতিল করা হয় যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটি। একই রাতে ছাত্রদলের ঢাকা মহানগরের চারটি কমিটিও বিলুপ্ত করা হয়। এর একদিন পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির ৪৩টি পদে বড় রদবদল করা হয়।

যেখানে অনেক প্রভাবশালী নেতার ঠাঁই হয় উপদেষ্টা কাউন্সিলে। অন্তত ১০ নেতাকে পদাবনতি দেয়া হয়। অবশ্য পদোন্নতি দেয়া হয় অনেক নেতাকে।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নিউজটোয়েন্টিফোরকে বলেন, 'এটা বড় দলে রদবদল হওয়াটা স্বাভাবিক সাংগঠনিক কাজ। দলীয় প্রধান তার গঠনতান্ত্রিক ক্ষমতা বলে কাউকে কাজের জন্য পুরস্কৃত করেছেন, আবার কাউকে দায়িত্ব থেকে সরিয়েছেন'।

আরও পড়ুন: আব্বাস-খোকার সাম্রাজ্যে ধস, দৃশ্যপটে হাওয়া ভবন (প্রথম পর্ব)

বিএনপির একজন প্রভাবশালী নেতা জানান, জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন এমন নেতাদের এবার মহানগর কমিটিতে বিবেচনা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিবেচনা নেয়া হচ্ছে না দলের 'প্রভাবশালী' সিনিয়র নেতাদের সুপারিশ। বরং হাওয়া ভবন ঘনিষ্ঠ রকিবুল ইসলাম বকুল, বেলায়েত হোসেন, গিয়াস উদ্দিন মামুন, নূর উদ্দিন অপুদের আশীর্বাদে বিএনপি'র নেতা নির্বাচিত হয়। তছনছ করে দেয়া হয়েছে মিজানুর রহমান মিনু, বহিষ্কৃত নজরুল ইসলাম মঞ্জু, মজিবুর রহমান সারোয়ার, ডা. শাহাদাত হোসেন, বহিষ্কৃত মনিরুল হক সাক্কুসহ একসময়ের তুখোড় নেতাদের বাগান। বিএনপির রদবদল নিয়ে আজ থাকছে শেষ পর্ব

★যুবদলে 'সারপ্রাইজ', বাদ পড়েছেন পরীক্ষিতরা
চার মহানগরের সাথে যুবদলের কেন্দ্রীয় কমিটিও বাতিল করা হয়। এক দশক ধরে রীতি হওয়া যুবদলের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না'র 'সভাপতি' হওয়ার পথে বাঁধ সাধেন মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আপন ভাগ্নে হওয়ার পরও মোনায়েম মুন্না'র বিরুদ্ধে সিনিয়রদের সাথে অসদাচরণ ও আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ আনেন বিএনপির প্রভাবশালী সিনিয়র নেতা মির্জা আব্বাস। বরং শীর্ষ পদের জন্য প্রস্তাব করেন হাবিবুর রশিদ হাবিবের নাম। কিন্তু মুন্না সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বকালে দীর্ঘদিন কারাগারে থাকায় সেই আপত্তি টেকেনি। সেই ত্যাগ ও হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠদের 'বিশেষ আগ্রহে' সভাপতি হোন মোনায়েম মুন্না।

তবে সাধারণ সম্পাদক হওয়া নুরুল ইসলাম নয়ন ছিলেন সব 'বিতর্কের' ঊর্ধ্বে। তিনি ২৮ অক্টোবরের পর প্রায় প্রতিদিন যুবদলের দক্ষিণের আহ্বায়ক খন্দকার এনামুল হক এনামের সাথে রাজপথে 'ঝটিকা' মিছিল করেন। তবে ঘোষিত ছয় সদস্যের কমিটির বাকীদের নিয়ে উঠেছে বিস্তর অভিযোগ। সিনিয়র সহ-সভাপতি রেজাউল করিম পল ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিল্লাহ হোসেন গেলো কয়েক বছর কবে কোথায় দলের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন কেউ সেই তথ্য দিতে পারেনি। পলের কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রিক নিজস্ব বলয় থাকলেও বিল্লাল হোসেন দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে ঠিকঠাকভাবে পরিচিত নন।

ছাত্রদলের ঢাকা মহানগর পশ্চিমের কমিটি বিক্রির অভিযোগে অভিযুক্ত কামরুজ্জামান জুয়েলকে করা হয়েছে সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি রুহুল কবির রিজভীর অনুসারী।

অথচ বিলুপ্ত কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মামুন হাসানের বিরুদ্ধে বিগত দিনে তিন শতাধিক মামলা, সাত মামলায় ১৭ বছরের সাজা ছাড়াও পুরো পরিবার নির্যাতনের শিকার। সাবেক সহ-সভাপতি এসএম জাহাঙ্গীরও এক বছরের বেশি জেলে ছিলেন। তাঁর বিরুদ্ধে ৩২৭টি নাশকতার মামলা। দুই মামলায় সাজা হয়েছে প্রায় দশ বছর। সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ইসহাক সরকারের বিরুদ্ধেও তিন শতাধিক মামলার মধ্যে ১০ মামলায় ২১ বছরের সাজাপ্রাপ্ত হয়েছেন। এরইমধ্যে পদ না পেয়ে ইসহাক সরকার রাজনীতি ছাড়ার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন অনুসারীদের।

যুবদলের দক্ষিণের সাবেক আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহীন কারাবন্দী ছিলেন প্রায় এক বছরের মতো। তাঁকেও বিবেচনা করা হয়নি শীর্ষ ছয় পদে। বাদ পড়েছেন যুবদলের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টন। এসব নেতার ঢাকা মহানগর কেন্দ্রিক বৃহৎ বলয়ের পাশাপাশি কর্মীবান্ধব নেতা হিসেবেও অবস্থান রয়েছে। বিগত দিনের কমিটিতে ঢাকার স্থানীয় কিংবা মহানগরের নেতাদের মূল্যায়নের পাশাপাশি ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি-সাধারণ সম্পাদককে সামনে নিয়ে আসা হতো। এবারের কমিটিতেই তার ব্যতিক্রম ঘটেছে। যদিও এসব বিষয়ে সংগঠনের কোনো পর্যায়ের নেতাকর্মীরা আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দিতে রাজি হননি।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী নিউজটোয়েন্টিফোরকে বলেন, 'কমিটি করলে বিতর্ক হবেই, যাকে দিয়েই কমিটি করা হোক। বাদ পড়ারাও এক সময়ে দায়িত্ব সামলেছেন। দল সবার খোঁজ রাখে। এখন এক সংগঠনে পায় নাই, আরেকটায় পাবে'।

হাওয়া ভবনের ঘনিষ্ঠদের একটি সূত্র জানায়, যুবদলের মামুন হাসান ও এসএম জাহাঙ্গীরকে মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক করা হবে। এই দুই নেতাই ঢাকা-১৬ ও ঢাকা-১৮ আসনের বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী। এরইমধ্যে এসএম জাহাঙ্গীর ধানের শীষ প্রতীকে একবার নির্বাচন করেছেন। তারা যুবদলের নেতা হলেও বয়স ৬০ ছুঁই ছুঁই।

বিএনপির ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু নিউজটোয়েন্টিফোরকে বলেন, 'নতুন কমিটির কাছে প্রত্যাশা একটাই, কর্মসূচি দিলে তারা যেন মাঠে থাকে। নিজেদের নেতৃত্ব মিছিল-মিটিং সফল করে'। তবে কমিটি নিয়ে গণমাধ্যমে কথা বলতে রাজি হননি মির্জা আব্বাস।

★পুনর্গঠন হচ্ছে অন্যান্য অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনও
শিগগিরই বিলুপ্ত করা হচ্ছে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় কমিটি। এছাড়া মেয়াদোত্তীর্ণ মহিলা দল ও শ্রমিক দলেরও কমিটি পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।

news24bd.tv/FA

এই রকম আরও টপিক