ব্যবসায়ীর যে আচরণ আল্লাহ পছন্দ করেন

ব্যবসায়ীর যে আচরণ আল্লাহ পছন্দ করেন

 জাওয়াদ তাহের

আমাদের সবার প্রতিদিন কিছু না কিছু লেনদেন হয়। বাজারে গেলে ক্রয়-বিক্রয় হয়। একেক ক্রেতা ও বিক্রেতা একেক ধরনের। স্বভাবের মাঝে সাধারণত তারতম্য হয়েই থাকে।

এই লেনদেনের ক্ষেত্রে ইসলামের অন্যতম একটি সৌন্দর্য হচ্ছে নম্রতা।

সাধারণত ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে ক্রয়-বিক্রয়ের সময় দর-কষাকষি হয়। এ ক্ষেত্রে উভয়ের মধ্যে অনেক সময় মনোমালিন্য হয়, কিংবা একে অন্যের প্রতি অবিশ্বাস তৈরি হয়। অথচ এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে শরিয়ত নম্রতা ও সদ্ব্যবহার করার আদেশ দিয়েছেন। এই নম্রতার মাধ্যমে উভয়ের মধ্যে ভালোবাসা ও ভ্রাতৃত্বের বন্ধন তৈরি হবে। হাদিসে এসেছে, যারা ক্রয়-বিক্রয়ে নম্রতা অবলম্বন করবে আল্লাহ তাআলা তাদের প্রতি অনুগ্রহ করবেন। একটু চিন্তা করুন তো, যদি আমি আমার এই ব্যবসা-বাণিজ্যে নম্রতা অবলম্বন করি, তাহলে আল্লাহ তাআলা স্বয়ং আমার প্রতি দয়া করবেন।

এটি আমার জন্য কত বড় নিয়ামত। আল্লাহর রহমত ছাড়া আমরা তো কোনো কিছু করতে পারব না। কিন্তু ব্যবসা-বাণিজ্যে একটু সতর্কতা আমার জীবন আল্লাহর রহমতে ঢেকে থাকতে পারে। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ক্রয়-বিক্রয় ও পাওনা আদায়ে নম্র ব্যবহার করে, আল্লাহ তাআলা তার ওপর রহম করেন। ’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯৪৬)

ক্রয়-বিক্রয়ে নম্রতার যেমন পরকালীন উপকার আছে, তেমনিভাবে জাগতিকভাবেও এর লাভ রয়েছে। ব্যবসা-বাণিজ্যে যারা নম্রতা অবলম্বন করে, মানুষের সঙ্গে সুন্দর আচরণ করে, তারা বাণিজ্যিকভাবেও অনেক লাভবান হয়। তাদের কাছেই ক্রেতা ভিড় জমায়। কারণ সুন্দর ব্যবহার সবার কাছেই পছন্দনীয়।

দেখুন, আমরা যদি প্রত্যেকেই বিষয়টি এভাবে চিন্তা করি তাহলে কতই না সুন্দর হয়। ব্যবসায়ী বা বিক্রেতা যদি চিন্তা করে, ক্রেতা না থাকলে তো আমার আয়-উপার্জন বন্ধ হয়ে যাবে। এসব ক্রেতার মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা আমাকে রিজিকের ব্যবস্থা করেন। তাই তাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার না করে সুন্দর আচরণ করা কর্তব্য। যদি কোনো বিক্রেতা এই মনোভাব লালন করে, তাহলে অবশ্যই সে ক্রেতাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করবে।

অন্যদিকে ক্রেতাও যদি এভাবে চিন্তা করে যে এই বিক্রেতা আমাদের জন্য কষ্ট করে পণ্য সরবরাহ করে। তারা যদি না থাকত বা এই পণ্যের ব্যবস্থাপনা না করত, তাহলে আমরা সহজেই তা সংগ্রহ করতে পারতাম না। তারা আমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী, আমাদের কল্যাণকামী। তাদের সঙ্গে কোনোভাবেই মন্দ ব্যবহার করা উচিত নয়। তারা আমাদের উপকার করে, আমরা কিভাবে তাদের সঙ্গে মন্দ ব্যবহার করব! ক্রেতারা যদি এভাবে চিন্তা করে তাহলে উভয়ের মাঝে নম্রতা ও ভদ্রতার সুন্দর চিত্র ফুটে উঠবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের এভাবে চিন্তা করার তাওফিক দান করুন।

লোক দেখানো নামাজির ব্যাপারে কোরআনে যা বলা হয়েছে

নিয়তের অসততা ইবাদতকে ত্রুটিযুক্ত করে ফেলে। আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ইবাদত করার মাধ্যমে নিয়ত ত্রুটিযুক্ত হয়। যেমন—মানুষের প্রশংসা, সামাজিক প্রভাব ও কারো দৃষ্টি আকর্ষণ ইত্যাদির মোহে ইবাদত করা। ইসলামী পরিভাষায় একে ‘রিয়া’ এবং বাংলা ভাষায় লোক দেখানো বা প্রদর্শনপ্রিয়তা বলা হয়।


প্রতিদিন পাঁচবার নামাজ পড়া ফরজ। কিন্তু যথাযথভাবে নামাজ না পড়লে নামাজ কবুল হয় না। কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থায় নামাজ আদায় করা জরুরি। এর ব্যত্যয় ঘটলে হিতেবিপরীত হতে পারে।

অর্থাৎ নামাজ কোনো কোনো ব্যক্তিকে জাহান্নামে নিয়ে যেতে পারে। যারা লোক দেখানো নামাজ পড়ে, তাদের নামাজ কবুল হয় না। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সুতরাং ধ্বংস সেসব নামাজির জন্য, যারা তাদের নামাজ সম্পর্কে উদাসীন—যারা লোক দেখানোর জন্য তা করে। ’ (সুরা মাউন, আয়াত : ৪-৬)
লোক দেখানো নামাজ মুনাফিকদের নামাজ।

যেমন—মহান আল্লাহ অন্য আয়াতে বলেন, ‘নিশ্চয়ই মুনাফিকরা আল্লাহকে ধোঁকা দেয়, আর তিনিও তাদের ধোঁকায় ফেলেন। ওরা যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন অলসভাবে দাঁড়ায়—লোক দেখানোর উদ্দেশে। আর তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। ’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৪২)
পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ লোক দেখানো ইবাদত থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘...যে ব্যক্তি তার রবের সঙ্গে সাক্ষাতের আশা রাখে, সে যেন সৎ কাজ করে এবং তার রবের ইবাদতে কাউকে অংশীদার না করে। ’ (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ১১০)

রাসুল (সা.) রিয়া বা লোক দেখানো আমলকে ছোট শিরক বলেছেন। তিনি বলেন, ‘আমি তোমাদের ব্যাপারে ছোট শিরক নিয়ে যত ভয় পাচ্ছি, অন্য কোনো ব্যাপারে এত ভীত নই। ’ সাহাবিরা বলেন, হে আল্লাহর রাসুল, ছোট শিরক কী? তিনি বলেন, রিয়া বা প্রদর্শনপ্রিয়তা। মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন বান্দার আমলের প্রতিদান দেওয়ার সময় বলবেন, ‘তোমরা পৃথিবীতে যাদের দেখানোর জন্য আমল করতে তাদের কাছে যাও। তাদের কাছে দেখো তোমাদের কোনো প্রতিদান আছে কি না?’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ২২৫২৮)

সহিহ বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুনাফিকদের ওপর সবচেয়ে ভারী নামাজ হলো এশা ও ফজরের নামাজ। যদি তারা এই নামাজের ফজিলতের কথা জানত, তাহলে হাঁটুতে ভর দিয়ে হলেও এ নামাজে হাজির হতো। আমার মন চায় যে আমি তাকবির দিয়ে কাউকে ইমামতির স্থানে দাঁড় করিয়ে দিই, অতঃপর আমি লোকদের বলি, তারা যেন জ্বালানি কাঠ নিয়ে এসে ওই সব লোকদের বাড়ির চতুর্দিকে আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়—যারা জামাাতে হাজির হয় না। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৬৫১)।  

মূল কথা হলো, পূর্ণ আল্লাহভীতি, খুশু-খুজু ও একাগ্রতা ছাড়া নামাজ কবুল হয় না। মহান আল্লাহ আমাদের সেভাবে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন।