থামছে না যমুনার ভাঙন

থামছে না যমুনার ভাঙন

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ফের বাড়তে শুরু করেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে যমুনার নদীর পানি সিরাজগঞ্জ ১০ সে.মি বৃদ্ধি পেয়েছে। পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত ও চরাঞ্চলে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। কোনোক্রমেই ভাঙন থামছে না।

প্রতিদিন ভাঙনে বসতভিটা, মসজিদ, হাসপাতাল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ফসলী জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মানুষ নিঃস্ব হয়ে পড়ছে। অনেকে খোলা আকাশের নীচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। জিওব্যাগ ও জিওটিউব ফেলে ভাঙনরোধের চেষ্টা করলেও কোনো কাজই হচ্ছে না।

পাউবো বলছে, যমুনার ভাঙনরোধ খুব সহজ কাজ নয়। তবুও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গাছপালা বিলীন হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চরম ব্যাহত হচ্ছে। কাজকর্ম না থাকায় ভাঙন কবলিত পরিবার খেয়ে না খেয়ে দিনযাপন করছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানায়, সোমবার সকালে সিরাজগঞ্জ হার্ড পয়েন্টে যমুনা নদীর পানি সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ৬৮ মিটার। গত ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১ দশমিক ২২ মিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা ১২ দশমিক ৯০ মিটার)।

অন্যদিকে, কাজিপুর মেঘাই পয়েন্টে পানি সমতল রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৩০ মিটার। এ পয়েন্টে নদীর পানি ২৪ ঘণ্টায় ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে বিপদসীমার ১ দশমিক ৫০ মিটার নিচ প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা ১৪ দশমিক ৮০ মিটার)।  

এদিকে, পানি বাড়ায় শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নে পাচিল, কৈজুরী, আড়কান্দি, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার কাওয়াকোলার চর, কাজিপুর উপজেলার খাসরাজবাড়ীতে ব্যাপক ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনের ভাঙনে কাঁচা-পাকা বসতবাড়ি, ফসলি জমি, মসজিদ, হাসপাতাল, বিদ্যুতের খুঁটি, গাছপালা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনকবলিতরা ঘর-বাড়ি ভেঙে নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু জায়গা না থাকায় স্তুপ করে রেখে পলিথিন বা ঝুপড়ি তুলে মানবেতরভাবে বসবাস করছে। ভাঙনের হুমকি থাকা মানুষগুলো নির্ঘূম রাত কাটাচ্ছে।

পাঁচিল গ্রামের বাসিন্দা আজগর আলীসহ অনেকে জানান, প্রচুর ভাঙন শুরু হয়েছে। চোখের সামনে চিরচেনা বসতভিটা ও জীবিকা নির্বাহের ফসলী জমি বিলীন হয়ে আমরা সকলেই নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। মুহূর্তের মধ্যেই একটি পরিবার ফকির হয়ে যাচ্ছে। ভাঙনরোধে পাউবো কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণই করছে না। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে শত শত বসতভিটা ফসলি জমি বিলীন হয়ে যাবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহবুবুর রহমান জানান, পানি বাড়ায় পাঁচিলসহ কয়েকটি পয়েন্টে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। আমরা জিও ব্যাগ ও জিও টিউব ফেলে ভাঙন রোধে চেষ্টা করছি। কিন্তু যমুনার ভাঙনরোধ সহজ ব্যাপার না। ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

তিনি আরও জানান, চরাঞ্চল খাসরাজবাড়ি ভাঙনরোধে স্থানীয় সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের সুপারিশে ১০ হাজার জিওব্যাগ ফেলানো হচ্ছে। এছাড়াও যমুনার যেসকল পয়েন্টে ভাঙন অব্যাহত রয়েছে আমরা সাধ্যমতো ভাঙনরোধ করতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। তবে অন্যান্য চরাঞ্চল ভাঙনরোধে প্রকল্প না থাকায় ব্যবস্থা যাচ্ছে না।

news24bd.tv/তৌহিদ

এই রকম আরও টপিক