যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব হাজারো মানুষ

ভাঙনকবলিত এলাকা

যমুনার ভাঙনে নিঃস্ব হাজারো মানুষ

আব্দুস সামাদ সায়েম, সিরাজগঞ্জ

যমুনা নদীর ভাঙনে বাস্তুহারা হয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে সিরাজগঞ্জের হাজার হাজার মানুষ। এক সময়ের সম্পদশালী মানুষগুলো ফসলি জমিসহ সব হারিয়ে রাস্তায় বসতে শুরু করেছে। নতুন করে বসতভিটা গড়ে তোলার জায়গাসহ সামর্থ্য না থাকায় শতশত পরিবার রাস্তার ধারে ঝুঁপড়ি তুলে মানবেতর জীবনযাপন করছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বিলীন হওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীর জীবন অঙ্কুরেই শেষ হয়ে যাচ্ছে।

হাট-বাজার-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বিলীন হওয়ায় অনেকে বেকার জীবনযাপন করছে।  

চেলার চৌহালী এলাকায় দেখা যায়, তাঁত কারখানা বিলীন হয়ে যাওয়া শ্রমিকরা মানবেতর জীবনযাপন করছেন। গাছপালা বিলীন হওয়ায় পরিবেশের ভারসাম্য হারিয়ে যাচ্ছে। ভাঙনের কারণে একটু একটু করে যমুনার গর্ভে চলে যাচ্ছে জেলার মানচিত্র।

আর ভাঙনকবলিতরা এর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দায়ী করে বলছেন, সবকিছু হারিয়ে কষ্টে থাকলেও কেউ আমাদের পাশে দাঁড়ায় না।

সরেজমিনে জানা যায়, বর্তমানে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সদিয়াচাঁদপুর ইউনিয়নের সদিয়া চাঁদপুর, দেওয়ানতলা, সংকরহাটি, গাবেরপাড়, মাঝগ্রামে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে। ভাঙনে চাঁদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাকা ভবনসহ প্রায় অর্ধশত বসতভিটা ও ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। হুমকির মুখে রয়েছে চাঁদপুর তা-মিরুল মিল্লাত হাফিজিয়া মাদ্রাসা, সদিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মহেশপুর সরকারি
প্রাথমিক বিদ্যালয়, মৌহালি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, এলাঙ্গী আটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতশত বসতভিটা ও ফসলি জমি। বেলকুচি উপজেলার বেতিল স্পার বাঁধে ধ্বস নামতে শুরু করেছে।  

গত মঙ্গলবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত দেড়শ মিটার এলাকা বিলীন হয়ে গেছে। এতে হুমকির মুখে রয়েছে এলাকার মৎস্য ডিপ্লোমা ইনস্টিটিউট, ভেটেরিনরি কলেজ, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর আজুগড়া সাবমেরিন কেবল সাইডের সার্স লাইন ও ফসলি জমি, বসতভিটা।  

শাহজাদপুর উপজেলার জালালপুর উত্তরপাড়ায় মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে ওই গ্রামের আরিস আলী, মন্টু, আফান, চাঁন মিয়া, মজিবর, আব্দুস সালাম, ওমর আলী, আবু হানিফ, পলাশ মণ্ডল, বাবু, সাদ্দাম, শান্তা মিয়া, গোলাম মোস্তফা, আব্দুল আলীম, রহিমা খাতুন ও জীবনসহ অনেকের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে গাছপালা ও জমি-জমাও নদীগর্ভে চলে গেছে।  

এছাড়াও চৌহালী উপজেলার যমুনার পুর্বতীরে ভাঙনে প্রতিদিনই মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়ছে। ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষগুলো নিঃস্ব হয়ে খোলা আকাশের নিচে দিনযাপন করছে। তারা কোথায় থাকবে, কোথায় যাবে তার নিশ্চয়তা নেই। অনেকে ঘরবাড়ি ভেঙে স্তুপ করে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। কেউবা জমি ভাড়া করে ঝুঁপড়ি তুলে কেউবা ওয়াপদার পাশে সরকারি জায়গায় ঝুঁপড়ি তুলে বাস করছেন। কাজ কর্ম না থাকায় অনাহারে-অর্ধাহারে তাদের জীবন কাটছে। এত কষ্ট থাকলেও কেউ তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছেন না।

ভাঙনকবলিতরা বলেন, ভাঙনের তীব্রতা এত বেশি যে এলাকাবাসী ঘরবাড়ি সরানোরও সময় পাচ্ছেন না। চোখের পলকে তাদের সহায়-সম্বল গ্রাস করে নিচ্ছে রাক্ষুসে যমুনা। তাদের অভিযোগ, ভাঙন থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো ব্যবস্থা নেয় না। ভাঙনের পর জিওব্যাগ ফেলে। কয়েকদিন পর ভাঙনে জিওব্যাগসহ সবকিছু বিলীন হয়ে যায়।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মহির উদ্দিন জানান, যমুনার পানি কমা এবং বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়। প্রতিদিনই নদী তীরবর্তী মানুষ বাড়িঘর ও জমি-জমা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছেন। ভাঙন শুরু হলে শুধু খালি হাতে ঘর থেকে বের হতে হয়। মুহূর্তের মধ্যে সবকিছু নদীগর্ভে চলে যায়। গত এক সপ্তাহে ৫০টির মতো বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড যদি সঠিক সময় কাজ করতো তবে ভাঙন হতো না।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, জালালপুরে ভাঙনরোধে কাজ শুরু হয়েছে। পানি নেমে গেলে ড্রেজিং করে গতিপথ পরিবর্তন এবং সিসি ব্লোক দিয়ে স্থায়ী তীর সংরক্ষণ বাঁধ নির্মাণ করা হবে। আর চৌহালীর সদিয়া চাঁদপুর এলাকায় প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়া বেলকুচি স্পার আপাতত জিওব্যাগ ফেলে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পানি নেমে গেলে সংস্কার করা হবে।

news24bd.tv/ইস্রাফিল