মাদক মামলা থেকে পুলিশ সদস্যকে বাঁচাতে চার্জশিটে জালিয়াতি

মাদক মামলা থেকে পুলিশ সদস্যকে বাঁচাতে চার্জশিটে জালিয়াতি

ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

ইয়াবা ও হেরোইনসহ গ্রেপ্তার হওয়া পুলিশ কনেস্টবল মোশারফ হোসেনকে বাঁচাতে মামলার চার্জশিট থেকে তার নাম বাদ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ জন্য মামলার বাদী ঠাকুরগাঁও জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ চার্জশিটের পাতায় অগ্রগামীর জন্য ওই দপ্তরের সহকারী পরিচালকের অনুপস্থিতিতে তার স্থলে নিজেই স্বাক্ষর করেছেন এবং স্বাক্ষর করা ওই চার্জশিট আদালতে দাখিলও করা হয়েছে।

রোববার (৯ জুন) সন্ধ্যায় বিষয়টি জানাজানি হলে এটি শহরের টপ অব দ্য টাউনে পরিণত হয়।

মামলার এজাহারে বলা হয়, চলতি বছরের ২৪ ফেব্রুয়ারি ঠাকুরগাঁও শহরের আশ্রমপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১০২ পিছ ইয়াবা ও ৫ গ্রাম হেরোইনসহ আতিকুল ইসলাম আতিক ও পুলিশ কনেস্টবল মোশারফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর।

এ ঘটনায় ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানার একটি মামলা দায়ের করেন এবং মামলাটি তদন্ত করেন ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপ-পরিদর্শক আজাহারুল ইসলাম।

মামলার এজাহারের মধ্যভাগে বলা হয়, গ্রেপ্তার দুইজন আসামি দীর্ঘদিন যাবত ইয়াবা ট্যাবলেট ও হেরোইনের ব্যবসা করে আসছিল। পুলিশ কনেস্টবল মোশারফ হোসেন দীর্ঘদিন ধরে ঠাকুরগাঁও জেলায় কর্মরত ছিল, বর্তমানে তিনি খাগড়াছড়ি জেলায় কর্মরত রয়েছেন।

এদিকে, গত ২৫ এপ্রিল ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক সৌমিক রায় বদলী হয়ে যায়।

এতে করে ওই পদটি শূন্য হয়ে পড়ে। ঠিক সেসময় মামলার চার্জশিট তৈরি করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এবং ওই চার্জশিটে সহকারী পরিচালকের অনুপস্থিতিতে তার সিল ব্যবহার করে মামলার বাদী ফরহাদ আকন্দ নিজেই চার্জশিট অগ্রগামীর জন্য স্বাক্ষর করেন এবং গত ২১ মে আদালতে ওই চার্জশীট দাখিল করা হয়।

স্বাক্ষর করা ওই চার্জশিটে আতিকুল ইসলাম আতিককে অভিযুক্ত করা হয় এবং পুলিশ কনেস্টবল মোশারফ হোসেনকে অব্যাহতির জন্য আদালতে সুপারিশ করা হয়।

ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সাবেক সহকারী পরিচালক সৌমিক রায় মুঠোফোনে বলেন, ২৫ এপ্রিল আমার বদলী হয়ে যায়। মামলার চার্জশিট থেকে আসামিকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান।  

অভিযোগ প্রসঙ্গে মামলার বাদী ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিদর্শক ফরহাদ আকন্দ বলেন, সফট কর্নার থেকে চার্জশিটে পুলিশ কনেস্টবল মোশারফ হোসেনের নাম বাদ দেওয়ার জন্য আদালতে সুপারিশ করা হয়েছে। চার্জশিট দেওয়ার সময় এখানে সহকারী পরিচালক ছিলেন না, তাই নিজেই চার্জশিট অগ্রগামীর জন্য সহকারী পরিচালকের পক্ষে স্বাক্ষর করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছি।

ঠাকুরগাঁও জজকোর্টের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মোজাফ্ফর আহমেদ মানিক বলেন, দায়িত্বরত সহকারী পরিচালক বদলি হয়েছেন। এই সুযোগে জালিয়াতি করে ওই কর্মকর্তার সিল ব্যবহার করে স্বাক্ষর করে চার্জশিট অগ্রগামী করেন মামলার বাদী। এটি জালিয়াতি কাজ। কোনোভাবেই এটি ওই বাদী করতে পারেন না। এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা সংশ্লিষ্ট দপ্তর অথবা আদালত নিতে পারবে।

বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শরীফ উদ্দীন বলেন, আমার কর্মস্থল নীলফামারী জেলায়। গত ২৮ মে অতিরিক্ত হিসেবে আমাকে ঠাকুরগাঁও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালকের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

তিনি বলেন, মাদক মামলা থেকে আসামিকে উপযুক্ত ডকুমেন্টস ছাড়া বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। সেইসঙ্গে সহকারী পরিচালকের সিল ব্যবহার করে স্বাক্ষর করার বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে বলে জানিয়েছেন শরীফ উদ্দীন।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রংপুর বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক আলী আসলাম হোসেন বলেন, চার্জশিটের পুরো বিষয়টি জানতে চেয়েছি। আর চার্জশিট দাখিলে অনিয়ম হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।

news24bd.tv/SHS

এই রকম আরও টপিক