মাড়ি প্রদাহ বা মাড়ি ফোলা ব্যাপারটাকে ইনফ্লামেশন বললেই বুঝতে বেশি সুবিধা হয়। মাড়ি প্রদাহের মূল লক্ষণগুলোর মধ্যে আছে মাড়ি ফুলে যাওয়া, ব্রাশ করতে গেলে রক্ত পড়া, কিছু খেতে গেলে রক্ত পড়া এবং মাড়ি থেকে পুঁজ বের হওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিলে বুঝতে হবে মাড়ি প্রদাহ হয়েছে।
দাঁত ও মাড়ি বিশেষজ্ঞ সিটি ডেন্টাল কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মোস্তাক হাসান সাত্তার বলেছেন মাড়ি ফোলা রোধে করণীয় বিষয় সম্পর্কে।
জেনে নিই উপসর্গ কী কী?
মাড়ি থেকে রক্ত পড়বে, মাড়ি লাল হয়ে ফুলে যাবে, ধরলেই ব্যথা করবে, পুঁজ বের হবে–এগুলোই হচ্ছে মূল উপসর্গ।
এর প্রতিকার বা ঘরোয়া চিকিৎসা কী সম্পর্কে তিনি জানান, প্রতিকার হিসেবে আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে পাতা দিয়ে মুখ পরিষ্কার করার ব্যাপারটি দেখা গেছে। অনেকেই পেয়ারার পাতা, নিমপাতা সেদ্ধ করে কুলি করে ঘরোয়াভাবে চিকিৎসা করেন। এ ছাড়া অনেকে লবণপানি দিয়েও কুচকুলি করেন। তবে এসবের আগে মাড়ি প্রদাহের মূল কারণটা খুঁজে বের করা উচিত।
হরমোনাল অসামঞ্জস্যতার কারণে এই রোগ হয় কি না? এই প্রশ্নে ডা. মোস্তাক হাসান সাত্তার বলেন, নিশ্চয়ই হয়। বিশেষ করে তরুণীদের শরীরে নতুন ধরনের হরমোন আসে। যখনই হরমোন আসতে থাকে, তখনই মাড়িটা একটু ফুলে ফুলে ওঠে। অনেকেই ভুল বুঝে চিকিৎসা নিতে যান। কিন্তু এ সময় চিকিৎসার কোনো প্রয়োজন নেই। আরেকটা হলো প্রেগনেন্সির সময়। এ সময় প্রেগনেন্সি জিনজিভাইটিস হয়। দেখা গেছে, অ্যান্ড্রোমেট্রিয়ামে ইনফ্লামেশনের জন্য যে হরমোনটা দায়ী, সেইম হরমোন মাড়িতে ফোলাটা তৈরি করে। এটাকে বলে প্রেগনেন্সি জিনজিভাইটিস। এ সময়ে মুখ পরিষ্কার রাখাটা খুবই জরুরি। তবে অবশ্যই যে বিষয়টি জোরালোভাবে দেখতে হবে তা হলো, প্রেগনেন্সির আগে যেন মাড়ি প্রদাহ না হয়। আরেকটা বড় উপসর্গ হলো ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সি।
গর্ভাবস্থায় চিকিৎসা কী?
এ ক্ষেত্রে গাইনি ডাক্তারের উচিত পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম দেওয়া ও রোগীকে তার মুখ ভালোভাবে পরিষ্কার রাখার পরামর্শ দেওয়া। যাতে মাড়িটা ফুললেও ক্ষতি করতে না পারে। এ ছাড়া ক্যালসিয়ামের জন্য প্রতিদিন এক লিটার পরিমাণ দুধ খেতে হবে। পেয়ারার পাতা ও নিমপাতা সেদ্ধ করে কুলি করার মতো গ্রাম্য চিকিৎসাও কিন্তু এ ক্ষেত্রে বেশ উপকারী।
ডায়াবেটিসের কারণে কি এ রোগ হয়?
ডায়বেটিসের কারণে এ রোগ হয় না, তবে ডায়াবেটিস এই রোগ বাড়াতে সাহায্য করে। আবার এই রোগ বাড়লে ডায়াবেটিসও বেড়ে যেতে পারে। সুতরাং আপনাকে দুটো বিষয়ই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
মাড়ি ফুলে যাওয়ার কারণ কী কী?
মাড়ি ফুলে যাওয়া রোধে করণীয় কী কী?
মুখের দাঁত ও মাড়িতে সমস্যা থাকলে তা চিকিৎসকের পরামর্শে সমাধান করতে হবে। রাতে শোয়ার আগে ও সকালে নাশতার পর, দিনে দুবার ব্রাশ করতে হবে। মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। মুখে দন্ত পাথর জমলে স্কেলিং করতে হবে। এমনকি মাউথ ওয়াশ ব্যবহার করলেও মাড়ি ফোলা রোধ করা যায়।
কাদের মাঝে এ সমস্যা বেশি দেখা যায়?
নারীদের মাঝেই এ সমস্যা বেশি দেখা যায়। কেননা, নারীরাই প্রেগনেন্সি জিনজিভাইটিস ও ভিটামিন ডি ডেফিসিয়েন্সির শিকার হন।
বাচ্চাদের মাড়ি কেন ফোলে?
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাড়ি থেকে দাঁতের প্রদাহ বেশি দেখা যায়। যাকে বলে পালপাইটিজ। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে মাকে বেশি সচেতন হতে হবে। প্রেগনেন্সির নয় মাস মাকে ভালো ভালো খাবার খেতে হবে। মুখ সবসময় পরিষ্কার রাখতে হবে। এমনকি বাচ্চাকে খাওয়ার আগে ও পরে মুখ ভালো করে পরিষ্কার করে নিতে হবে। যদি নিজে ও বাচ্চার মুখ সবসময় পরিষ্কার না রাখেন, তাহলে বাচ্চাদের মাড়ি ফুলে যেতে পারে।
news24bd.tv/ab