রাশিয়া থেকে তেল কিনতে চুক্তি মুকেশ আম্বানির

সংগৃহীত ছবি

রাশিয়া থেকে তেল কিনতে চুক্তি মুকেশ আম্বানির

অনলাইন ডেস্ক

দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে যুদ্ধ চলছে পূর্ব ইউরোপে। রাশিয়া এবং ইউক্রেনের সেই যুদ্ধের প্রভাব পড়েছে সারা বিশ্বের অর্থনীতিতে। একই ভাবে যুদ্ধরত দেশ দু’টির অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই লড়াইয়ে।

যুদ্ধরত সেই রাশিয়ার সঙ্গেই এ বার চুক্তি করলেন ভারতের শীর্ষ ধনী শিল্পপতি মুকেশ অম্বানী।

তাঁর সংস্থা রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনবে। সেই অনুযায়ী দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছেন আম্বানী।

রিলায়্যান্স এই মুহূর্তে বিশ্বের বৃহত্তম তেল পরিশোধন কমপ্লেক্সের অপারেটর। রাশিয়ার সঙ্গে টানা এক বছরের চুক্তি হয়েছে রিলায়্যান্সের।

এক বছর ধরে রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত খনিজ তেল আসবে ভারতে।

রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, রিলায়্যান্সের সঙ্গে রাশিয়ার চুক্তিতে বলা হয়েছে, প্রতি মাসে রাশিয়া থেকে ৩০ লক্ষ ব্যারেল খনিজ তেল কেনা হবে। অর্থাৎ, বছরে ৩ কোটি ৬০ লক্ষ ব্যারেল তেল রাশিয়া থেকে কিনবেন আম্বানী।

চুক্তির শর্ত অনুযায়ী, তেলের টাকা ভারতীয় মুদ্রায় রাশিয়াকে দিতে পারবে না রিলায়্যান্স। আমেরিকান ডলারেও দাম দেওয়া যাবে না। আম্বানীকে তেলের দাম দিতে হবে রাশিয়ান মুদ্রা রুবলে।

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপসহ পশ্চিমের দেশগুলো রাশিয়ার উপর একাধিক বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যার ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কিছুটা হলেও কোণঠাসা হয়েছেন ভ্লাদিমির পুতিন।

সেই কারণেই রিলায়্যান্সের সঙ্গে তেলের চুক্তিতে ভারতীয় কিংবা আমেরিকান মুদ্রা নিতে রাজি হননি পুতিন। রাশিয়ান রুবলকে তিনি বাণিজ্যিক লেনদেনের বিকল্প মাধ্যম হিসাবে গড়ে তুলতে চাইছেন বলে মত পর্যবেক্ষকদের।

আরও একটি মতে, আন্তর্জাতিক বাজারে গত কয়েক বছর ধরে লাগাতার কমেছে রাশিয়ান মুদ্রার দাম। বর্তমানে তা ভারতের টাকার চেয়েও সস্তা হয়ে গিয়েছে। এক রুবল বর্তমানে ভারতের ৯৩ পয়সার সমান।

ভারতের টাকা বেশি দামি হওয়ায়, সেই টাকায় তেলের ব্যবসা করলে রাশিয়ার বড় একটা লাভ হত না। রিলায়্যান্সের সঙ্গে চুক্তির শর্ত নির্ধারণের সময়ে পুতিন সেই বিষয়টিও মাথায় রেখেছিলেন বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম তেল আমদানিকারক দেশ ভারত। ইউক্রেন-যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতাও হয়ে উঠেছে নয়াদিল্লি। এত দিন রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কিনে চীন, সৌদি আরবের মুদ্রায় দাম মেটাচ্ছিল ভারত। এ ছাড়া, কোনও কোনও ক্ষেত্রে ভারতের মুদ্রাও দেওয়া হচ্ছিল রাশিয়াকে। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী আম্বানীকে দিতে হবে রাশিয়ান মুদ্রায়।

রয়টার্সের রিপোর্ট অনুযায়ী, রাশিয়ার থেকে কেনা তেলের দাম এইচডিএফসি ব্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধ করবেন আম্বানী। ওই ব্যাঙ্ক থেকে টাকা যাবে রাশিয়ার গ্যাজপ্রোম ব্যাংকে। এই দুই ব্যাংকের সঙ্গেও সেই মর্মে চুক্তি হয়েছে।

পর্যবেক্ষকদের মতে, এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি ভারতের জন্য আশীর্বাদ হয়ে দেখা দিতে পারে। কারণ, রাশিয়ার থেকে তেল কিনে সেই তেলে ব্যবসা করবে ভারতই। তুলে নেবে বিনিয়োগের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি টাকা।

তেল পরিশোধন করে তেলজাত দ্রব্য ভারতের বাজারে তৈরি করবে আম্বানীর রিলায়্যান্স। এরপর আন্তর্জাতিক বাজারে তা রপ্তানি করা হবে। আম্বানীর সংস্থার হাত ধরে নয়াদিল্লির ঘরে আসবে বিদেশি মুদ্রা। সমৃদ্ধ হবে ভারতের বাজারও।

ভারত থেকে প্রতি বছর যা কিছু বিদেশে রপ্তানি করা হয়, সেই তালিকায় এই মুহূর্তে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে পেট্রোলিয়ামজাত দ্রব্য। অর্থাৎ, ভারতের বাজারে খনিজ তেল থেকে প্রস্তুত করা দ্রব্যের চাহিদা রয়েছে বিদেশে। আম্বানীর সঙ্গে রাশিয়ার চুক্তিতে দেশের রপ্তানি শিল্প সমৃদ্ধ হতে পারে।

পর্যবেক্ষকদের একাংশ এই চুক্তিতে আম্বানীর দূরদর্শী মনোভাবের পরিচয় পাচ্ছেন। তাঁদের মতে, বর্তমানে পশ্চিম এশিয়ায় যুদ্ধ চলছে। পূর্ব ইউরোপও যুদ্ধবিধ্বস্ত। ফলে তেলের খনিসমৃদ্ধ একাধিক দেশ বিপন্ন।

তেলের খনিতে যুদ্ধের আঁচ লাগায় আগামী দিনে আন্তর্জাতিক বাজারে খনিজ তেলের দাম বৃদ্ধি পেতে পারে। এক বছরে সেই দাম আকাশ ছুঁয়ে ফেলতে পারে, আশঙ্কা পর্যবেক্ষকদের। মনে করা হচ্ছে, আম্বানী সেই পরিস্থিতি বিচার করেই এই দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি করেছেন।

সূত্র: আনন্দ বাজার

news24bd.tv/DHL