দুঃখ-দুর্দাশায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন যেভাবে

দুঃখ-দুর্দাশায় আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবেন যেভাবে

 মাইমুনা আক্তার

হতাশা একটি মানবীয় দুর্বলতা। এটি মানুষকে তিলে তিলে শেষ করে দেয়। মানুষের কর্মক্ষমতা থেকে জীবনের সুখগুলো কেড়ে নেয়। মহান আল্লাহ এই দুর্বলতাকে প্রশ্রয় দিতে নিষেধ করেছেন।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা হীনবল হয়ো না এবং চিন্তিতও হয়ো না; তোমরাই বিজয়ী যদি তোমরা মুমিন হও। ’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯)।

এই আয়াত একটি যুদ্ধের প্রসঙ্গে অবতীর্ণ হলেও এখানে মুসলমানদের সফলতার মূল ভিত্তি এবং তাদের শক্তির মূল উৎস বলে দেওয়া হয়েছে। আর তা হলো ঈমান।


যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ঈমান রাখে এবং সব বিষয়ে তাঁর ওপরই ভরসা করে, দুনিয়ার কোনো দুঃখ, বিপদ, রোগব্যাধি তাকে হীনবল করতে পারবে না।

সব পরিস্থিতিতেই সে মহান আল্লাহর ওপর ভরসা করে ধৈর্য ধারণের শক্তি পাবে এবং আল্লাহর কাছেই সাহায্য চায়, যা তাতে প্রকৃত সফলতার দিকে এগিয়ে নেবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ, তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে আছেন। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৩)

এর এক আয়াত পরে মহান আল্লাহ আরো বলেন, ‘আর আমি অবশ্যই তোমাদেরকে পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং জান-মাল ও ফল-ফলাদির স্বল্পতার মাধ্যমে। আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও। যারা, তাদেরকে যখন বিপদ আক্রান্ত করে তখন বলে, নিশ্চয়ই আমরা আল্লাহর জন্য এবং নিশ্চয়ই আমরা তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তনকারী। তাদের ওপরই রয়েছে তাদের রবের পক্ষ থেকে মাগফিরাত ও রহমত এবং তারাই হিদায়াতপ্রাপ্ত। ’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)

অতএব, সাময়িক বিপদ-আপদ, দুঃখ-দুর্দাশায় ভেঙে না পড়ে ধৈর্যের সঙ্গে মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত। মহান আল্লাহ নিশ্চয়ই সব ঠিক করে দেবেন এবং সাময়িক কষ্টের বিনিময়ে তাঁর রহমত ও মাগফিরাতের চাদরে স্থান দেবেন।

হতাশা থেকে মানুষ নিজেকে মূল্যহীন ভাবতে শুরু করে। তাদের মনে হতে থাকে যে পৃথিবী তাদের তুচ্ছজ্ঞান করছে, ফলে তাদের হতাশা আরো চেপে ধরে। অথচ গুরুত্বহীন দুর্বল, অসহায় লোকদের জন্য প্রিয় নবীর সুসংবাদ রয়েছে, হারিস ইবনে ওয়াহাব খুযায়ি (রা.) বলেন, আমি নবী (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি কি তোমাদের জান্নাতি লোকদের পরিচয় বলব না? তারা দুর্বল ও অসহায়; কিন্তু তারা যদি কোনো ব্যাপারে আল্লাহর নামে কসম করে বসে, তাহলে তা পূরণ করে দেয়। আমি কি তোমাদের জাহান্নামি লোকদের পরিচয় বলব না? তারা রূঢ় স্বভাবের ও দুষ্ট প্রকৃতির এবং অহংকারী, তারাই জাহান্নামি। (বুখারি, হাদিস : ৪৯১৮)

অনেকে হতাশ হয় ঋণের চাপে। নবীজি (সা.) এর চিকিৎসাও শিখিয়ে দিয়েছেন। তিনি ঋণে জর্জরিত ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত আনসারি সাহাবি আবু উমামাহ (রা.)-কে একটি দোয়া শিখিয়েছেন। দোয়াটি হলো : 

‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিনাল হামমি ওয়াল হুজনি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়া আউজুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউজুবিকা মিন গলাবাতিদ দাইনি ওয়া কহরির রিজাল। ’

অর্থ : ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে দুশ্চিন্তা ও অস্থিরতা থেকে আশ্রয় চাই। আমি আশ্রয় চাই অক্ষমতা ও অলসতা থেকে, আপনার কাছে আশ্রয় চাই ভীরুতা ও কার্পণ্য থেকে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই ঋণের বোঝা ও মানুষের রোষানল থেকে। ’

আবু উমামাহ (রা.) বলেন, ‘আমি তা-ই করলাম। ফলে মহান আল্লাহ আমার দুশ্চিন্তা দূর করলেন এবং আমার ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থাও করে দিলেন। ’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৫৫)