ফিতনার সময় মুসলমানদের করণীয়

সংগৃহীত ছবি

ফিতনার সময় মুসলমানদের করণীয়

অনলাইন ডেস্ক

কিয়ামতের নিদর্শনাবলি নিয়ে রাসুল (সা.) যেসব ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তার অন্যতম হলো, কিয়ামতের আগে রক্তপাত ও খুনাখুনি ব্যাপক হবে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘ওই সত্তার কসম, যার কুদরতি হাতে আমার প্রাণ। তত দিন পৃথিবী ধ্বংস হবে না, যত দিন এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে না যে হত্যাকারীর জানা থাকবে না, কেন সে হত্যা করছে। নিহত ব্যক্তিরও জানা থাকবে না, কেন তাকে হত্যা করা হলো।

প্রশ্ন করা হলো, এটা কিভাবে সম্ভব? রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘রক্তপাত ও খুনাখুনি ব্যাপক হওয়ার কারণে এমন হবে। ’ (মুসলিম, হাদিস : ৭২৬৪)

ওসমান (রা.)-এর শাহাদাতের পর মুসলমানদের মধ্যে যে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়, তাতে সাহাবায়ে কেরাম কেউ কেউ নিজ ইজতেহাদ অনুসারে কোনো এক পক্ষে যোগ দিলেও অন্যরা কোনো পক্ষকেই সমর্থন করেননি। উসামা (রা.) আলী (রা.)-কে বলেন, ‘আপনি যদি কোনো বাঘের উদ্ধত থাবার সম্মুখেও হতেন, আমি আপনার সঙ্গ দিতাম। কিন্তু গৃহযুদ্ধে অংশগ্রহণকে আমি বৈধ মনে করি না।

’ (বুখারি, হাদিস : ৭১১৩)

ফিতনা ও অন্তর্কলহ সম্পর্কে মহানবী (সা.) সতর্ক করে গেছেন। এক হাদিসে এসেছে, ‘সামনে এমন ফিতনা আসবে, যাতে উপবিষ্ট ব্যক্তি দণ্ডায়মান ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে। দণ্ডায়মান ব্যক্তি চলমান ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে। চলমান ব্যক্তি ওই ব্যক্তি থেকে উত্তম হবে, যে দৌড়াচ্ছে।

ফিতনা যে কাউকেই গ্রাস করবে। তাই যে ব্যক্তি কোনো আশ্রয় পায়, সে যেন তা গ্রহণ করে—অর্থাৎ ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করবে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬০১)

মুসলমানদের পারস্পরিক রক্তপাতের বিরুদ্ধে হাদিস শরিফে কঠিন হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে। রাসুল (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘কোনো মুসলমানকে গালি দেওয়া গুনাহর কাজ আর তাকে হত্যা করা কুফরি। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০৪৪)

বর্তমান পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, একদল মুসলিম অন্য দলের ওপর অস্ত্রাঘাত করছে। অথচ রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের (মুসলমানদের) ওপর অস্ত্র উঠাবে, সে আমাদের (ধর্মের) দলভুক্ত নয়। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬৮৪৪)

আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ক্রমেই যুগ সংকুচিত হবে, আমল কমে যাবে, কৃপণতা ও লোভ বাড়বে, ফিতনা ব্যাপকভাবে প্রকাশ পেতে থাকবে এবং হারজ বেড়ে যাবে। সাহাবায়ে কেরাম জিজ্ঞেস করলেন, হারজ কী জিনিস? নবী (সা.) ইরশাদ করেন, হত্যাকাণ্ড, হত্যাকাণ্ড। ’ (বুখারি : ৭০৬১)

ফিতনার সময় মুসলমানদের করণীয় সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নির্দেশনা হলো, যে ব্যক্তি কোনো আশ্রয়স্থল খুঁজে পায়, সে যেন তা গ্রহণ করে, অর্থাৎ ফিতনা থেকে বেঁচে থাকে। (বুখারি, হাদিস : ৩৬০১)

কাজেই দাওয়াত ও তাবলিগের এই সংকটকালে নিজেকে রক্ষা করাই গুরুত্বপূর্ণ। সম্ভব হলে এই বিরোধে না জড়ানো। তবে হকের অনুসন্ধান অব্যাহত রাখতে হবে। সর্বোপরি সম্ভব হলে মুসলমানদের মধ্যকার বিরোধ রোধ করতে চেষ্টা করা উচিত। মহান আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

লেখক : মুফতি তাজুল ইসলাম, ইসলামী চিন্তাবিদ।

এই রকম আরও টপিক