পিপাসার্তকে পানি পান করানোর প্রতিদান

পিপাসার্তকে পানি পান করানোর প্রতিদান

 ড. আবু সালেহ মুহাম্মদ তোহা

পানির অন্য নাম জীবন। পানি ছাড়া কোনো প্রাণী বেঁচে থাকতে পারে না। মহান আল্লাহ পানির উৎস ও জোগান সহজ করে দিয়েছেন। অন্যের কাছে পানি সরবরাহ করা ও পৌঁছে দেওয়াকে অন্যতম ইবাদত হিসেবে এবং পানি সরবরাহের ক্ষেত্রে বাধা ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করাকে অন্যায় বলে আখ্যায়িত করেছেন।

এখানে এই আমলের মর্যাদা আলোচনা করা হলো—

নবীজির সুপেয় পানির ব্যবস্থা করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) হিজরত করে মদিনায় যাওয়ার পর দেখলেন যে সেখানে সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। এক ইহুদির ‘রুমা’ নামের একটি কূপ থাকলেও তার পানি অনেক চড়া দামে বিক্রি করা হয়। তখন রাসূুল (সা.) কূপটি ব্যক্তিমালিকানা থেকে সরিয়ে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করার ব্যবস্থা করলেন। তিনি ঘোষণা দিলেন, ‘কে রুমা নামক কূপটি কিনে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেবে এবং এর বিনিময়ে জান্নাতে আরো উত্তম পুরস্কার লাভ করবে?’ এ কথা শুনে উসমান (রা.) এই কূপ খরিদ করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করলেন।

(তিরমিজি, হাদিস : ৩৭০৩; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৫১১, ৫৫৫)

আল্লাহ যাঁদের পানি পান করাবেন : পিপাসার্তকে পানি পান করানো গুরুত্বপূর্ণ একটি আমল। এ আমলের ফজিলত অনেক। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে মুমিন কোনো মুমিনকে পিপাসার্ত অবস্থায় এক ঢোক পানি পান করাবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা তাকে মোহর করা পানি থেকে পান করাবেন। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৪৯; আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৮২; মুসনাদে আহমাদ,   হাদিস ১১১০১)

কুকুরকে পানি পান করিয়ে ক্ষমা লাভ : পথিমধ্যে পিপাসার্ত কুকুরকে পানি পান করিয়ে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করার বিষয়টি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

সে ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি পিপাসার্ত মানুষকে পানি পান করিয়ে অবশ্যই আল্লাহর ক্ষমা লাভ করা সম্ভব। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, ‘একদিন এক ব্যক্তি রাস্তায় চলার পথে অত্যন্ত তৃষ্ণার্ত হলো। তারপর একটি কুয়া দেখতে পেয়ে তাতে সে নেমে পড়ল এবং পানি পান করল। ওপরে উঠে এসে সে দেখতে পেল, একটা কুকুর হাঁপাচ্ছে আর পিপাসার দরুন ভিজে মাটি চেটে খাচ্ছে। লোকটি (মনে মনে) বলল, এই কুকুরটির তেমনই পিপাসা পেয়েছে যেমনটি আমার পেয়েছিল।

তারপর সে কুয়ার মধ্যে নামল এবং নিজের মোজা পানিভর্তি করে এনে কুকুরটিকে পান করাল। আল্লাহ তার এই কাজ কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। সাহাবিরা বলল, হে আল্লাহর রাসুল! পশুদের ব্যাপারেও কি আমাদের জন্য পুণ্য রয়েছে? রাসুল (সা.) বললেন, প্রত্যেক দয়ার্দ্র হৃদয়ের অধিকারীর জন্যই পুরস্কার রয়েছে। ’ (বুখারি, হাদিস : ৬০০৯)

অনন্য সদকায়ে জারিয়া : এই সহজ আমলটি এতই গুরুত্বপূর্ণ, যা পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া নিজের মরহুম পিতা-মাতা ও পূর্বসূরিদের জন্য ঈসালে সওয়াবেরও চমৎকার মাধ্যম। একবার সাহাবি সা‘দ ইবনে উবাদা (রা.) এসে নবীজিকে বলেন, আল্লাহর রাসুল! আমার আম্মা ইন্তেকাল করেছেন। আমি কি তাঁর পক্ষ থেকে কোনো সদকা করতে পারি? নবী (সা.) বললেন, অবশ্যই! তিনি বলেন, তাহলে কোন সদকা উত্তম? অর্থাৎ আম্মার পক্ষ থেকে আমি কী সদকা করব সেটাও বলে দিন! রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, পানি পান করানো (জনসাধারণের জন্য পানির ব্যবস্থা করা)। বর্ণনাকারী বলেন, তিনি একটি কূপ খনন করে বললেন, এটা উম্মে সাদের নামে ওয়াকফ করা হলো। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ২৩৮৪৫; আবু দাউদ, হাদিস : ১৬৮১)

একটি স্বতন্ত্র সদকা : অন্যকে পানি পান করানো স্বতন্ত্র একটি দান। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আদমসন্তানের দেহে ৩৬০টি গ্রন্থি আছে। এগুলোর প্রতিটির জন্য প্রতিদিন সদকা রয়েছে। প্রতিটি উত্তম কথাই সদকা। এক ভাইয়ের পক্ষ থেকে অন্য ভাইকে সাহায্য করা সদকা। এক ঢোক পানি পান করানো সদকা। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়াও সদকা। (আল-আদাবুল মুফরাদ, হাদিস : ৪২২)

লেখক : সহযোগী অধ্যাপক, আরবি বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়

এই রকম আরও টপিক

সম্পর্কিত খবর