মুসলিম সমাজের নেতারা যেমন হবেন

সংগৃহীত ছবি

মুসলিম সমাজের নেতারা যেমন হবেন

সাইয়েদ আবুল হাসান আলী নদভি (রহ.)

অনেকের ধারণা, আধ্যাত্মিকতা অর্জনের জন্য আমাদের অতীতের মনীষীদের কাছে ফিরতে হবে। অথচ আধ্যাত্মিকতা জীবিত মানুষের কাছ থেকেও অর্জন করা যায়। গবেষক আলেমরা বলেন, আত্মশুদ্ধি ও আধ্যাত্মিকতা জীবিত মানুষের কাছ থেকেই অর্জন করতে হয়। তাদের থেকেই তা পুরোপুরি অর্জন করা সম্ভব।

তারা বলেন, জীবনে পরিবর্তন ও পরিবর্ধন আছে, জীবনে বৈচিত্র্য আছে, সময়ে এক রং তৈরি হয় এবং সময়ে আরেক রঙের বিদায় হয়, এক রোগের সৃষ্টি হয় এবং অপর রোগের বিদায় হয়। সুতরাং, চলমান পৃথিবী ও বাস্তবতার সঙ্গে যার সম্পর্ক নেই সে গতিশীল ও সমকালীন মানুষের নেতৃত্ব দিতে পারে না। এমন ব্যক্তির মাধ্যমে উপকৃত হওয়া সম্ভব, তবে সে সময়ের নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য নয়। কোনো জাতির বহু কিছু আছে; বড় বড় পাঠাগার আছে, সমৃদ্ধ ইতিহাস আছে, কিন্তু জাগ্রত চেতন ব্যক্তিত্ব নেই—যার হৃদয় থেকে, যার গবেষক মন থেকে, পাণ্ডিত্য থেকে ও যার দূরদৃষ্টি থেকে আমরা আলো গ্রহণ করব।

এমন জাতির ভবিষ্যৎ কী?
বিশুদ্ধ হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ প্রত্যেক শত বছরে এই উম্মতের জন্য একজন ব্যক্তি প্রেরণ করেন যিনি তাদের দ্বিনি বিষয় সংস্কার করেন। ’ অর্থাৎ, আল্লাহ প্রত্যেক শতাব্দীতে একজন সংস্কারক পাঠান, যিনি দ্বীনকে সজীব ও গতিশীল করেন এবং দ্বীনি সংস্কারের দায়িত্ব পালন করেন। দ্বীনি সংস্কার কোনো সাময়িক বিষয় নয়, যা এক-দুই সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে, বরং তা একটি চলমান প্রক্রিয়া। ইসলামের ইতিহাসে এমন বহু মনীষী রয়েছেন, যাদের প্রভাব কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত অব্যাহত ছিল।

রেললাইনে মানুষ একটি ছোট গাড়ি চালাত, সম্ভবত তা এখনো চলে—যার নাম ট্রলি। প্রথমে মানুষ তাতে ধাক্কা দেয়। এরপর তাতে বসে যায় এবং তা চলতে থাকে। গতি কমে গেলে নেমে আবার ধাক্কা দেয় এবং তাতে বসে পড়ে। এই উম্মতের গাড়িও অনুরূপ।

আলেম ও মুজাদ্দিদরা হলেন ধাক্কা দানকারী। তারা উম্মতকে সামনের দিকে ঠেলে নিয়ে যান। একবার ধাক্কা দিয়ে তারা থেমে যান না। একবার ধাক্কা দিলেই তা চলতে থাকে না। গাড়ি নিজের চাকার ওপরই এগিয়ে যায়। তবে তাকে এগিয়ে নিতে একজন জাগ্রত চেতন মানুষের প্রয়োজন হয়। উম্মতকে সামনে এগিয়ে নিতে কোনো প্রযুক্তি যথেষ্ট নয়।

ট্রলি চলতে দুটি জিনিসের প্রয়োজন হয়—এক. গতিশীল চাকা, দুই. ধাক্কা দেওয়ার জন্য শক্তিশালী হাত। আবার যে ব্যক্তি তার ওপর বসা থাকে তাকেও শক্ত হয়ে বসে থাকতে হয় যেন পড়ে না যায়। এই জাতি যখন গতি হারায় এবং পাপ কাজে লিপ্ত হয়, আল্লাহ তাদের জন্য একজন সংস্কারক পাঠান, যিনি তাদের ধাক্কা দিয়ে গতি সৃষ্টি করেন।

আমি মুজাদ্দিদে আলফে সানি (রহ.) ও শাহ ওয়ালি উল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভি (রহ.)-কে এই সময়ের মুজাদ্দিদ বা সংস্কারক মনে করি। আমি মনে করি, যেখানেই দ্বীনি জ্ঞানের চর্চা আছে, যেখানেই সুন্নতের দাওয়াত আছে, যেখানেই শিরক ও বিদআত পরিহারের অনুপ্রেরণা ও তার প্রতি ঘৃণা আছে, তা এই দুই মহান ব্যক্তির প্রচেষ্টার ফসল।

মুজাদ্দিদ আলফে সানি (রহ.) ইসলামের ইতিহাসে এমন একজন মনীষী ছিলেন, যিনি উম্মতের গাড়ি এমন জোরে ধাক্কা দিয়েছেন যে সাড়ে তিন শ বছর যাবৎ তা চলছে এবং আল্লাহ ভালো জানে তা কত দিন চলবে। তার দেড় শ বছর পর শাহ ওয়ালিউল্লাহ (রহ.)-এর পরিবারের সদস্যদের বিকাশ ঘটে। তারা ভারতবর্ষে দ্বীনচর্চায় অসামান্য অবদান রাখেন। তাদের সবচেয়ে বড় অবদান দ্বিনি চেতনা জাগ্রত করা।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান দায়িত্ব জাগ্রত চেতন মানুষ তৈরি করা। তারা এই কাজটিই করেছিলেন। এখন মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন সময়সচেতন ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব তৈরি করা। যারা সমকালীন সংকটগুলো বুঝবে এবং কোরআন-সুন্নাহর আলোকে তা সমাধান করতে পারবে। যারা সময়ের দাবি অনুযায়ী উম্মাহকে সঠিক পথ দেখাতে পারবে।

তামিরে হায়াত থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

news24bd.tv/SHS