ডিগবাজি খেলে ভাইরাল হয়, তারকা হওয়া যায় না

শারফিন শাহ

ডিগবাজি খেলে ভাইরাল হয়, তারকা হওয়া যায় না

শারফিন শাহ

 রেস্তোরাঁয় বসে খাবার সময় পাশে বসা এক দম্পতির আলাপ কানে ভেসে এলো। স্বামী কানে হেডফোন লাগিয়ে কী যেন দেখছিল আর মাঝখানে স্ত্রীকে বলছিল,  ‘তোমার মেয়ে সারাদিন দেখি রাফসান দ্য ছোটভাইয়ের ভিডিও দেখে। আর এদিকে দেখ সাইয়েদ আবদুল্লাহ নামে এক ছেলে একাই রাফসানকে ধরাশায়ী করে দিলো। মেধা, পড়ালেখা আর জ্ঞানের চর্চার মধ্যে পার্থক্য এখানেই।

মেয়েকে রাফসানের ভিডিও না দেখিয়ে হুমায়ূন আহমেদের বইগুলো দাও। মাথা কিছুটা হলেও খুলবে। ’ স্ত্রী বলছিল, ‘কী জানি। আমি এতকিছু জানি নাকি।
ফেসবুকে ঢুকাই হয় কম। তোমার মেয়ে তুমিই বলো। রাফসানটা কে আমি চিনিই না। ’ 

স্বামীর উত্তর, ‘শোনো রাফসান হলো পুঁজিবাদের একটি প্রোডাক্ট এবং সবচেয়ে কাচা প্রোডাক্ট। যার বোধবুদ্ধি হওয়ার আগেই তারকা বনে গেছে। আমাদের দেশের মানুষ তো আবার টাকাঅলাদের বেশি গুরুত্ব দেয়। তাই তার ফলোয়ারও ৪০ লাখ। আর বিপরীতে সাইয়েদ আবদুল্লাহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া ছাত্র। আইন বিভাগে পড়েছে। প্রথম আলোয় তাকে নিয়ে প্রতিবেদনও বেরিয়েছিল। সে চটুল ভিডিও বানিয়ে জনগণের চোখে ধুলো দিয়ে লাখ টাকা কামানোর মতো পথ বেছে নেয়নি। তার কথাবার্তায়ই ফুটে উঠে সে কত পরিশীলিত। ’ স্ত্রী বললো, ‘তো এখন এদের নিয়েই থাকবে না খাবে। ’ স্বামী বললো, ‘খাওয়ার চেয়ে এটাও কম গুরুত্বপূর্ণ না। এই ঘটনায় বহু মানুষের ছেলেমেয়ে, যারা ফেসবুক সেলিব্রিটিদের আদর্শ মনে করত, তারা সতর্ক হবে। ’ 

এই দম্পতির কথাবার্তায় যতোটুকু মনে হলো তাদের মেয়ে ফেসবুক সেলিব্রিটি দ্বারা আক্রান্ত। আর আমি বা আমার সমবয়সীরা ছোটবেলাতেই লেখক, বিজ্ঞানী ছাড়া আর কাউকেই আদর্শ ভাবতে পারিনি। আমার বন্ধু তালিকায় অনেকেই দেখলাম, রাফসানের ফেসবুক পোস্টে লাভ রিয়েক্ট দিলো। অথচ তাদের আমার গুরুত্বপূর্ণ কোনো পোস্টে খুঁজে পাই না। জনপ্রিয়তা সাধনা করে অর্জনের বিষয়। উত্তম কুমার সত্যজিৎ রায়ের ‘নায়ক’ ছবির শ্যুটিং করেছিলেন গায়ে ১০০ ডিগ্রির ওপর জ্বর নিয়ে। বসন্তের দাগ ছিল গোটা শরীরজুড়ে। অথচ পুরো ছবিতে তা বোঝার উপায় আছে। এই হলেন তারকা। ফেসবুকে ডিগবাজি আর রোলেক্স ঘড়ির বিজ্ঞাপন করে বেড়ালেই তারকা হওয়া যায় না।  

লেখক: গবেষক ও প্রাবন্ধিক

news24bd.tv/ ডিডি
 

এই রকম আরও টপিক